Publications:


জীববিজ্ঞান বিষয়ে ভালো নম্বর পেতে যেভাবে প্রস্তুতি নেবে

গাজী সালাহউদ্দিন সিদ্দিকী |
প্রভাষক, অগ্রণী স্কুল ও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো
তারিখ: ২৯-০৩-২০১০

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা,

শুধু বিষয় সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা থাকলেই বেশি নম্বর পাওয়া যায় না। বেশি নম্বর পেতে হলে দরকার কিছু কৌশল। কৌশল আর অধ্যাবসায়—এই দুয়ের সমন্বয় ঘটলেই সাফল্য এসে ধরা দেবে তোমাদের হাতে।

চিহ্নিত চিত্র আঁকবে কীভাবে:

জীববিজ্ঞানে চিত্রের প্রতি তোমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ অনেক প্রশ্নের উত্তরে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ নম্বর চিত্রের জন্য বরাদ্দ থাকে। পরীক্ষার খাতায় চিত্র অবশ্যই চিহ্নিত করবে। আর চিত্রের নিচে কিসের চিত্র এঁকেছ তা লিখতে কিন্তু ভুলবে না। চিত্র চিহ্নিত করার জন্য যে লাইনগুলো টানবে, তা অবশ্যই সমান্তরাল করে টানবে। লেবেলিংয়ের লাইনগুলো যাতে একে অপরকে ছেদ না করে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। লেবেলিংয়ের লেখাগুলো অবশ্যই পেনসিল দিয়ে লিখবে। চিত্র অবশ্যই পরিষ্কারভাবে পেনসিল (2B/HB) দিয়ে আঁকবে। চিত্রে রংপেনসিল ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, চিত্র রং করার জন্য কোনো আলাদা নম্বর বরাদ্দ থাকে না। পেনসিল দিয়ে চিত্র আঁকলে সেটি সহজেই ইরেজার দিয়ে মুছে ঠিক করতে পারবে, কিন্তু কলম বা রংপেনসিল দিয়ে আঁকলে সেটি আর ঠিক করা যাবে না। তোমার চিত্রটি অবশ্যই মোটামুটি বড় হতে হবে এবং চিত্রটিতে সব অঙ্গাণু সবিস্তারে আঁকতে হবে। চিত্রটিতে অঙ্গাণুগুলোর/অংশগুলোর আকৃতি সঠিক অনুপাতে হতে হবে। তবেই চিত্রে ভালো নম্বর পাওয়া যেতে পারে।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূর্ণ নম্বরের উত্তর করবে কীভাবে:

পরীক্ষায় ৭৫ নম্বরের পুরো উত্তর করার জন্য তোমাকে অবশ্যই কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তোমরা জানো যে ৭৫ নম্বরের জন্য নির্ধারিত সময় হচ্ছে ১৮০ মিনিট। আর সেই হিসাবে প্রতি নম্বরের জন্য বরাদ্দ সময় হলো ২.৪ মিনিট। তাই ৫ নম্বরের জন্য বরাদ্দ সময় হলো ১২ আর ১০ নম্বরের জন্য ২৪ মিনিট। তবে পরীক্ষার প্রশ্ন নানা ধরনের হয়ে থাকে। কিছু প্রশ্নের উত্তর খুব কম সময়ে দেওয়া যায়, আবার কিছু প্রশ্নের উত্তর লিখতে অনেক সময় লাগে। এ বিষয়টি খেয়াল রেখে তোমাকে নির্ধারণ করতে হবে তুমি কোন কোন প্রশ্নের উত্তর দেবে। যেমন—একটি ৫ নম্বরের পার্থক্যের প্রশ্নের উত্তর লিখতে তোমার হয়তো পাঁচ মিনিট সময় লাগবে। কিন্তু ৫ নম্বরের বর্ণনামূলক উত্তর লিখতে সময় লাগবে ১৫ মিনিট। কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর অনেক বেশি জানলেই সবটুকু লেখা যাবে না। তোমাকে লিখতে হবে উত্তরের জন্য বরাদ্দ নম্বর এবং সময়ের কথা বিবেচনা করে। তা না হলে তুমি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূর্ণ নম্বরের উত্তর করতে পারবে না। মনে রাখতে হবে, খুব ভালো করে ৬০ নম্বরের উত্তর করার চেয়ে মোটামুটিভাবে ৭৫ এর উত্তর করলে বেশি নম্বর পাওয়া যায়।

প্রশ্নের উত্তর কতটুকু হবে:

