মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান (SSC Biology )


চতুর্থ অধ্যায় : জীবনীশক্তি

জীবন পরিচালনার জন্য জীবকোষে প্রতি মুহূর্তে হাজারাে রকমের জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে থাকে। এসব বিক্রিয়ার জন্য কমবেশি শক্তির প্রয়ােজন হয়। পৃথিবীতে শক্তির মূল উৎস সূর্য। সবুজ উদ্ভিদ সালােকসংশ্লেষণের মাধ্যমে সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে শর্করাজাতীয় খাদ্য তৈরি করে। প্রাণী কিংবা অসবুজ উদ্ভিদ সৌরশক্তিকে সরাসরি আবদ্ধ করে দৈহিক কাজে ব্যবহার করতে পারে । জীবন পরিচালনার জন্য যে শক্তির প্রয়ােজন হয়, সে শক্তির জন্য তাদের কোনাে না কোনােভাবে সবুজ উদ্ভিদের উপরেই নির্ভর করতে হয়। এসব বিষয় আলােচনা করাই জীবনীশক্তি বা বায়ােএনার্জেটিক্স (Bioenergetics)-এর মূল উদ্দেশ্য। এই অধ্যায়ে সংক্ষিপ্তাকারে জীবনীশক্তি সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে।

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা:


♦  কোষে প্রধান শক্তির উৎস হিসেবে এটিপির (ATP) ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦  সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা প্রস্তুতি ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦  সালােকসংশ্লেষণে ক্লোরােফিল এবং আলাের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦  সালােকসংশ্লেষণের প্রভাবকের ভূমিকা বর্ণনা করতে পারব।
♦  সালােকসংশ্লেষণের উপর জীবের নির্ভরশীলতার কারণ মূল্যায়ন করতে পারব।
♦  শ্বসন ব্যাখ্যা করতে পারব। • সবাত ও অবাত শ্বসনের ধারণা ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦  সালােকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের মধ্যে তুলনা করতে পারব।
♦  সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ক্লোরােফিল ও আলাের অপরিহার্যতার পরীক্ষা করতে পারব। শ্বসন প্রক্রিয়ায় তাপ নির্গমনের পরীক্ষা করতে পারব।
♦  জীবের খাদ্য প্রস্তুতে উদ্ভিদের অবদান উপলব্ধি করতে পারব এবং উদ্ভিদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করতে শিখব।

4.1 জীবনীশক্তি ও ATP-এর ভূমিকা

জীবনীশক্তি বা জৈবশক্তি (bioenergy) বলতে আমরা ভিন্ন বা বিশেষ কোনাে শক্তিকে বুঝাই না। পদার্থবিজ্ঞানে শক্তির যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা থেকে, এটি আলাদা কিছু নয়, শুধু জীবদেহ বা জৈব অণুর রাসায়নিক বন্ধন ছিন্ন করার মাধ্যমে প্রাপ্ত শক্তিকে এই নামে ডাকা হয় মাত্র। জীব প্রতিনিয়ত পরিবেশ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, সংগৃহীত শক্তিকে একরূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তিত করে, কখনাে বা সঞ্চয় করে এবং শেষে সেই শক্তি আবার পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়। DNA এবং RNA-এর গাঠনিক উপাদানগুলাের একটি হলাে অ্যাডেনিন। এটি একটি নাইট্রোজেন বেস। | এর সাথে পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট রাইবােজ সুগার অণু যুক্ত হয়ে তৈরি হয় অ্যাডিনােসিন। অ্যাডিনােসিন অণুর সাথে পর্যায়ক্রমে একটি, দুটি এবং তিনটি ফসফেট/ফসফোরিক এসিড গ্রুপ যুক্ত হয়ে যথাক্রমে অ্যাডিনােসিন মনােফসফেট (AMP), অ্যাডিনােসিন ডাইফসফেট (ADP) এবং অ্যাডিনােসিন ট্রাইফসফেট (ATP) গঠন করে। এভাবে ফসফেট যুক্ত করতে বাইরে থেকে শক্তি দিতে হয়। এই বিক্রিয়ার নাম ফসফোরাইলেশন (phosphorylation)। আবার এর বিপরীত প্রক্রিয়ায়, ফসফেট গ্রুপ বিচ্ছিন্ন হলে শক্তি বের হয়ে আসে। এই বিক্রিয়ার নাম ডিফসফোরাইলেশন (dephosphorylation)। উল্লেখ্য, প্রতিমােল ATP অণুর প্রান্তীয় ফসফেট গ্রুপে 7.3 কিলােক্যালরি (প্রায় 30.55 কিলােজুল) শক্তি জমা থাকতে পারে। পরিবেশ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে তাকে কোষের তথা জীবদেহের ব্যবহার উপযােগী রূপে পরিবর্তিত করার জন্য কাজ করে দুটি কোষীয় অঙ্গাণু: মাইটোকন্ড্রিয়া এবং প্লাস্টিড। উভয়েরই রয়েছে ইলেকট্রন ট্রান্সপাের্ট সিস্টেম নামক একসেট বিশেষ জৈব অণু, যাদের কাজ হলাে পুষ্টি উপাদান (যেমন: গ্লুকোজ) বা কোনাে অন্তর্বর্তীকালীন অণুর শক্তিকে ATP-এর ফসফেট গ্রুপের বন্ধনশক্তি হিসেবে জমা করা। আবার, ATP-এর রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে যে শক্তি বের হয়, সেই শক্তি দিয়ে জীবদেহের প্রতিটি জৈবনিক কাজ অর্থাৎ, মাংসপেশির সংকোচন থেকে ইন্দ্রিয়ানুভূতি, খাবার খাওয়া থেকে হজম করা, নিঃশ্বাস নেওয়া থেকে কথা বলা, চিৎকার করা থেকে হাসি-কান্না, দৈহিক বৃদ্ধি থেকে প্রজনন, দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখা থেকে শুরু করে দেহের প্রতিটি কোষের স্বাভাবিক আয়তন বজায় রাখা এর সবই সম্পন্ন হয়। আমরা যে খাবার খাই তা জারিত হয়, সেই জারণ থেকে নির্গত শক্তি দ্বারা ফসফোরাইলেশনের মাধ্যমে আবার সেই ভাঙা দুই টুকরা জোড়া লেগে ATP তৈরি হয়। শক্তির প্রয়ােজন হলে তা আবার ভাঙে। তারপর খাদ্য থেকে শক্তি নিয়ে আবার জোড়া লাগে। এ যেন এক রিচার্জেবল ব্যাটারি। ATP শক্তি জমা করে রাখে এবং প্রয়ােজন অনুসারে অন্য বিক্রিয়ায় শক্তি সরবরাহ করে। এজন্য ATP-কে অনেক সময় 'জৈবমুদ্রা' বা 'শক্তি মুদ্রা' (Biological coin or energy coin) বলা হয়।

