মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান (SSC Biology )


ষষ্ঠ অধ্যায় : জীবে পরিবহণ


what image shows

পরিবহন জীবদেহের একটি অতিপ্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা, যা সবসময়েই ঘটে চলেছে। উদ্ভিদে পানি ও খনিজ পরিবহন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, খাদ্য চলাচলও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। মাটি থেকে গ্রহণ করা পানি আর খনিজ লবণ মূল থেকে পাতায় পৌঁছানাে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, পাতায় প্রস্তুত করা খাদ্য উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গে পরিবহনও ঠিক তেমনি সমান প্রয়ােজনীয়। মানবদেহে পরিবহন প্রক্রিয়া উদ্ভিদের মতাে নয় কিন্তু উভয়েই পদার্থবিজ্ঞানের একই নিয়ম অনুসরণ করে। উদ্ভিদ আর মানবদেহের পরিবহন পদ্ধতি এ অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয়।

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা:

♦  উদ্ভিদে পরিবহনের ধারণা ও প্রয়ােজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦  উদ্ভিদ ও পানির সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦ উদ্ভিদ পানি ও খনিজ পদার্থ শােষণ প্রক্রিয়া ও এর প্রয়ােজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦ সালোকসংশ্লেণের ফলে উৎপাদিত পদার্থের পরিবহন বর্ণনা করতে পারব।
♦ উদ্ভিদে পানি ও খনিজ পদার্থ পরিবহন ও এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦ প্রস্বেদনের ধারণী ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে পারব। প্রস্বেদনের হার নিয়ন্ত্রণে প্রভাবকের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে পারব।
♦ প্রস্বেদন একটি অতিপ্রয়ােজনীয় অমঙ্গল তা মূল্যায়ন করতে পারব।
♦ উদ্ভিদে প্রস্বেদনের পরীক্ষা করতে পারব। মানবদেহে সংবহনের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব। রক্ত উপাদানের কাজ ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦ বিভিন্ন গ্রুপের রক্তের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦ রক্ত গ্রুপ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে রক্ত নির্বাচন করতে পারব।
♦  রক্তদানের নিয়মাবলি এবং এর সামাজিক দায়বদ্ধতা বর্ণনা করতে পারব।
♦ মানবদেহে রক্ত সঞ্চালন কার্যক্রম বর্ণনা করতে পারব।
♦  হৃৎপিণ্ডের গঠন ও কাজ বর্ণনা করতে পারব।
♦ হৃৎপিণ্ড গঠনগতভাবে যে এর কার্যক্রমের সাথে অভিযােজিত তা বিশ্লেষণ করতে পারব।
♦ রক্ত সঞ্চালনে রক্তচাপের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে পারব।
♦ আদর্শ রক্তচাপ ব্যাখ্যা করতে পারব। |
♦ কোলেস্টেরলের প্রকারভেদ, সীমা, উপকারিতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বর্ণনা করতে পারব।
♦  রক্ত সঞ্চালনে কোলেস্টেরলের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে পারব।
♦ রকে অস্বাভাবিকতার কারণ ও ফলাফল ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦  হৃৎপিণ্ড সম্পর্কিত রােগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিরােধ ও প্রতিকার বিশ্লেষণ করতে পারব।
♦ হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখার উপায় বিশ্লেষণ করতে পারব। |
♦ বিশ্রামরত অবস্থায় এবং শরীরচর্চার পর রক্তচাপ ও পালসরেট পরিমাপ করতে এবং দুই অবস্থানে পরিমাপকৃত রক্তচাপ ও পলিসরেট বিশ্লেষণ করতে পারব।
♦  সঠিকভাবে রক্তচাপ ও পালসরেট পরিমাপ করতে পারব।
♦  হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখার জন্য নিজে সচেতন হব এবং অন্যকে সচেতন করতে পারব।

6.1 উদ্ভিদ ও পানির সম্পর্ক

পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া জীব বাঁচতে পারে না। আমরা জানি, প্রােটোপ্লাজম জীবদেহের ভৌত ভিত্তি, এই প্রােটোপ্লাজমের শতকরা ৩০ ভাগই পানি। এ কারণেই পানিকে ফুইড অফ লাইফ বলা হয়ে থাকে। পানির পরিমাণ কমে গেলে প্রােটোপ্লাজম সংকুচিত হয়ে মরে পর্যন্ত যেতে পারে। তাছাড়া উদ্ভিদের দেহে যত বিপাকীয় বিক্রিয়া চলে, পানির অভাব হলে সেগুলাে বন্ধ হয়ে যাবে। উদ্ভিদদেহে পানির প্রয়ােজনীয় দিকগুলাের মধ্য উল্লেখযােগ্য হলাে:
(a) প্রােটোপ্লাজম সজীব রাখতে পানির বিকল্প নেই। একটি সংকুচিত প্রােটোপ্লাজমযুক্ত কোষকে বাঁচাতে চাইলে দেরি না করে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
(b) প্রস্বেদন ও সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চালু রাখতে পরিমাণমতাে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা দরকার। এজন্যই শুষ্ক মৌসুমে বড় বড় উদ্ভিদেও পানি সেচ দিতে হয়।
(c) পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্রাবক। বিপাকীয় অনেক বিক্রিয়ায় পানির গুরুত্ব অপরিসীম।
(d) উদ্ভিদের কোষ বৃদ্ধি ও চলনে পানির ভূমিকা রয়েছে। | এখন প্রশ্ন হচ্ছে উদ্ভিদ জীবনের জন্য প্রয়ােজনীয় পানি কোথায় এবং কীভাবে পায়? উদ্ভিদ প্রধানত মূলের মাধ্যমে মাটি থেকে পানি শােষণ করে। উদ্ভিদে 3টি প্রক্রিয়া সম্মিলিতভাবে শােষণ কাজ সম্পাদন করে। প্রক্রিয়া তিনটি হলাে ইমবাইবিশন, ব্যাপন এবং অভিস্রবণ।