প্রশ্নের উত্তর কতটুকু হবে, এটি নির্ভর করে প্রশ্নের ধরনের ওপর। তবে বর্ণনামূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে পাঁচ নম্বরের জন্য ২ পৃষ্ঠা লেখা উচিত। প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় খেয়াল করবে, প্রশ্নের মধ্যে কতগুলো অংশ আছে। এই অংশগুলো ধরে ধরে উত্তর করতে হবে। তবে তোমাকে অবশ্যই নম্বর এবং সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করেই উত্তর করতে হবে। অনেক বেশি জানলেই বেশি লেখা যাবে না। অন্যদিকে তোমাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, একটি প্রশ্নের মধ্যে অনেকগুলো অংশ থাকে এবং এই অংশগুলোর জন্য আলাদা করে নম্বর বরাদ্দ থাকে, যেগুলো সাধারণত প্রশ্নের মধ্যে লেখা থাকে না। যেমন: প্রশ্ন—একক পর্দা কী? কোষ পর্দা গঠনে ‘ফ্রুইড মোজাইক’ মডেল বর্ণনা করো। এখানে পুরো উত্তরের জন্য ৫ নম্বর থাকে। কিন্তু পরীক্ষক যখন উত্তরপত্র পরীক্ষণ করবেন, তখন নম্বর দেবেন এভাবে—(সংজ্ঞা:১+বর্ণনা:২.৫+চিহ্নিত চিত্র:১.৫=৫)। সুতরাং প্রশ্নের উত্তর করার সময় এই ভাগগুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। এখানে প্রশ্নে চিত্রের কথা না থাকলেও চিত্রের জন্য নম্বর বরাদ্দ আছে।

কী কী কারণে নম্বর কাটা যায়:

তোমরা প্রশ্নের উত্তর লেখার শুরুতেই প্রশ্নের নম্বর [যেমন: ১নং প্রশ্নের উত্তর (ক)] লিখে নিচে কালো বা নীল রঙের সাইনপেন দিয়ে দাগ দেবে, যাতে প্রশ্নের নম্বর পরীক্ষকের চোখে পড়ে। মনে রাখবে, এখানে ভুল হলে কোনো নম্বর পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ তুমি যদি ১নং প্রশ্নের উত্তর (ক)-এর স্থলে ২নং প্রশ্নের উত্তর (ক)-এর উত্তর লেখো, তাহলে কোনো নম্বর পাওয়া যাবে না। জীববিজ্ঞান বিষয়ে বৈজ্ঞানিক নাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি হাতে লিখলে অবশ্যই এর নিচে আলাদাভাবে দাগ দিতে হবে। আর শ্রেণীবিন্যাস লেখার সময় গণ ও প্রজাতি দুটোর নিচেই আলাদাভাবে দাগ দিতে হবে। বৈজ্ঞানিক নামের নিচে দাগ না দিলে ০.৫ নম্বর কাটা যায়।

প্রশ্নের উত্তরে পুরো নম্বর পাওয়া যাবে যেভাবে:

তোমাদের অনেকেরই ধারণা, জীববিজ্ঞানে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যায় না। এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। জীববিজ্ঞানে অনেক প্রশ্ন আছে যেগুলো নির্ভুলভাবে উত্তর করলে পুরো নম্বর পাওয়া যায়। যেমন শ্রেণীবিন্যাস, বৈজ্ঞানিক নাম, পার্থক্য, বিভিন্ন ধরনের ছক ইত্যাদি। তবে বর্ণনামূলক প্রশ্ন, যেগুলোর উত্তর অনেক লিখলেও সহজে শেষ হয় না যেমন—‘পরিবেশ দূষণের কারণগুলো বর্ণনা করো’ এমন প্রশ্নের উত্তরে সাধারণত পুরো নম্বর পাওয়া কঠিন। তাই পরীক্ষার হলে তুমি কোন কোন প্রশ্নের উত্তর করবে, এটি নির্বাচনও একটি পরীক্ষা। পরীক্ষার সময় তোমাকে সতর্কতার সঙ্গে এসব বিষয় বিবেচনা করে উত্তর করতে হবে। তাহলেই পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া সহজ হবে।

উত্তরের উপস্থাপন কৌশল কেমন হবে:

সাধারণভাবে কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর উপস্থাপন করার সময় চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। বিষয়গুলো হলো—(ক) অবস্থান বা সংজ্ঞা (খ) গঠন (গ) কাজ এবং (ঘ) চিহ্নিত চিত্র। যেমন: মাইটোকন্ড্রিয়ার বর্ণনা লেখার জন্য প্রথমে এটি কী বা কোথায় পাওয়া যায়, এর গঠন, চিহ্নিত চিত্র এবং সবশেষে এর কাজ লিখতে হবে। চিহ্নিত চিত্র উত্তর কিছু অংশ লেখার পর দিলে ভালো হয়। একই প্রশ্নের বিভিন্ন অংশের উত্তর যেমন (ক), (খ) ও (গ) একই সঙ্গে পর পর লেখা উচত। শেষে বলতে চাই, পরীক্ষার সময় খুব ধীর-স্থিরভাবে চিন্তা করে পরীক্ষা দেবে। কখনোই তাড়াহুড়া করবে না। যেসব প্রশ্নের উত্তর তুমি ভালো পারবে, সেগুলোর উত্তর আগে করবে। পরে বাকিগুলো চিন্তা করে উত্তর করবে। তোমাদের সবার মঙ্গল হোক, সবাই পরীক্ষায় অনেক অনেক ভালো করো—এ কামনা করছি।