4.2 সালােকসংশ্লেষণ (Photosynthesis)

সবুজ উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলাে যে এরা সূর্যালােকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড (co) এবং পানি থেকে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাদ্য তৈরি করে। সবুজ উদ্ভিদে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য তৈরি হওয়ার এ প্রক্রিয়াকে সালােকসংশ্লেষণ (Photosynthesis) বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় | আলােকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সবুজ উদ্ভিদে প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদ নিজে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়ােজনীয় বিপাকীয় প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে ব্যবহার করে এবং অবশিষ্ট খাদ্য ফল, মূল, কাণ্ড অথবা পাতায় সঞ্চিত রাখে। উদ্ভিদে সঞ্চিত এই খাদ্যের উপরেই মানবজাতি ও অন্যান্য জীবজন্তুর অস্তিত্ব নির্ভর করে। সালােকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়ােজনীয় উপকরণগুলাে হলাে: ক্লোরােফিল, আলাে, পানি এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড। সালােকসংশ্লেষণ একটি জৈব রাসায়নিক (biochemical) বিক্রিয়া, যেটি এরকম: ( 6CO2 * 12Hq0 কল C6H120% * 6H0 * 602 পাতার মেসােফিল টিস্যু সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার প্রধান স্থান। স্থলজ সবুজ উদ্ভিদ মাটি থেকে মূলের মাধ্যমে পানি শােষণ করে পাতার মেসােফিল টিস্যুর ক্লোরােপ্লাস্টে পৌঁছায় এবং স্টোমা বা পত্ররন্ত্রের | মাধ্যমে বায়ু থেকে co, গ্রহণ করে, যা মেসােফিল টিস্যুর ক্লোরােপ্লাস্টে পোঁছে। জলজ উদ্ভিদ পানিতে দ্রবীভূত co, গ্রহণ করে। বায়ুমণ্ডলে 0.03% এবং পানিতে 0.3% co, আছে, তাই জলজ উদ্ভিদে সালােকসংশ্লেষণের হার স্থলজ উদ্ভিদ থেকে বেশি। অক্সিজেন এবং পানি সালােকসংশ্লেষণের উপজাত দ্রব্য (by-product)। এটি একটি জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া (oxidation-reduction process)। এ প্রক্রিয়ায় H0 জারিত হয় এবং co, বিজারিত হয়। 4.2.1 সালেকিসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া। সালােকসংশ্লেষণ একটি জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া। 1905 সালে ইংরেজ শারীরতত্ত্ববিদ ব্ল্যাকম্যান (Blackman) এ প্রক্রিয়াকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করেন। পর্যায় দুটি হলাে, আলােকনির্ভর পর্যায় (Light dependent phase) এবং আলোেক নিরপেক্ষ পর্যায় (Light independent phase)।

(a) আলােকনির্ভর পর্যায় (Light dependent phase) আলােকনির্ভর পর্যায়ের জন্য আলাে অপরিহার্য। এ পর্যায়ে সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় ATP (অ্যাডিনােসিন ট্রাইফসফেট), NADPH (বিজরিত নিকোটিনামাইড অ্যাডনিন | ডাইনিউক্লিওটাইড ফসফেট) এবং H' (হাইড্রোজেন আয়ন বা প্রােটন) উৎপন্ন হয়। এই রূপান্তরিত শক্তি ATP-এর মধ্যে সঞ্চিত হয়। এই বিক্রিয়ায় ক্লোরােফিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্লোরােফিল অণু আলােকরশ্মির ফোটন (photon) শােষণ করে এবং শশাষণকৃত ফোটন থেকে শক্তি সঞ্চয় করে ADP (অ্যাডিনােসিন ডাইফসফেট) অজৈব ফসফেট (Pi = inorganic phosphate)-এর সাথে মিলিত হয়ে ATP তৈরি করে। ATP তৈরির এই প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন (photophosphorylation) বলে। ADP+ Pi ATP সূর্যালােক এবং ক্লোরােফিলের সাহায্যে পানি বিয়ােজিত হয়ে অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও ইলেকট্রন উৎপন্ন হয়। এ প্রক্রিয়াকে পানির ফটোলাইসিস (photolysis) বলা হয়।

(b) আলোক নিরপেক্ষ পর্যায় বা অন্ধকার পর্যায় (Light independent phase বা dark phase) আলােক নিরপেক্ষ পর্যায়ে আলাের প্রত্যক্ষ প্রয়ােজন পড়ে না, তবে আলোর উপস্থিতিতেও এই প্রক্রিয়া চলতে পারে। বায়ুমণ্ডলের co, পত্ররন্ত্রের মধ্য দিয়ে কোষে প্রবেশ করে। আলােক পর্যায়ে তৈরি ATP, NADPH এবং H+ এর সাহায্যে আলােক নিরপেক্ষ পর্যায়ে co, বিজরিত হয়ে কার্বোহাইড্রেটে পরিণত হয়। সবুজ উদ্ভিদে co, বিজারণের তিনটি গতিপথ শনাক্ত করা হয়েছে যেগুলাে হচ্ছে ক্যালভিন চক্র, হ্যাচ ও স্প্যাক চক্র এবং ক্রেসুলেসিয়ান এসিড বিপাক। এদের মধ্যে প্রথম দুটির সংক্ষিপ্ত আলােচনা নিচে দেওয়া হলাে। ক্যালভিন চক্র বা c গতিপথ (Calvin cycle বা c cycle): co, আণ্ডীকরণের এ গতিপথকে আবিষ্কারকদের নামানুসারে ক্যালভিন—বেনসন ও ব্যাশাম চক্র বা সংক্ষেপে ক্যালভিন চক্র বলা হয়। ক্যালভিন তার এ আবিষ্কারের জন্য 1961 সালে নােবেল পুরস্কার পান। অধিকাংশ উদ্ভিদে এই প্রক্রিয়ায়। শর্করা তৈরি হয় এবং প্রথম স্থায়ী পদার্থ 3-কার্বনবিশিষ্ট ফসফোগ্লিসারিক এসিড বলে এই ধরনের উদ্ভিদকে বলে C উদ্ভিদ। (ii) হ্যাচ ও স্প্যাক চক্র বা c গতিপথ (Hatch and slack cycle বা cd cycle): অস্ট্রেলীয় । বিজ্ঞানী M,D, Hatch ও C.R. slack (1966 সালে) co, বিজারণের আর একটি গতিপথ আবিষ্কার। করেন। এই গতিপথের প্রথম স্থায়ী পদার্থ হলাে ও-কার্বনবিশিষ্ট অক্সালাে এসিটিক এসিড তাই, একে । C গতিপথ বলে। c, উদ্ভিদে একই সাথে হ্যাচ ও স্প্যাক চক্র এবং ক্যালভিন চক্র পরিচালিত হতে দেখা যায়। C, উস্কিদের তুলনায় C4 উদ্ভিদে সালােকসংশ্লেষণের হার বেশি এবং উৎপাদন ক্ষমতাও বেশি। সাধারণত ভুট্টা, আখ, অন্যান্য ঘাসজাতীয় উদি, মুথা ঘাস, অ্যামারন্যথাস (Armaranthus) ইত্যাদি উদ্ভিদে c পরিচালিত হয়।