(a) ইমবাইবিশন (Imbibition): | এক খণ্ড শুকনা কাঠের এক প্রান্ত পানিতে ডুবালে ঐ কাঠের খণ্ডটি কিছু পানি টেনে নেবে। আমরা জানি, কলয়েড জাতীয় শুকনা বা আধা শুকনা পদার্থ তরল পদার্থ শুষে নেয়, এ জন্যই কাঠের খণ্ডটি পানি। টেনে নিয়েছে। এ প্রক্রিয়াকে ইমবাইবিশন বলে। সেলুলােজ, স্টার্চ, জিলাটিন— এগুলাে হাইড্রোফিলিক (পানিপ্রিয়) পদার্থ। এরা তরল পদার্থের সংস্পর্শে এলে তা শুষে নেয়, আবার তরল পদার্থের অভাবে সংকুচিত হয়ে যায়। কোষপ্রাচীর ও প্রােটোপ্লাজম কলয়েডধর্মী হওয়ায় ইমবাইবিশন প্রক্রিয়ায় পানি শােষণ করে সীত হয়ে ওঠে। পানি শােষণের এটি একটি অন্যতম প্রক্রিয়া।

(b) ব্যাপন (Diffusion): ঘরের এক কোণে কিছু সুগন্ধি ঢেলে দিলে তার সুগন্ধ সারা ঘরে ছড়িয়ে যায়। কারণ এর ক্ষুদ্র কণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এক গ্লাস পানিতে কিছু চিনি ছেড়ে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্লাসের পানি মিষ্টি হয়ে যায়। এক্ষেত্রে চিনির অণু পানিতে ছড়িয়ে পুরাে পানিকে মিষ্টি স্বাদযুক্ত করে তােলে। এই প্রক্রিয়াকে | ব্যাপন বলে। এটি একটি ভৌত প্রক্রিয়া (Physical process)। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনাে দ্রব্যের অণু বেশি ঘনত্বের এলাকা থেকে কম ঘনত্বের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তাকে ব্যাপন প্রক্রিয়া বলে। একই তাপমাত্রা ও বায়ুমণ্ডলীয় চাপে কোনাে পদার্থের বেশি ঘনত্ববিশিষ্ট দ্রবণ থেকে কম ঘনত্বের দ্রবণের দিকে দ্রাবকের ব্যাপিত হওয়ার প্রচ্ছন্ন ক্ষমতাকে ব্যাপন চাপ বলে। একই বায়ু চাপে কোনাে একটি দ্রবণ ও দ্রাবকের ব্যাপন চাপের পার্থক্যকে ব্যাপন চাপ ঘাটতি (Diffusion pressure deficit) বলে। পাতার মেসােফিল টিস্যতে এই ব্যাপন চাপ ঘাটতির ফলে পানির ঘাটতি আছে, এমন কোষ পাশের কোষ থেকে পানি টেনে নেয়। এক কথায় উদ্ভিদের পানি শােষণে ব্যাপনের গুরুত্ব অপরিসীম।

একক কাজ
কাজ : ব্যাপন প্রক্রিয়ার পরীক্ষণ।
উপকরণ : একটি ছােট বাটি এবং আতর বা যেকোনাে সুগন্ধি।
পদ্ধতি : ব্যাপন প্রক্রিয়াটি প্রমাণ করতে আতর বা সুগন্ধি বাটিতে ঢেলে পরবর্তী অবস্থা বর্ণনা কর।

(c) অভিস্রবণ (osmosis):
অভিস্রবণ কী, সেটা কি তােমরা জান? তােমরা কি খেয়াল করেছ যে তােমার মা যখন পানিতে কিশমিশ। ভিজিয়ে রাখেন, তার কিছুক্ষণ পর চুপসে থাকা কিশমিশগুলাে ফুলে টসটসে হয়ে ওঠে। ঐ টসটসে কিশমিশ যদি আবার ঘন চিনির দ্রবণে ভিজিয়ে রাখ, তাহলে দেখবে সেগুলাে আবার চুপসে গেছে। কেন এমন হলাে তা কি তােমরা ধারণা করতে পার? এটি একটি অতি প্রয়ােজনীয় প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ মাটি থেকে পানি গ্রহণ করে। এ প্রক্রিয়াটি জীবন্ত কোষ ছাড়াও কৃত্রিমভাবে ল্যাবরেটরিতেও ঘটানাে যায়। যদি দুটি ভিন্ন ঘনত্বের দ্রবণ যাদের দ্রব এবং দ্রাবক একই, একটি বৈষম্যভেদ্য পর্দা (Selectively perreable membrane) দিয়ে আলাদা করা হয়, তাহলে কিছুক্ষণের মধ্যেই দুটি দ্রবণের ঘনত্ব সমান হয়ে যাবে। একই দ্রব এবং দ্রাবকযুক্ত দুটি ভিন্ন ঘনত্বের দ্রবণ একটি বৈষম্যভেদ্য পর্দা দিয়ে আলাদা করা হলে, দ্রাবক তার নিম ঘনত্বের দ্রবণ থেকে উচ্চ ঘনত্বের দ্রবণের দিকে প্রবাহিত হয়। প্রাবকের বৈষম্যভেদ্য পর্দা ভেদ করে তার নিম্ন ঘনত্বের দ্রবণ থেকে উচ্চ ঘনত্বের দ্রবণের দিকে প্রবাহিত হওয়াকে অভিস্রবণ প্রক্রিয়া বলা হয়।

একক কাজ
কাজ : কোষ থেকে কোষে অভিস্রবণের পরীক্ষণ।
উপকরণ : একখণ্ড আলু, ব্লেড, পেট্রিডিস, পানি, চিনি।
পদ্ধতি : আলু দিয়ে অসমােকোপ বানাও। চিনির শরবৎ ঢেলে অভিস্রবণের প্রমাণ দাও।

6.2 পানি ও খনিজ লবণ শােষণ


উদ্ভিদে পানি শােষণ ও খনিজ লবণ শােষণ ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়ায় হয়। আলোচনার সুবিধার জন্য আমরা পানি শােষণ বিষয়টি সম্পর্কে আগে জানব।

(a) পানি শোষণ:
সাধারণভাবে উদ্ভিদ তার মূলরােমের মাধ্যমে মাটির কৈশিক পানি (capillary water) শােষণ করে। প্রস্বেদনের ফলে পাতার কোষে ব্যাপন চাপ ঘাটতির সৃষ্টি হয়, এর ফলে পাশের কোষ থেকে পানি এই কোষের দিকে ধাবিত হয়। একইভাবে ঐ দ্বিতীয় কোষটিতে আবার ব্যাপন চাপ ঘাটতি সৃষ্টি হয় এবং তার পাশের বা নিচের কোষ থেকে পানি টেনে নেয়। এভাবে ব্যাপন চাপ ঘাটতি ক্রমশ মূলরােম পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং একটি চোষক শক্তির সৃষ্টি হয়। এ চোষক শক্তির টানে মাটির কৈশিক পানি মূলরােমে ঢুকে পড়ে। মাটি থেকে মূলরােমে অভিস্রবণ ও ব্যাপন প্রক্রিয়ায় এ পানি প্রবেশ করে। এভাবে মূলরােম থেকে পানি মূলের কর্টেন্সে (Cortex) প্রবেশ করে। এ কাজটিকে কোষ থেকে কোষান্তরে অভিস্রবণ (cell to cell osmosis) পদ্ধতি বলে। একইভাবে পানি অন্তঃত্বক ও পরিচক হয়ে পরিবহন কলা গুচ্ছে (Vascular bundles) পেঁৗছে যায়। পানি একবার পরিবহন কলায় পৌঁছে গেলে তা জাইলেম কলার মাধ্যমে উপরের দিকে এবং পাশের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। এভাবে পানি বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা হয়ে উদ্ভিদের পাতায় পৌঁছে যায়। এ কাজে যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া কাজ করে সেগুলাে হলাে, অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন। |

(b) খনিজ লবণ শােষণ:
অধিকাংশ উদ্ভিদ পানির সাথে কিছু পরিমাণ খনিজ লবণ শােষণ করে, কিছু লবণ মূলরােম দিয়ে শােষিত হলেও মূলত মূলের অগ্রভাগের কোষ বিভাজন অঞ্চলই শশাষণ অঞ্চল হিসেবে কাজ করে। খনিজ লবণ। শােষিত হয় আয়ন হিসেবে। শােষণ প্রধানত দুটি উপায়ে হয়ে থাকে, নিষ্ক্রিয় শশাষণ ও সক্রিয় শােষণ।

নিষ্কিয় শােষণ (Passive absorption): উদ্ভিদের এ প্রক্রিয়ায় মূলরােম ইমবাইবিশন ও অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় লবণ শােষণ করে, কোনাে বিপাকীয় শক্তির প্রয়ােজন হয় না।

সক্রিয় শােষণ (Active absorption): সক্রিয় শােষণে খনিজ লবণ পরিবহনের জন্য কোষে উৎপন্ন বিপাকীয় শক্তির প্রয়ােজন হয়। |

6.2.1 উদ্ভিদে পরিবহন


উদ্ভিদে পরিবহন বলতে মাটি থেকে শােষিত পানি ও খনিজ লবণ এবং পাতায় প্রস্তুতকৃত খাদ্যের চলাচলকে বুঝায়। আমরা জানি, জাইলেম ভেসেলের মাধ্যমে পানি এবং খনিজ লবণ উদ্ভিদের পাতায় পেন্থািয়। প্রস্বেদন টান, কৈশিক শক্তি এবং মূলজ চাপের ফলে কোষরস উদ্ভিদের পাতায় পৌঁছে যায় বলে | বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন। এভাবে পাতায় পানি পৌঁছালে সেখানে খাদ্য প্রস্তুত হয়। প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদের বিভিন্ন এলাকায় পরিবহনের দায়িত্ব গ্রহণ করে ফ্লোয়েম টিস্যু। এ খাদ্য ফ্লোয়েমের সিঙনলের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। উদ্ভিদের বিভিন্ন জৈব যৌগ ফ্লোয়েম টিস্যুর মাধ্যমে বিপরীত দিকে একই সাথে চলাচল করে। উদ্ভিদের নিচের দিকের যৌগগুলাে নিচের দিকে, উপরে সংশ্লেষিত যৌগগুলাে উপরের দিকে এবং উদ্ভিদের মাঝামাঝি এলাকায় সংশ্লেষিত পদার্থগুলাে উপরে বা নিচে যেকোনাে দিকে প্রবাহিত হয়।

উঞ্জিদে পরিবহনের প্রয়ােজনীয়তা:
পরিবহন অর্থ একস্থান থেকে অন্য স্থানে কোনাে পদার্থের স্থানান্তর। পানি ও খনিজ লবণের চলাচলকে উদ্ভিদে পরিবহন বলা হয়। উদ্ভিদে পানি ও খনিজ দ্রব্যের প্রয়োজনীয়তার কথা সব বিজ্ঞানাই স্বীকার করেছেন। এই পানি এবং খনিজ পদার্থ উদ্ভিদের কাজে আসতে হলে সেগুলােকে অবশ্যই বিক্রিয়াস্থলে | নিয়ে যেতে হবে। এজন্য পানি এবং খনিজ লবণ পরিবহন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলরােম দিয়ে পানি ও খনিজ লবণ শােষিত হয়ে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় কর্টেক্সের মধ্য দিয়ে জাইলেম ভেসেলে পৌঁছায় এবং প্রস্বেদন হাতের সাথে ধীরে ধীরে পাতায় গিয়ে পৌঁছে। সেখানে খাদ্য তৈরি হয়। পাতা থেকে তৈরি খাদ্য ক্লায়েমের সিভনল দিয়ে উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যায়। কখনাে জাইলেম ভেসেল বা ফ্লায়েমের | সিভনল কোনাে কারণে বন্ধ হয়ে গেলে উদ্ভিদের মৃত্যু অবধারিত। এজন্য বলা যায় পরিবহন উদ্ভিদ জীবনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম।