4.2.2 সালোকসংশ্লেষণে ক্লোরােফিলের ভূমিকা পাতার ক্লোরােফিলের পরিমাণের সাথে সালােকসংশ্লেষণের হারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, কারণ। একমাত্র ক্লোরােফিলই আলােকশক্তি গ্রহণ করতে পারে। পুরাতন ক্লোরােপ্লাস্ট নষ্ট হয়ে যায় এবং তখন। নতুন ক্লোরােপ্লাস্ট সংশ্লেষিত হয়। নতুন ক্লোরােপ্লাস্ট এবং ক্লোরােপ্লস্টের উপাদান সৃষ্টির হারের উপর সালােকসংশ্লেষণের হার নিভরশীল। সালােকসংশ্লেষণ ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য ক্লোরােপ্লাস্টের বিভিন্ন উপাদান সুত এবং প্রচুর পরিমাণে পুনর্গঠিত হওয়া প্রয়ােজন। তবে কোষে খুব বেশি পরিমাণ ক্লোরােফিল থাকলে এনজাইমের অভাব দেখা দেয় এবং সালােকসংশ্লেষণ কমে যায়।

4.2.3 সালােকসংশ্লেষণে আলাের ভূমিকা সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলাের গুরুত্ব অপরিসীম। পানি এবং cox থেকে শর্করা তৈরির জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তির উৎস আলাে। সূর্যালােক ক্লোরােফিল সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করে। সূর্যালােকের প্রভাবেই পত্রর উন্মুক্ত হয়, co, পাতার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে এবং খাদ্য প্রস্তুতকরণে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু পাতায় যেটুকু আলাে পড়ে, তার অতি সামান্য অংশই সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। আবার আলােকবর্ণালির লাল, নীল, কমলা এবং বেগুনি অংশটুকুতেই সালােকসংশ্লেষণ ভালাে হয়। সবুজ কিংবা হলুদ আলােতে সালােকসংশ্লেষণ ভালাে হয় না। একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত আলাের পরিমাণ বাড়লে সালােকসংশ্লেষণের হারও বেড়ে যায়। কিন্তু আলাের পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে গেলে পাতার ভিতরকার এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়, ক্লোরােফিল উৎপাদন কম হয়। ফলে সালােকসংশ্লেষণের হারও কমে যায়। সাধারণত 400 nm থেকে 480 nm এবং 680 nm (ন্যানােমিটার) তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলােতে সালােকসংশ্লেষণ সবচেয়ে ভালাে হয়।

4.2.4 সালােকসংশ্লেষণের প্রভাবক আলাে এবং ক্লোরােফিল ছাড়াও সালােকসংশ্লেষণ আরও কতগুলাে প্রভাবক দিয়ে প্রভাবিত হয়। প্রভাবকগুলাে কিছু বাহ্যিক এবং কিছু অভ্যন্তরীণ। প্রভাবকের উপস্থিতি, অনুপস্থিতি, পরিমাণের কমবেশি সলােকসংশ্লেষণের পরিমাণও কম-বেশি করে থাকে। প্রভাবকগুলাে হচ্ছে:

(a) বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ

(i) আলাে: এ সম্পর্কে ইতিমধ্যে আলােচনা করা হয়েছে।

(ii) কার্বন ডাই-অক্সাইড: কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়া সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চলতে পারে না। এ প্রক্রিয়ায় যে খাদ্য প্রস্তুত হয় তা কার্বন ডাই-অক্সাইড বিজারণের ফলেই হয়ে থাকে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ 0.03 ভাগ, কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ শতকরা এক ভাগ পর্যন্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করতে পারে। তাই বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সালােকসংশ্লেষণের পরিমাণও বেড়ে যায়। তবে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ খুব বেশি মাত্রায় বেড়ে গেলে পাতার মেসােফিল টিস্যুর কোষের অম্লত্বও বেড়ে যায় এবং পত্ররন্তু বন্ধ হয়ে সালােকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।

(iii) তাপমাত্রা: সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রা বিশেষ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত অতি নিন্ম তাপমাত্রা (0° সেলসিয়াস, এর কাছাকাছি) এবং অতি উচ্চ তাপমাত্রায় (45° সেলসিয়াসের উপরে) এ প্রক্রিয়া চলতে পারে না। সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার জন্য পরিমিত (optimum) তাপমাত্রা হলাে 22° সেলসিয়াস থেকে 35° সেলসিয়াস পর্যন্ত। তাপমাত্রা 22° সেলসিয়াসের কম বা 35 সেলসিয়াসের বেশি হলে সালােকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।

(iv) পানি: সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা তৈরির উদ্দেশ্যে co, কে বিজারণের জন্য প্রয়ােজনীয় H+ (হাইড্রোজেন আয়ন) পানি থেকেই আসে। পানির ঘাটতি হলে পত্ররন্দ্রের রক্ষীকোষেও সফীতি হারিয়ে রম্ব বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাতাস থেকে CO, অনুপ্রবেশ বাধাগ্রস্ত হয়। অতিরিক্ত পানি ঘাটতির ফলে এনজাইমের সক্রিয়তা বিনষ্ট হয়ে সালােকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্থ হতে পারে।

(v) অক্সিজেন বাতাসে অক্সিজেনের ঘনত্ব বেড়ে গেলে সালেকিসংশ্লেষণের হার কমে যায় আর। অক্সিজেনের ঘনত্ব কমে গেলে সালােকসংশ্লেষণের হার বেড়ে যায়। তবে অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে সালােকসংশ্লেষণ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে।

(vi) খনিজ পদার্থ ক্লোরােফিলের প্রধান উপকরণ হচ্ছে নাইট্রোজেন এবং ম্যাগনেসিয়াম। লােহার অনুপস্থিতিতে পাতা ক্লোরােফিল সংশ্লেষণ করতে পারে না, ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায়। কাজেই মাটিতে এসব খনিজের অভাব হলে সালোকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।
(vi) রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে ক্লোরােফর্ম, হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন বা কোনাে বিষাক্ত গ্যাস। থাকলে সালােকসংশ্লেষণে ব্যাঘাত ঘটে বা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।

(b) অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ
(i) ক্লোরােফিল; এ সম্পর্কে ইতিপূর্বে আলােচনা করা হয়েছে।
(ii) পাতার বয়স ও সংখ্যা: একেবারে কচি পাতা এবং একেবারে বয়স্ক পাতায় ক্লোরােফিলের পরিমাণ কম থাকে বলে সালােকসংশ্লেষণ কম হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্লোরােপ্লাস্টের সংখ্যাও বেশি হয়। মধ্যবয়সী পাতায় সবচেয়ে বেশি সালােকসংশ্লেষণ ঘটে। পাতার সংখ্যা বেশি হলে সালােকসংশ্লেষণ বেশি হয়।
(iii) শর্করার পরিমাণ: সালােকসংশ্লেষণ চলাকালীন শর্করার পরিবহন কম হলে তা সেখানে জমা হয়ে থাকে। বিকেলে পাতায় বেশি শর্করা জমা হয় বলে সালােকসংশ্লেষণের গতি মস্থর হয়।
(iv) পটাশিয়াম, পটাশিয়ামের অভাবে সালােকসংশ্লেষণের পরিমাণ বেশ কমে যেতে দেখা যায়। কারণ, সম্ভবত এ প্রক্রিয়ায় পটাশিয়াম অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
(v) এনজাইম: সালােকসংশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের এনজাইমের প্রয়ােজন হয়।

4.2.5 জীবজগতে সালােকসংশ্লেষণের গুরুত্ব সালােকসংশ্লেষণ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া। এ বিক্রিয়ার মাধ্যমেই সূর্যালােক এবং জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। নিচের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যাবে। বিশ্বজুড়ে এ বিক্রিয়ার ব্যাপকতা লক্ষ করে কোনাে কোনাে বিজ্ঞানী এ প্রক্রিয়াকে জৈব রাসায়নিক কারখানা নামে অভিহিত করেছেন। সমস্ত শক্তির উৎস হলাে সূর্য। একমাত্র সবুজ উদ্ভিদই সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে খাদ্যের মধ্যে আবদ্ধ করতে পারে। কোনাে প্রাণীই তার নিজের খাদ্য প্রস্তুত। করতে পারে না। আমরা খাদ্য হিসেবে ভাত, রুটি, ফলমূল, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি যা-ই গ্রহণ করি না কেন, তার সবই প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদ থেকে পেয়ে থাকি। কাজেই খাদ্যের জন্য সমগ্র প্রাণিকুল সবুজ উদ্ভিদের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল, আর সবুজ উদ্ভিদ এ খাদ্য প্রস্তুত করে সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়। কাজেই বলা যায়, পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ এবং প্রাণীর খাদ্য প্রস্তুত হয় সালােকসংশ্লেষণের মাধ্যমে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, বিশেষ করে ০, ও cox-এর সঠিক অনুপাত রক্ষায় সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বায়ুতে অক্সিজেন গ্যাসের পরিমাণ 20.95 ভাগ এবং co, গ্যাসের পরিমাণ 0.033 ভাগ। পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং জীবনযাপনের জন্য বায়ুতে এ দুটি গ্যাসের পরিমাণ স্বভািবিক পর্যায়ে থাকতে হয়। এ পরিমাণের তারতম্য ঘটলে বায়ুমন্ডল জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। আমরা জানি, সব জীবেই (উদি ও প্রাণী) সব সময়ের জন্য শ্বসনক্রিয়া চলতে থাকে। শ্বসন প্রক্রিয়ায় জীব ০, গ্রহণ করে এবং co, ত্যাগ করে। কেবল শ্বসন প্রক্রিয়া চলতে থাকলে বায়ুমণ্ডলে 0, গ্যাসের স্বল্পতা এবং co, গ্যাসের আধিক্য দেখা দিত। কিন্তু সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়। বায়ুমণ্ডল থেকে co, গ্রহণ করে এবং ০, ত্যাগ করে বলে এখনও বায়ুমণ্ডলে ০ ও co, গ্যাসের সঠিক অনুপাত রক্ষিত হচ্ছে। তবে বর্তমানে অধিক হারে বন-জঙ্গল ধ্বংস করার ফলে বায়ুমণ্ডলে এ দুটি গ্যাসের অনুপতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, কাজেই আমাদেরকে অবশ্যই অধিক হারে গাছ লাগাতে হবে। মানবসভ্যতার অগ্রগতি অনেকাংশে সালােকসংশ্লেষণের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। অন্ন, বস্ত্র, শিল্পসামগ্রী (যেমন নাইলন, রেয়ন, কাগজ, সেলুলােজ, কাঠ, রাবার), ঔষধ (যেমন কুইনাইন, মরফিন), জ্বালানি কয়লা, পেট্রল, গ্যাস প্রভৃতি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। তাই সালােকসংশ্লেষণ না ঘটলে মানবসভ্যতা ধ্বংস হবে, বিলুপ্ত হবে জীবজগৎ। সুতরাং সালােকসংশ্লেষণ জীবজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া। শুধু তা-ই নয়, আজ থেকে প্রায় 5 বিলিয়ন বছর আগে যখন পৃথিবী সৃষ্টি হয়, তখন এখানে কোনাে গ্যাসীয় অক্সিজেন ছিল না। আদি উদ্ভিদ সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন তৈরি করে এই পৃথিবীকে আমাদের জন্য বাসযােগ্য করে দিয়েছিল।

একক কাজ
কাজ: সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলাের অপরিহার্যতার পরীক্ষা। পরীক্ষার উপকরণ: টবে লাগানাে সবুজ পাতাবিশিষ্ট একটি গাছ, কালাে কাগজ, 95% ইথাইল অ্যালকোহল, 1% আয়ােডিন দ্রবণ, ক্লিপ, পেট্রিডিস, টেস্ট টিউব, বিকার, বুনসেন বার্নার বা স্পিরিট ল্যাম্প, ড্রপার, ফোরসেপ।