পানি ও খনিজ পদার্থের পরিবহন (Translocation of water and minarals):
আমরা ইতােপূর্বে অভিস্রবণ ও ব্যাপন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছি। অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ মাটি থেকে মূল দিয়ে পানি শােষণ করে। মূলরােমের সাহায্যে প্রধানত এ কাজটি হয়। পাশাপাশি উদ্ভিদ মাটি থেকে প্রয়ােজনীয় খনিজ পুষ্টিও শােষণ করে। অবশ্য খনিজ পুষ্টি শােষণের পদ্ধতি পানি শােষণ পদ্ধতি থেকে আলাদা। এ বিষয়ে উচ্চতর শ্রেণিতে তােমরা বিস্তারিত জানতে পারবে। কোষের ভিতরকার পানি এবং পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণকে একত্রে কোষরস (cell sap) বলে। এবার আমরা মূল থেকে উদ্ভিদের সর্বোচ্চ শাখায় এবং পাতায় কীভাবে কোষরস পৌঁছায় তা জানব।

কোষরসের আরোহণ (Ascent of sap):
মূল পানি ও খনিজ লবণ শােষণ করে। এ কোষরস বিভিন্ন প্রক্রিয়ার প্রভাবে ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠতে থাকে। একই সাথে কোষরসের পার্শ্ব পরিবহনও চলতে থাকে। কোষরস পরিবহনকে দুভাগে ভাগ করা যায়, মাটিতে থাকা পানি ও খনিজ লবণগুলাে মূলরােম থেকে মুলের পরিবহন কলায় পেছানাে এবং | মূলের পরিবহন কলা থেকে পাতায় পৌঁছানাে। প্রথম ধাপে অভিস্রবণ, ব্যাপন ও প্রস্বেদন টান ইত্যাদি পানি এবং খনিজ লবণ শােষণ ও পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মূলরােম দিয়ে শােষিত পানি এবং খনিজ পদার্থ অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় মূলরােম থেকে পাশের কোষে যায়। ঐ কোষ থেকে তা পুনরায় তার পাশের কোষে যায়। এভাবে কোষ থেকে কোষে পানি এবং খনিজ পদার্থ চলতে চলতে একসময় মূলের পরিবহন টিস্যু হয়ে এবং কাণ্ডের পরিবহন কলা বেয়ে পাতার মেসসাফিল কলায় পেঁছিয়। ব)

একক কাজ
কাজ: উদ্ভিদের রস উত্তোলন পরীক্ষণ।
উপকরণ: Peperornia উদ্ভিদ, একটি বােতল, পানি ও স্যাফ্রানিন বা লাল কালি।
পদ্ধতি: একটি বােতলে কিছু পানি নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা স্যাফ্রানিন বা লাল কালি নাও। মূলসহ একটি তাজা Peperomia উদ্ভিদ এমনভাবে স্থাপন কর যেন মূলগুলাে পানিতে ডুবে থাকে। এ অবস্থায় বােতলটিকে কয়েক ঘণ্টার জন্য রেখে দাও এবং পর্যবেক্ষণ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল খাতায় লেখ।

6.2.3 সালােকসংশ্লেষণে উৎপাদিত পদার্থের পরিবহন


তােমরা আগেই জেনেছ যে উদ্ভিদ অভিস্রবণ পদ্ধতিতে পানি গ্রহণ করে। এ পানি জাইলেম ভেসেলের মাধ্যমে সুউচ্চ বৃক্ষের সর্বোচ্চ স্থানের পাতায়ও পৌঁছে যায়। পাতা সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় এ পানি ব্যবহার করে। আলাের উপস্থিতিতে ক্লোরােপ্লাস্টে বায়ু থেকে গৃহীত co, এবং মাটি থেকে গৃহীত পানির সংমিশ্রণে শর্করাজাতীয় খাদ্য উৎপন্ন হয়। এ উৎপন্ন খাদ্য উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে চলে যায়। উদ্ভিদের প্রতিটি কোষই এ খাদ্য ব্যবহার করে শ্বসন প্রক্রিয়ায় তার বিপাকীয় কাজ চালানাের প্রয়ােজনীয় শক্তির যােগান দেয়। এ কাজের পর যতটুকু খাদ্য অবশিষ্ট থাকে, সেগুলাে উঠিদের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে। সঞ্চিত থাকে। বিভিন্ন ফল এবং বীজ ছাড়াও কাণ্ড (যেমন- গােল আলু), মূল (যেমন-মিষ্টি আলু) কিংবা পাতাতেও (যেমন-ঘৃতকুমারী) এই খাদ্য জমা থাকে। আমরা এবার দেখব সালােকসংশ্লেষণে উৎপন্ন খাদ্য কীভাবে উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়।

ফ্লোয়েমের মাধ্যমে পরিবহন (Phloem translocation):
উদ্ভিদের মূল এবং পাতা পরস্পর থেকে দূরে অবস্থান করায় খাদ্য চলাচলে একটি দ্রুত ও কার্যকর। পরিবহনব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। এ কাজটি ফ্লোয়েমের সিভনল করে থাকে। ফ্লোয়েম পরিবহন কলাগুচ্ছের অন্যতম গুচ্ছ। আমরা জেনেছি যে পরিবহন কলাগুচ্ছে জাইলেমগুচ্ছ এবং ফ্লোয়েমগুচ্ছ থাকে। ফ্লোয়েমগুচ্ছে সিভনল, সঙ্গীকোষ, ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা ও বাস্টফাইবার থাকে। সিভনল এক ধরনের কেন্দ্ৰিকাবিহীন ও পাতলা প্রাচীরযুক্ত সজীব কোষ। লম্বালম্বিভাবে এরা একটির সাথে অন্যটি যুক্ত হয়ে উদ্ভিদদেহে জালের মতাে গঠন সৃষ্টি করে। দুটো কোষের মধ্যবর্তী অনুপ্রস্থ প্রাচীরটি স্থানে স্থানে বিলুপ্ত হয়ে চালুনির মতাে আকার ধারণ করে। এর ফলে খাদ্যদ্রব্য সহজেই এক কোষ থেকে অন্য কোষে চলাচল করতে পারে। শীতকালে এ রগুলােতে ক্যালােজ নামক রাসায়নিক পদার্থ জমা হয়ে র হােট হয়, তাই খাদ্য চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। গ্রীষ্মের আগমনে ক্যালােজ গলে যায়, তাই খাদ্য চলাচল বেড়ে যায়।

6.2.4 প্রস্বেদন (Transpiration):