পদ্ধতি: টবে লাগানাে গাছটিকে 48 ঘণ্টার জন্য অন্ধকার কোনাে স্থানে রেখে দিতে হবে যেন পাতাগুলাে শ্বেতসারবিহীন হয়ে পড়ে। অন্ধকারে রাখা গাছটির | একটি পাতার একাংশের উভয় দিক কালাে কাগজ দিয়ে আবৃত করে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিতে হবে যেন ঐ অংশে সূর্যালােক প্রবেশ করতে না পারে। এরপর গাছসহ টবটিকে সূর্যালােকে রেখে দিতে হবে। কয়েক | (67) ঘণ্টা পর গাছ থেকে পাতাটিকে ছিড়ে এনে কালাে কাগজ খুলে ফেলে পানিতে কয়েক মিনিট সিদ্ধ করতে | হবে। এরপর পাতাটিকে ক্লোরােফিলমুক্ত করার জন্য | 95% ইথাইল অ্যালকোহলে সিদ্ধ করতে হবে, যতক্ষণ না পাতাটি বিবর্ণ হয়। এবার সিদ্ধ বর্ণহীন পাতাটিকে অ্যালকোহল থেকে তুলে পানিতে ধুয়ে নিয়ে আয়ােডিন দ্রবণে ডুবাতে হবে। দুর্ঘটনা এড়ানাের জন্য অ্যালকোহলে সিদ্ধ করার সময় সরাসরি তাপ না দিয়ে টেস্ট টিউবে অ্যালকোহল এবং পাতা নিয়ে টেস্ট টিউবকে বিকারের পানিতে রেখে তাপ দিতে হবে। পর্যক্ষেণ আয়ােডিন দ্রবণ থেকে উঠিয়ে আনলে দেখা যাবে, পাতাটির কালাে কাগজ দিয়ে আবৃত অংশ ছাড়া বাকি সবটুকু অংশই নীল বা গাঢ় বেগুনি বা কালাে বর্ণ ধারণ করেছে। | সিদ্ধান্ত: শ্বেতসার এবং আয়ােডিন দ্রবণের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে শ্বেতসার নীল বা গাঢ় বেগুনি বা কালাে বর্ণ ধারণ করবে। কালাে কাগজ দিয়ে আবৃত অংশে সূর্যালােক পেঁৗছাতে পারে না, ফলে পাতার ঐ অংশে সালােকসংশ্লেষণ হয় না বলে শ্বেতসারও প্রস্তুত হয় না। শ্বেতসার প্রস্তুত হয় না বলে পাতার আবৃত অংশ আয়ােডিন দ্রবণে বিক্রিয়া করে নীল বা গাঢ় বেগুনি বা কালাে বর্ণ ধারণ করে না। কিন্তু পাতাটির অনাবৃত অংশে সূর্যালােক পড়েছিল বলে ঐসব সথানে শ্বেতসার উৎপন্ন হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় সালােকসংশ্লেষণ তথা শ্বেতসার প্রস্তুতের জন্য আলাে অপরিহার্য।

সতর্কতা:
(a) পরীক্ষার পূর্বে টবের গাছটি যেন বেশ কিছু সময়ের জন্য অন্ধকারে রাখা হয়।
(b) কালাে কাগজ এমন হতে হবে যেন তার মধ্য দিয়ে সূর্যালােক প্রবেশ করতে না পারে।
(c) পরীক্ষা চলাকালীন কমপক্ষে 6-7 ঘন্টা পূর্বে টবটিকে সূর্যালােকে রাখতে হবে।
(d) অ্যালকোহলে পাতাটিকে সিদ্ধ করার সময় সরাসরি তাপ না দেওয়াই ভালাে।
একক কাজ
কাজ: সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ক্লোরােফিলের অপরিহার্যতার পরীক্ষা। পরীক্ষার উপকরণ: ম্যানিহট বা পাতাবাহার উদ্ভিদের নানা বর্ণের পাতা, অ্যালকোহল, আয়েডিন দ্রবণ, পানি, পেট্রিডিস, টেস্ট টিউব, বুনসেন বার্নার, ড্রপার, বিকার ।

পদ্ধতি: দুপুরের দিকে উদ্ভিদের একটি বাহারি পাতা এনে এর সবুজ অংশটুকু চিহ্নিত করে পাতাটিকে কয়েক মিনিট পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। এরপর পানি থেকে পাতাটিকে তুলে নিয়ে অ্যালকোহলে সিদ্ধ করতে হবে যতক্ষণ না পাতাটি বিবর্ণ হয়। এবার পাতাটিকে তুলে পানিতে ধুয়ে নিয়ে আয়ােডিন দ্রবণে ডুবাতে হবে। দুর্ঘটনা এড়ানাের জন্য অ্যালকোহলে সিদ্ধ করার সময় সরাসরি তাপ না দিয়ে টেস্ট টিউবে অ্যালকোহল এবং পাতা নিয়ে টেস্ট টিউবকে বিকারের পানিতে রেখে তাপ দিতে হবে।

পর্যবেক্ষণ: আয়ােডিন দ্রবণে ডুবানাের পর দেখা যাবে পাতার কেবল সবুজ অংশই নীল বা গাঢ় বেগুনি বা কালাে হয়েছে। সিদ্ধান্ত ক্লোরােফিল থাকায় কেবল সবুজ অংশই সালােকসংশ্লেষণের মাধ্যমে শর্করা প্রস্তুত করেছে। ক্লোরােফিল না থাকায় অসবুজ (কমলা বা হলুদ) অংশে শর্করা প্রস্তুত হয়নি। সবুজ অংশে শর্করা ছিল বলেই আয়ােডিন দ্রবণে ঐ অংশ নীল বা গাঢ় বেগুনি বা কালাে হয়েছে।

সতর্কতা: অ্যালকোহলে পাতাটিকে সিদ্ধ করার সময় সরাসরি তাপ না দেওয়াই ভালাে।

4.3 শ্বসন (Respiration)

আগের শ্রেণিতে তােমরা শ্বসন প্রক্রিয়া কাকে বলে এবং শ্বসনের ফলে যে দেহের বৃদ্ধিসাধন হয় এবং দেহ শক্তি পায়, সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে জেনেছ। এ অধ্যায়ে শ্বসন সম্পর্কে আরও একটু বিস্তারিত আলােচনা করা হবে। জীবের জীবন ধারণ অর্থাৎ চলন, ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি, জনন প্রভৃতি জৈবিক কাজগুলাে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য শক্তির প্রয়ােজন হয়। আমরা আগেই জেনেছি এ শক্তির প্রধান উৎস হলাে সূর্যালােক। সালােকসংশ্লেষণের সময় উদ্ভিদ সৌরশক্তিকে শর্করা জাতীয় খাদ্যবস্তুর মধ্যে স্থিতি শক্তিরূপে (Potential energy) সঞ্চয় করে রাখে। খাদ্যের মধ্যে সঞ্চিত এই ধরনের শক্তি জীব তার জীবন ধারণের জন্য সরাসরি ব্যবহার করতে পারে না। শ্বসনের সময় জীবদেহে এই স্থিতি শক্তি রাসায়নিক শপ্তি (ATP) হিসেবে তাপরূপে মুক্ত হয় এবং জীবের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যােগায়। শকরাজাতীয় খাদ্যবস্তু ছাড়াও প্রােটিন, ফ্যাট এবং বিভিন্ন জৈব এসিড শ্বসনিক বস্তুরূপে ব্যবহৃত হয়। জীবদেহে এই জটিল যৌগগুলাে প্রথমে ভেঙে সরল যৌগে পরিণত হয় এবং পরে জারিত হয়ে রাসায়নিক শক্তিতে (ATP) রূপান্তরিত হয়। সাধারণ তাপমাত্রায় জীবদেহের প্রতিটি কোষে দিবারাত্রি 24 ঘণ্টাই শ্বসন চলতে থাকে। তবে উদ্ভিদের বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে (ফুল ও পাতার কুঁড়ি, অঙ্কুরিত বীজ, মূল ও কাণ্ডের অগ্রভাগ) শ্বসন ক্রিয়ার হার অনেক বেশি। সঞ্জীব কোষের সাইটোপ্লাজম ও মাইটোকন্ড্রিয়াতে শ্বসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবদেহ যৌগিক খাদ্যদ্রব্য জারিত করে সরল দ্রব্যে পরিণত করে এবং শক্তি উৎপন্ন করে।

4.3.1 শ্বসনের প্রকারভেদ
শ্বসনের সময় অক্সিজেনের প্রয়ােজনীয়তার ভিত্তিতে শ্বসনকে দুভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলাে হচ্ছে। সবাত শ্বসন ও অবাত শ্বসন। সবাত শ্বসন (Aerobic respiration): যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের প্রয়ােজন হয় এবং শ্বসনিক কন্তু (শর্করা, প্রােটিন, লিপিড, বিভিন্ন ধরনের জৈব এসিড) সম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে co.. HO এবং বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে, তাকে সবাত শ্বসন বলে। সবাত শ্বসনই হলাে উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক শ্বসন প্রক্রিয়া। সবাত শ্বসনের সামগ্রিক সমীকরণটি এরকম: | CaHg0% + 6O, বিভিন্ন এনজাইম,6CO2 + 6H50 + শক্তি (686 k Cal/ Mole) সবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় এক অণু গ্লুকোজ সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়ে সর্বমােট 6 অণু Con, 6 অণু পানি এবং 3৪টি ATP উৎপন্ন করে।
অবাত শ্বসন (Anaerobic respiration): যে শ্বসন প্রক্রিয়া অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে হয়, তাকে অবাত শ্বসন বলে। অর্থাৎ যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোনাে শ্বাসনিক বস্তু অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই কোষের | ভিতরকার এনজাইম দিয়ে আংশিকরূপে জারিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার জৈব যৌগ (ইথাইল অ্যালকোহল, ল্যাকটিক এসিড ইত্যাদি), co, এবং সামান্য পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে, তাকে অবাত শ্বসন বলে। CaHg0% এনজাইম + শক্তি (56 k Cal / Mole) 2C5HsOH + 2C0, + ইথাইল অ্যালকোহল। গ্লুকোজ | কেবল মাত্র কিছু অণুজীবে যেমন ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট ইত্যাদিতে অবাত শ্বসন হয়ে থাকে।
(a) সবাত শ্বসনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: সবাত শ্বসন প্রক্রিয়া সাধারণত চারটি ধাপে সম্পন্ন হয়। ধাপগুলাে এরকম:
ধাপ 1; গ্লাইকোলাইসিস (Glycolysis); এই প্রক্রিয়ায় এক অণু গ্লুকোজ (C6Hjz0) বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জারিত হয়ে দুই অণু পাইভিক এসিড (CH40) উৎপন্ন করে। এই ধাপে চার অণু ATP (এর মাঝে দুই অণু খরচ হয়ে যায়) এবং দুই অণু NADH+H* উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়ার জন্য কোনাে অক্সিজেনের প্রয়ােজন হয় না, তাই গ্লাইকোলাইসিস সবাত ও অবাত উভয় প্রকার শ্বসনেরই প্রথম পর্যায়। গ্লাইকোলাইসিসের বিক্রিয়াগুলাে কোষের সাইটোপ্লাজমে ঘটে থাকে।
ধাপ 2: অ্যাসিটাইল কো-এ সৃষ্টি: গ্লাইকোলাইসিস পর্যায়ে সৃষ্ট প্রতি অণু পাইরুভিক এসিড | পর্যায়ক্রমিক বিক্রিয়া শেষে 2 কার্বনবিশিষ্ট এক অণু অ্যাসিটাইল কো এনজাইম-এ (Acetyl co-A), এক অণু co, এবং এক অণু NADH+H' (অথবা NADH, উৎপন্ন করে (অর্থাৎ দুই অণু পাইভিক এসিড থেকে দুই অণু অ্যাসিটাইল কো এনজাইম-এ, দুই অণু co, এবং দুই অণু NADH+H* উৎপন্ন হয়)। এই ধাপটি সাইটোপ্লাজমে ঘটে।
ধাপ : ক্রেবস চক্ৰ (Krebs cycle): ইংরেজ প্রাণরসায়নবিদ Sir Hans Krebs এ চক্রটি। | আবিষ্কার করেন বলে একে ক্রেবস চক্র বলা হয়। এ পর্যায়ে অ্যাসিটাইল Co-A মাইটোকন্ড্রিয়াতে প্রবেশ করে এবং ক্রেবস চক্রে অংশগ্রহণ করে। এ চক্রের সকল বিক্রিয়াই মাইটোকন্ড্রিয়াতে সংঘটিত হয়। এই চক্রে এক অণু অ্যাসিটাইল Co-A থেকে দুই অণু কার্বন ডাইঅক্সাইড, তিন অণু NADH+H, এক অণু FADH, এবং এক অণু GTP (গুয়ানােসিন ট্রাইফসফেট) উৎপন্ন হয়। (অর্থাৎ দুই অণু অ্যাসিটাইল Co-A থেকে চার অণু co, 6 অণু NADH+H', দুই অণু FADH, এবং দুই অণু GTP উৎপন্ন হয়।)
ধাপ এ: ইলেকট্রন প্রবাহত (Electron transport system): উপরােক্ত তিনটি ধাপে যে | NADH+H* (বিজারিত NAD), FADH, (বিজারিত FAD) উৎপন্ন হয়, এই ধাপে সেগুলাে জারিত হয়ে ATP, পানি, উচ্চশক্তির ইলেকট্রন এবং প্রােটন উৎপন্ন হয়। উচ্চ শক্তিসম্পন্ন ইলেকট্রনগুলাে ইলেকট্রন প্রবাহতন্ত্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় যে শক্তি প্রদান করে সেই শক্তি ATP তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ইলেকট্রন প্রবাহত মাইটোকন্ড্রিয়ায় সংঘটিত হয় (চিত্র: 4.06)। কাজেই তােমরা দেখতে পাচ্ছ যে সবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় এক অণু গ্লুকোজ সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়ে সর্বমােট ছয় অণু Cox ছয় অণু পানি এবং 38টি ATP উৎপন্ন করে। নিচের চার্টে সেটি দেখানাে হলাে: 1 অণু NADH + H বা NADH2 → 3 অণু ATP 1 অণু FADH2 → 2অণু ATP 1 অণু GTP → 1 অণু ATP
(b) অবাত শ্বসনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: দুটি ধাপে অবাত শ্বসন হয়ে থাকে। ধাপ দুটি হলাে:
ধাপ 1: গ্লুকোজের অসম্পূর্ণ জারণ: এই ধাপে এক অণু গ্লুকোজ থেকে দুই অণু পাইভিক এসিড, চার অণু ATP (এর মধ্যে দুই অণু ব্যবহার হয়ে যায়) এবং দুই অণু NADH+H' উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে এ পর্যন্ত বিক্রিয়া সবাত শ্বসনের গ্লাইকোলাইসিসের অনুরূপ। তবে উৎপন্ন পাইবুভিক এসিড পরবর্তী ধাপে বিজারিত হয়ে যায় বলে অবাত শ্বসনে গ্লুকোজের অসম্পূর্ণ জারণ ঘটে- এমনটা | বিবেচনা করা হয়।
ধাপ 2: পাইভিক অ্যাসিডের বিজারণ: সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত এনজাইমের কার্যকারিতায় | পাইভিক অ্যাসিড বিজারিত হয়ে co, এবং ইথাইল অ্যালকোহল অথবা শুধু ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে। এক্ষেত্রে গ্লাইকোলাইসিসে উৎপন্ন বিজারিত NAD (অর্থাৎ NADHH) জারিত হয়ে | যে ইলেকট্রন, প্রােটন ও শক্তি নির্গত করে, তা ব্যবহৃত হয় পাইভিক অ্যাসিড থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিড বা ক্ষেত্রবিশেষে ইথানল উৎপাদনের জন্য। অন্যদিকে, অক্সিজেনের অভাবে তখন অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশনও চলে না। তাই অবাত শ্বসনের ক্ষেত্রে এক অণু গ্লুকোজের গ্লাইকোলাইসিসে নিট মাত্র 2 অণু ATP পাওয়া যায়।