পানি ছাড়া জীবন কল্পনা করা যায় না। উদ্ভিদ প্রধানত মূল দিয়ে তার প্রয়ােজনীয় পানি শােষণ করে। শােষিত পানির অতি সামান্য অংশ উদ্ভিদের বিভিন্ন জৈবিক কার্যাবলির জন্য ব্যয় হয়। অবশিষ্ট পানি উদ্ভিদের বায়বীয় অংশ দিয়ে বাম্পাকারে বাইরে বের হয়ে যায়। সাধারণত স্থলজ উদ্ভিদ যে শারীরতত্ত্বীয় প্রক্রিয়ায় তার বায়বীয় অঙ্গের মাধ্যমে বাষ্পাকারে পানি বের করে দেয়, সেটাই প্রস্বেদন বা বাষ্পমােচন প্রক্রিয়া। এ কাজটি তার বায়বীয় অঙ্গের কোন অংশের মাধ্যমে ঘটে, তার ভিত্তিতে এদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা; পত্ররন্থীয় প্রস্বেদন, কিউটিকুলার প্রস্বেদন ও লেন্টিকুলার প্রস্বেদন।

(a) পত্ররন্দ্রীয় প্রস্বেদন (Stromatal transpiration): পাতায়, কচিকাণ্ডে, ফুলের বৃতি ও পাপড়িতে দুটি রক্ষীকোষ (Guard cell) বেষ্টিত এক ধরনের রন্তু থাকে। এদেরকে পত্রর (একবচন stoma, বহুবচন stomata) বলে। কোনাে উদ্ভিদের মােট প্রস্বেদনের 90-95% হয় পত্ররন্দ্রের মাধ্যমে।

(b) কিউটিকুলার প্রবেদন (cuticular transpiration): উদ্ভিদের বহিঃত্বকে বিশেষ করে পাতার উপরে এবং নিচে কিউটিনের আবরণ থাকে। এ আবরণকে কিউটিকল বলে। কিউটিকল ভেদ করে কিছু পানি। বাম্পাকারে বাইরে বের হয়। এ প্রক্রিয়াকে কিউটিকুলার প্রস্বেদন বলে।

(c) লেন্টিকুলার প্রস্বেদন (Lenticular transpiration):
উদ্ভিদে গৌণ বৃদ্ধি হলে কাণ্ডের বাকল ফেটে লেন্টিসেল নামক ছিদ্র সৃষ্টি হয়। লেন্টিসেলের ভিতরের কোষগুলাে আলাদাভাবে সজ্জিত থাকে এবং এর মাধ্যমে কিছু পানি বাইরে বেরিয়ে যায়। একে লেন্টিকুলার প্রস্বেদন বলে। প্রস্বেদনের ফলে উদ্ভিদটি বাম্পাকারে অতিরিক্ত পানি মুক্ত করে আর এর ফলে সৃষ্ট টানে পানি শােষিত হয়। এ প্রক্রিয়াটি অনেকগুলাে প্রভাবকের উপর নির্ভরশীল। এদের মােটামুটিভাবে দুভাগে ভাগ করা যায়, বাহিক প্রভাবক ও অভ্যন্তরীণ প্রভাবক।

(a) বাহ্যিক প্রভাবক

(0) তাপমাত্রা (Temperature): তাপমাত্রার তারতম্যের সঙ্গে প্রস্বেদনের হারও ওঠা-নামা করে। অধিক তাপে পানি সহজেই বাষ্পে পরিণত হতে পারে বলে প্রস্বেদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। তাপমাত্র বৃদ্ধি পেলে বায়ুমন্ডলের জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রস্বেদনের হারও ধুততর হয়। তাপমাত্রা কমে গেলে তাই স্বাভাবিক নিয়মেই প্রস্বেদনের হারও কমে যায়।

(u) আপেক্ষিক আর্দ্রতা (Relative humidity): বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ ও বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতার আনুপাতিক হারকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে। কোনাে একটি এলাকার বায়ুমণ্ডলে অধিক জলীয়বাষ্প থাকা সত্ত্বেও অধিক ধারণক্ষমতার জন্য তা শুষ্ক হতে পারে। আবার কম জলীয়বাষ্প থাকা সত্ত্বেও বায়ুমণ্ডলের কম ধারণক্ষমতার জন্য এটি সিক্ত হতে পারে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম হলে বায়ু অসম্পূর্ব থাকে ও জলীয়বাষ্প গ্রহণ করতে পারে কিন্তু অধিক হলে বায়ু সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম থাকলে প্রস্বেদনের হার বেড়ে যায় এবং বেশি থাকলে হার কমে যায়।

(iii) আলাে (Light); আলাের উপস্থিতিতে পত্ররন্দ্র খুলে যায়, ফলে প্রস্বেদনের হার বৃদ্ধি পায়। কিন্তু অন্ধকারে পত্ররন্দ্র বন্ধ থাকায় এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। আলাের তারতম্যের জন্য পত্ররন্দ্রের আকারেও হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। ফলে প্রস্বেদনের হারও ওঠা-নামা করে। আলাে উদ্ভিদদেহের তাপমাত্র বৃদ্ধির মাধ্যমেও প্রস্বেদন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।

(iv) বায়ুপ্রবাহ (wind); প্রস্বেদনের ফলে উদ্ভিদের চারদিকের বায়ু সিক্ত হয়ে ওঠে, ফলে এই প্রক্রিয়ার হার কমতে থাকে। যখন বায়ুপ্রবাহ সম্পৃক্ত বায়ু দূরে সরিয়ে দেয় তখন এই হার আবার বৃদ্ধি পায়। বায়ুপ্রবাহের ফলে পত্রগুলাে আন্দোলিত হয় এবং পত্ররন্দ্রের চাপ পড়ে। ফলে অধিক হারে জলীয়বাষ্প রপথে বের হয়। এসব কারণে বায়ুপ্রবাহের তারতম্যে প্রস্বেদন হারেরও তারতম্য ঘটে। বায়ুচাপ বৃদ্ধিতে ৰাষ্পীয়ভবন ক্রিয়া হ্রাস পায়, ফলে প্রস্বেদন কমে যায়। আবার বায়ুচাপ কমে গেলে বাষ্পীয়ভবন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায় এবং প্রস্বেদনের হারও বেড়ে যায়।