4.3.2 শ্বসন প্রক্রিয়ার প্রভাবকসমূহ | শ্বসন প্রক্রিয়ার প্রভাবকগুলাে বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ দুরকম হতে পারে।
(a) বাহ্যিক প্রভাবক: বাহ্যিক প্রভাবকগুলাে হলাে:
(i) তাপমাত্রা; 20° সেলসিয়াসের নিচে এবং 45°সেলসিয়াসের উপরের তাপমাত্রায় শ্বসন হার কমে যায়। শ্বসনের জন্য উত্তম তাপমাত্রা 20° সেলসিয়াস থেকে 45° সেলসিয়াস।
(ii) অক্সিজেন; সবাত শ্বসনে পাইরুভিক এসিড জারিত হয়ে co, ও Ho উৎপন্ন করে। কাজেই অক্সিজেনের অভাবে সবাত শ্বসন কোনােক্রমেই চলতে পারে না।
(ii) পানি: পরিমিত পানি সরবরাহ শ্বসন ক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে। কিন্তু অত্যন্ত কম কিংবা অতিরিক্ত পানির উপস্থিতিতে শ্বসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
(iv) আলাে: শ্বসন কার্যে আলাের প্রয়ােজন পড়ে না সত্যি কিন্তু দিনের বেলা আলাের উপস্থিতিতে পত্ররন্দ্র খােলা থাকায় 00 গ্রহণ ও co, ত্যাগ করা সহজ হয় বলে শ্বসন হার একটু বেড়ে যায়।।
(v) কার্বন ডাই-অক্সাইড: বায়ুতে CO-এর ঘনত্ব বেড়ে গেলে শ্বসন হার একটুখানি কমে যায়।

(b) অভ্যন্তরীণ প্রভাবক: অভ্যন্তরীণ প্রভাবকগুলাে হলাে:
(i) খাদ্যদ্রব্য: শ্বসন প্রক্রিয়ায় খাদ্যদ্রব্য (শ্বসনিক বস্তু) ভেঙ্গে শক্তি, পানি এবং co, নির্গত করে, তাই কোষে খাদ্যদ্রব্যের পরিমাণ ও ধরন শ্বসন হার নিয়ন্ত্রণ করে ।
(ii) উৎসেচক: শ্বসন প্রক্রিয়ায় অনেক ধরনের এনজাইম বা উৎসেচক সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। কাজেই এনজাইমের ঘাটতি শ্বসনের হার কমিয়ে দেয়।
(iii) কোষের বয়স: অল্পবয়স্ক কোষে, বিশেষ করে ভাজক কোষে প্রােটোপ্লাজম বেশি থাকে বলে। সেখানে বয়স্ক কোষ থেকে শ্বসনের হার বেশি। (iv) অজৈব লবণ: কোনাে কোনাে লবণ শ্বসন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করলেও কোষের সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক কাজের জন্য এবং স্বাভাবিক শ্বসন প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য কোষের ভিতরে অজৈব লবণ থাকতে হয়।
(v) কোষমধ্যস্থ পানি: বিভিন্ন শ্বসনিক বস্তু দ্রবীভূত করতে এবং এনজাইমের কার্যকারিতা প্রকাশের জন্য পানির প্রয়ােজন।

4.3.3 শ্বসনের গুরুত্ব
শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি দিয়ে জীবের সব ধরনের ক্রিয়া-বিক্রিয়া এবং কাজকর্ম পরিচালিত হয়। শ্বসনে নির্গত co, জীবের প্রধান খাদ্য শর্করা উৎপন্নের জন্য সালােকসংশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। এ প্রক্রিয়া উদ্ভিদে খনিজ লবণ পরিশােষণে সাহায্য করে, যা পরােক্ষভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং অন্যান্য জৈবিক প্রক্রিয়া চালু রাখে। কোষ বিভাজনের প্রয়ােজনীয় শক্তি ও কিছু আনুষঙ্গিক পদার্থ শ্বসন প্রক্রিয়া থেকে আসে। তাই বলা যেতে পারে এ প্রক্রিয়া জীবের দৈহিক বৃদ্ধিও নিয়ণ করে। এ প্রক্রিয়া বিভিন্ন উপক্ষার ও জৈব এসিড সৃষ্টিতে সহায়তা করার মাধ্যমে জীবনের অন্যান্য জৈবিক কাজেও সহায়তা করে। কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বাঁচতে পারে না। এদের শক্তি উৎপাদনের একমাত্র উপায় হলাে অবাত শ্বসন। এ প্রক্রিয়ায় ইথাইল অ্যালকোহল তৈরি হয়, যা বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ল্যাকটিক এসিড ফার্মেন্টেশনের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়ায় দই, পনির ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। রুটি তৈরিতে | এ প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়। ইস্টের অবাত শ্বসনের ফলে অ্যালকোহল এবং co, গ্যাস তৈরি হয়। এই co, গ্যাসের চাপে রুটি ফুলে গিয়ে ভিতরে ফাঁপা হয়।