(b) অভ্যন্তরীণ প্রভাবক

(i) পত্ৰরশ্ন: পত্ররন্দ্রের সংখ্যা, আয়তন, গঠন এবং অবস্থানের উপর প্রস্বেদন হারের তারতম্য ঘটে।

(w) পত্রের সংখ্যা: পাতার সংখ্যা, আয়তন, গঠন এবং অবস্থানের উপর প্রস্বেদন হারের তারতম্য লক্ষ করা যায়।

(ii) পত্রফলকের আয়তন: পত্রফলকের আয়তন বড় হলে প্রবেদনের হার বেড়ে যায়। একইভাবে এ আয়তন কম হলে প্রস্বেদনের হারও কমে যায়।

(iv) উয়িদের বায়ৰ অন্সের আয়তন: পাতা ও কাণ্ডসহ উদ্ভিদের বায়ব অঙ্গের কলেবর বৃদ্ধি পেলে। প্রস্বেদনের হারও বেড়ে যায়। এছাড়া কিউটিকলের উপস্থিতি, স্পনজি প্যারেনকাইমার পরিমাণ এগুলােও প্রস্বেদন হারের তারতম্য ঘটায়।

একক কাজ কাজ: প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ যে পানি বাষ্পাকারে বের করে দেয় তার পরীক্ষা। উপকরণ: টবসহ একটি সতেজ উদ্ভিদ, একটি কাচের বেলজার বা সেলােফেন ব্যাগ, সুতা বা ক্লিপ এবং পরিমাণমতাে কিছু পানি। পদ্ধতি: প্রথমেই টবসহ গাছটিকে টেবিলের উপর বসিয়ে দিতে হবে এবং টবে পরিমাণমতাে পানি ঢেলে দিতে হবে। এবার কিছু পাতাসহ একটি শাখাকে সেলােফেন ব্যাগ দিয়ে মুড়ে সুতাে দিয়ে বেঁধে বা ক্লিপ দিয়ে আটকে অথবা বেলজার দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন ভিতরের। বাষ্প বের হতে বা বাইরের বাতাস ঢুকতে না পারে। এ অবস্থায় টবটি এক ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। পর্যবেক্ষণ; এক ঘণ্টা পর দেখা যাবে, সেলােফেন ব্যাগের ভিতরের গায়ে পানির ফোঁটা জমে আছে এবং পুরাে ব্যাগটি অস্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। কেন এমন হলাে তা কি তােমরা বুঝতে পারছ? সিদ্ধান্ড: যেহেতু সেলােফেন ব্যাগে অন্য কোনাে পানি ঢােকার সুযােগ ছিল না, তাই ঐ পানির কণাগুলাে যে পাতা থেকেই বেরিয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। এতে প্রমাণিত হলাে যে উদ্ভিদ তার বায়বীয় অঙ্গ দিয়ে পানি বাম্পাকারে দেহের বাইরে বের করে দেয়। সতর্কতা: | (a) টবের উদ্ভিদটি অবশ্যই সতেজ হতে হবে। (b) সেলােফেন ব্যাগের মুখ ভালোভাবে বেঁধে বায়ুরােধী করতে হবে।

প্রস্বেদন একটি অতি প্রয়ােজনীয় অমঙ্গল (Transpiration is a necessary evil):
প্রস্বেদনের গুরুত্ব সম্পর্কে বর্তমানে সকল বিজ্ঞানীই ঐকমত্যে পৌঁছেছেন বলে মনে করা হয়। এ | প্রক্রিয়ার উপরে সঞ্জীৰ উদি কোষের বিপাকীয় কার্যক্রম অনেকাংশে নির্ভরশীল। প্রস্বেদনের ফলে জাইলেমবাহিকায় টান পড়ে। এই টানের ফলে উদ্ভিদের মূলরােম কর্তৃক শােষিত পানি এবং খনিজ লবণ পাতায় পরিবাহিত হয়। এ টানের ঘাটতি হলে পানি শােষণ কমে যাবে এবং খাদ্য প্রস্তুতসহ অনেক বিপাকীয় কার্যক্রম শ্লথ হয়ে যাবে। প্রস্বেদনের ফলে পাতার মেসােফিলে ব্যাপন চাপ ঘাটতি সৃষ্টি হয়, যা পানি শােষণে সাহায্য করে। উদ্ভিদ প্রস্বেদনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পত্রফলক দিয়ে শােষিত তাপশক্তি হ্রাস করে পাতার কোষগুলাের তাপমাত্রা সহনশীল পর্যায়ে রাখে। অন্যদিকে, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রক্রিয়াটি উদ্ভিদের বহু ধরনের উপকার করলেও এর কিছু অপকারী ভূমিকাও রয়েছে। যেমন; পানি শােষণের চেয়ে প্রশেদনে পানি হারানাের হার বেশি হলে উদ্ভিদের জন্য পানি এবং খনিজের ঘাটতি দেখা দিবে। এর ফলে উদ্ভিদটির মৃত্যু হতে পারে। মাটিতে পানির ঘাটতি থাকলে শােষণ কম হবে কিন্তু প্রস্বেদন পূর্বের মতাে চলতে থাকবে। এ অবস্থাকে ঠেকাতে প্রকৃতি শীত মৌসুমে বহু উদ্ভিদের পাতা ঝরিয়ে দেয়। প্রস্বেদনের অভাবে প্রয়ােজনীয় ব্যাপন চাপ ঘাটতি হবে না, ফলে অভিস্রবণ কম হবে। এমতাবস্থায় বলা যায়, প্রস্বেদন কিছু ক্ষতিসাধন করলেও এই প্রক্রিয়া উদ্ভিদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি কার্যক্রম। বৈশিষ্ট্যের বৈপরীত্যের জন্য বিজ্ঞানী কার্টিস প্রস্বেদনকে প্রয়ােজনীয় ক্ষতি' (Necessary Evil) নামে অভিহিত করেছেন। তবে সার্বিক বিচারে এটি উদ্ভিদকে টিকে থাকার ক্ষেত্রে সুবিধা দেয় বলে এর অপকারী দিক থাকা সত্ত্বেও প্রস্বেদন প্রক্রিয়া বিবর্তিত হয়েছে।

6.3 মানবদেহে রক্ত সংবহন (Blood circulation in human body)

রক্ত জীবনীশক্তির মূল। রক্তনালির মধ্য দিয়ে রক্ত দেহের সর্বত্র প্রবাহিত হয় এবং কোষে অক্সিজেন এবং খাদ্য উপাদান সরবরাহ করে। ফলে দেহের সব কোষ সজীব এবং সক্রিয় থাকে। যে তন্ত্রের মাধ্যমে রপ্ত প্রতিনিয়ত দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও অংশে চলাচল করে, তাকে রক্ত সংবহনতন্ত্র বলে। এ তন্ত্রে প্রবাহিত রক্তের মাধ্যমেই খাদ্য, অক্সিজেন এবং রক্তের বর্জ্য পদার্থ দেহের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত মানবদেহে রক্তপ্রবাহ কেবল হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালিগুলাের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, কখনাে এর বাইরে। আসে না। এ ধরনের সংবহনতন্ত্রকে বন্ধ সংবহনতন্ত্র (Close circulatory system) বলা হয়। সারা। দেহে ন্তু একবার সম্পূর্ণ পরিভ্রমণের জন্য মাত্র এক মিনিট বা তার চেয়েও কম সময় লাগে। বন্ধ সংবহনতন্ত্রের বড় সুবিধা হলাে এ ব্যবস্থায়, (a) র সরাসরি দেহের বিভিন্ন অঙ্গে গিয়ে পৌঁছে। | (b) রক্তবাহী নালির ব্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে দেহ কোনাে বিশেষ অশে রক্তপ্রবাহের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। (c) রক্ত বিভিন্ন অঙ্গে পরিভ্রমণ করে দ্রুত হৃৎপিন্ডে ফিরে আসে। অন্যান্য তলের তুলনায় রক্ত সংবহনতন্ত্র বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হলেও এর গঠনশৈলী মােটামুটি সাধারণ। পরিবহনতকে সাধারণত দুটি অংশে ভাগ করা হয়, রক্ত সংবহনতন্ত্র (Blood circulatory system): হৃৎপিণ্ড, ধমনি, শিৱা ও কৈশিকলি নিয়ে গঠিত এবং লসিকাত (Lymphatic system); লসিকা, লসিকানালি ও ল্যাকটিয়েলনালি নিয়ে গঠিত।

6.3.1 রক্ত (Blood)

রক্ত একটি অস্বচ্ছ, মৃদু ক্ষারীয় এবং লবণাক্ত তরল পদার্থ। রক্ত হৃৎপিণ্ড, শিরা, উপশিরা, ধমনি, শাখা ধমনি এবং কৈশিকনালি পথে আবর্তিত হয়। লােহিত রক্তকণিকায় হিমােগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থ থাকার কারণে রক্তের রং লাল দেখায়। হাড়ের লাল অস্থিমজ্জাতে রক্তকণিকার জন্ম হয়। রক্তের উপাদান। রক্ত এক ধরনের তরল যােজক কলী। রক্তরস এবং কয়েক ধরনের রক্তকণিকার সমন্বয়ে রক্ত গঠিত।

(a) রক্তরস (Plasma): রক্তের বর্ণহীন তরল অংশকে রক্তরস বলে। সাধারণত রক্তের শতকরা প্রায় 55 ভাগ রক্তরস। রক্তরসের প্রধান উপাদান পানি। এছাড়া বাকি অংশে কিছু প্রােটিন, জৈবযৌগ ও সামান্য অজৈব লবণ দ্রবীভূত। অবস্থায় থাকে। এর মধ্যে যে পদার্থগুলাে থাকে তা হলাে:
(i) প্রােটিন, যথা অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন ও ফাইব্রিনােজেন
(ii) গ্লুকোজ
(i) ক্ষুদ্র ক্ষুদ্ৰ চৰ্বিকণা
(iv) খনিজ লবণ
(v) ভিটামিন
(vi) হরমােন।
(vii) এন্টিবডি
(vii) বর্জ্য পদার্থ যেমন; কার্বন ডাই-অক্সাইড, ইউরিয়া, ইউরিক এসিড ইত্যাদি। এছাড়া সামান্য পরিমাণে সােডিয়াম ক্লোরাইড, সােডিয়াম বাইকার্বোনেট ও অ্যামাইনাে এসিড থাকে। আমরা খাদ্য হিসেবে যা গ্রহণ করি তা পরিপাক হয়ে অন্ত্রের গাত্রে শােষিত হয় এবং রক্তরসে মিশে দেহের সর্বত্র সঞ্চালিত হয়। এভাবে দেহকোষগুলাে পুষ্টিকর দ্রব্যাদি গ্রহণ করে দেহের পুষ্টির সাধন এবং ক্ষয়পূরণ করে।

(b) 1991 (Blood corpuscles) মানবদেহে তিন ধরনের রক্তকণিকা দেখা যায়, লােহিত রক্তকণিকা (Red Blood Corpuscles), শ্বেত | রক্তকণিকা (white Blood corpuscles) এবং অণুচক্রিকা (Blood Platelets)। যদিও এগুলাে সব কোষ, তবে রক্তের প্লাজমার মধ্যে ভাসমান কণার সাথে তুলনা করে এদেরকে অনেক দিন আগে। | রক্তকণিকা নাম দেওয়া হয়েছিল, তখন অণুবীক্ষণ যন্ত্র এখনকার মতাে উন্নত ছিল না। সেই নাম এখনও প্রচলিত।
(i) লােহিত রক্তকণিকা: মানবদেহে তিন ধরনের রক্তকণিকার মধ্যে লােহিত রক্তকণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এটি শ্বাসকার্যে অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লাল অস্থিমজ্জায় | লােহিত রক্তকণিকা তৈরি হয়। এর গড় আয়ু 120 | দিন। মানুষের লােহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না এবং দেখতে অনেকটা দ্বি-অবতল বৃত্তের মতাে। পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির রক্তে লােহিত রক্তকণিকার সংখ্যা প্রতি কিউবিক মিলিমিটারে প্রায় 50 লক্ষ। এটি শ্বেত রক্তকণিকার চেয়ে প্রায় 500 গুণ বেশি। পুরুষের তুলনায় নারীদের রক্তে লােহিত রক্তকণিকা কম থাকে। তুলনামূলকভাবে শিশুদের দেহে লােহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বেশি থাকে। আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্তে লােহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয়, আবার সমপরিমাণে তৈরিও হয়। লােহিত রক্তকণিকার হিমােগ্লোবিন অক্সিহিমােগ্লোবিন হিসেবে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে। হিমােগ্লোবিন: হিমােগ্লোবিন এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ। লােহিত রক্তকণিকায় এর উপস্থিতির কারণে রক্ত লাল দেখায়। রক্তে প্রয়ােজনীয় পরিমাণ হিমােগ্লোবিন না থাকলে রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা (anerala) দেখা দেয়। বাংলাদেশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ জনগােষ্ঠী এ রােগে আক্রান্ত।