একক কাজ
কাজ: শ্বসন প্রক্রিয়ায় তাপ নির্গমনের পরীক্ষা। উপকরণ: দুটি থার্মোফ্লাক, দুটি থার্মোমিটার, ছিদ্রযুক্ত দুটি রাবার কর্ক, অঙ্কুরিত ছােলা এবং 10% মারকিউরিক ক্লোরাইড দ্রবণ।
পদ্ধতি: দুটি থার্মোফ্লাস্কের একটিতে ‘ক’ ও অন্যটিতে ‘খ’ লেবেল লাগাতে হবে। 'ক' চিহ্নিত থার্মোফ্লাস্কে সামান্য পানিসহ কিছু অঙ্কুরিত ছোলাবীজ নিতে হবে। ছিদ্রযুক্ত রাবার কর্কের মধ্য দিয়ে একটি থার্মােমিটার প্রবেশ করানাের পর ফ্লাস্কের মুখটি ভালাে করে বন্ধ করে দিতে হবে। অবশিষ্ট অঙ্কুরিত ছােলাগুলােকে 10% ফুটন্ত মারকিউরিক ক্লোরাইড দ্রবণে 10 মিনিট ডুবিয়ে রেখে ‘খ’ চিহ্নিত ফ্লাকে নিতে হবে এবং ছিদ্রযুক্ত কর্কের মধ্য দিয়ে একটি থার্মোমিটার ঢুকিয়ে ফ্লাস্কের মুখ ভালােভাবে আটকে দিতে হবে। এবার ‘ক’ ও ‘খ’ চিহ্নিত থার্মোমিটার দুটির প্রাথমিক তাপমাত্রা লিখে রেখে ফ্লাস্ক দুটিকে রেখে দিতে হবে। পর্যবেক্ষণ: কয়েক ঘণ্টা পর দেখা যাবে ‘ক’ থার্মোমিটারের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে কিন্তু ‘খ’ থার্মোমিটারের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। সিদ্ধান্ত: 'ক' থার্মোফ্লাস্কের অঙ্কুরিত ছােলাগুলাে সজীব থাকায় শ্বসন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে এবং তাপ নির্গমনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে ‘খ’ ফ্লাস্কের ছােলাগুলাে মারকিউরিক ক্লোরাইড দ্রবণে ডুবিয়ে নেওয়াতে বীজগুলাে মরে গিয়ে নির্বীজ (Sterilized) হয়ে যায়। ফলে শ্বসন। প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকে। সতর্কতা: 1. লক্ষ রাখতে হবে যেন বীজগুলাে সতেজ এবং অঙ্কুরিত হয়। 2. থার্মোমিটারের পারদপূর্ণ অংশটি যেন বীজের মাঝখানে থাকে।

() অনুশীলনী
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
1. সালােকসংশ্লেষণ কাকে বলে? বিক্রিয়ার মাধ্যমে দেখাও।
2. সালোকসংশ্লেষণের কাঁচামাল কী কী?
3. শ্বসন কাকে বলে? বিক্রিয়ার মাধ্যমে দেখাও?
4. সালােকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের মধ্যে সম্পর্ক কী?
5. অবাত ও সবাত শ্বসনের পার্থক্য লেখ।
2) রচনামূলক প্রশ্ন
1. জীবের সালােকসংশ্লেষণের উপর নির্ভরশীলতার কারণ ব্যাখ্যা কর।
2. শ্বসনের গুরুত্ব আলােচনা কর।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
1. সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে নির্গত হয় কোনটি?
ক. পানি
খ, শর্করা
গ. অক্সিজেন
ঘ. কার্বন ডাই-অক্সাইড

2, শ্বসনের গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ায় কত অণু ATP তৈরি হয়?
ক. 4
খ, 6
গ, ৪
ঘ, 18

উদ্দীপকটি লক্ষ কর এবং 3 ও 4 নং প্রশ্নের উত্তর দাও

3. চিত্রে A ও B উভয়েরই কাজ হচ্ছে—
i. O2 গ্রহণ
ii. H2O নির্গমন
iii. CO2 ত্যাগ

নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

4. চিত্রে x-এ সংঘটিত প্রক্রিয়াটি
i. পরিবেশকে শীতল রাখে
ii. সালােকসংশ্লেষণে সহায়তা করে
iii. শ্বসনে ব্যাঘাত ঘটায়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ, i, ii ও iii
সৃজনশীল প্রশ্ন
ক. পাইভিক এসিডের সংকেত কী?
খ, অবাত শ্বসন বলতে কী বােঝায়?
প, চিত্রে A উপাদানটি কীভাবে তৈরি হচ্ছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. চিত্রে A উৎপাদনটি উৎপন্নে ব্যাঘাত ঘটলে উদ্ভিদের উপর কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে তা যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।

2, দশম শ্রেণির ছাত্রী বিপাশা গাজর খেতে পছন্দ করে। গাজরে গ্লুকোজ থাকায় এটা তার কাজ করার শক্তি যােগায়। তার ছােট বােন তাকে প্রশ্ন করে, গাছ বড় হওয়ার জন্য শক্তি কীভাবে পায়? সে তার বােনকে জানায়, গাছও শ্বসন প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ থেকে শক্তি পায়।
ক. ফটোলাইসিস কী?
খ, C4 উদ্ভিদ বলতে কী বােঝায়?
প, বিপাশার গৃহীত খাদ্য উপাদানের 2 অণু থেকে ক্রেবস চক্র কী পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় দুকের মাধ্যমে ব্যাখ্যা কর।
ঘ, উক্ত প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হলে উদ্ভিদের মধ্যে কী প্রভাব ফেলবে তা বিশ্লেষণ কর।

প্রধান শব্দভিত্তিক সারসংক্ষেপ



♦ জীববৈচিত্র্য : জীবের জিনগত, প্রজাতিগত ও পরিবেশগত বৈচিত্র্যকে একসঙ্গে জীববৈচিত্র্য বলা হয়।