(ii) শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট শ্বেতকণিকার নির্দিষ্ট কোনাে আকার নেই। এগুলাে হিমােগ্লাবিনবিহীন এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকারের কোষ। শ্বেত কণিকার গড় আয়ু ১-১৫ দিন। হিমােগ্লোবিন না থাকার কারণে এদের শ্বেত রক্তকণিকা, ইংরেজিতে White Blood cell বা WBC বলে। শ্বেত কণিকার সংখ্যা RBC-এর তুলনায় অনেক কম। এরা অ্যামিবার মতাে দেহের আকারের পরিবর্তন করে। ফ্যাগােসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় এটি জীবাণুকে ধ্বংস করে। শ্বেত কণিকাগুলাে রক্তরসের মধ্য দিয়ে নিজেরাই চলতে পারে। রস্ত জালিকার প্রাচীর ভেদ করে টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। দেহ বাইরের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে, দ্রুত শ্বেত কণিকার সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে। মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে 4-10 হাজার শ্বেত রক্তকণিকা থাকে। অসুস্থ মানবদেহে এর সংখ্যা বেড়ে যায়। স্তন্যপায়ীদের রক্তকোষগুলাের মধ্যে শুধু শ্বেত রক্ত কণিকায় DNA থাকে। প্রকারভেদ: গঠনগতভাবে এবং সাইটোপ্লাজমে দানার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি অনুসারে শ্বেত কণিকাকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়, যথা
(ক) অ্যাগ্রানুলােসাইট বা দানাবিহীন এবং
(খ) গ্রানুলােসাইট বা দানাযুক্ত।

(ক) অ্যাগ্রানুলােসাইট : এ ধরনের শ্বেত কণিকার সাইটোপ্লাজম দানাহীন ও স্বচ্ছ। অ্যাগ্রানুলােসাইট শ্বেত কণিকা দুই রকমের; যথা-লিম্ফোসাইট ও মনােসাইট। দেহের লিম্ফনােড, টনসিল, প্লিহা ইত্যাদি অংশে এরা তৈরি হয়। লিম্ফোসাইটগুলাে বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ছােট কণিকা। মনােসাইট ছােট, ডিম্বাকার ও বৃক্কাকার নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট বড় কণিকা। লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি গঠন করে এবং এই অ্যান্টিবডির দ্বারা দেহে প্রবেশ করা রােগজীবাণু ধ্বংস করে। এভাবে দেহে | রোগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মনােসাইট ফ্যাগােসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রােগজীবাণুকে ধ্বংস করে।

(খ) প্রানুলােসাইট ; এদের সাইটোপ্লাজম সূক্ষ্ম দানাযুক্ত। গ্রানুলােসাইট শ্বেত কণিকাগুলাে নিউক্লিয়াসের আকৃতির ভিত্তিতে তিন প্রকার যথা: নিউট্রোফিল, ইওসিনােফিল এবং বেসােফিল। নিউট্রোফিল ফ্যাগােসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ভক্ষণ করে। ইওসিনােফিল ও বেসােফিল হিস্টামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে দেহে এলার্জি প্রতিরােধ করে। বেসােফিল হেপারিন নিঃসৃত করে রক্তকে রক্তবাহিকার ভিতরে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।

(iii) অণুচক্রিকা বা ঘােসাইট | ইংরেজিতে এদেরকে প্লেইটলেট (Platelet) বলে। এগুলাে গােলাকার, ডিম্বাকার অথবা বড় আকারের হতে পারে। এদের সাইটোপ্লাজম দানাদার এবং সাইটোপ্লাজমে কোষ অঙ্গাণু- মাইটোকন্ড্রিয়া, গন্সি | বস্তু থাকে; কিন্তু নিউক্লিয়াস থাকে না। অনেকের মতে, অণুচক্রিকাগুলাে সম্পূর্ণ কোষ নয়; এগুলাে। অস্থি মজ্জার বৃহদাকার কোষের ছিন্ন অংশ। | অণুচক্রিকাগুলাের গড় আয়ু ৫-১০ দিন। পরিণত মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে অণুচক্রিকার সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। অসুস্থ দেহে এদের সংখ্যা আরও বেশি হয়। অণুচক্রিকার প্রধান কাজ হলাে রক্ত তঞ্চন করা বা জমাট বাঁধানােতে (blood clotting) সাহায্য করা। যখন কোনাে রক্তবাহিকা বা কোনাে টিস্যু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কেটে যায়, তখন সেখানকার অণুচক্রিকাগুলাে সক্রিয় হয়ে উঠে অনিয়মিত আকার ধারণ করে এবং প্রস্কোপ্লাসটিন (Thromboplastin) নামক পদার্থ তৈরি করে। এ পদার্থগুলাে রক্তের প্রােটিন প্রােথ্রমবিনকে খ্রমবিনে পরিণত করে। থ্রমবিন পরবর্তী সময়ে রক্তরসের প্রােটিন- ফাইব্রিনােজেনকে ফাইব্রিন জালকে পরিণত করে রক্তকে জমাট বাধায় কিংবা রক্তের তঞ্চন ঘটায়। ফাইব্রিন একধরনের অদ্রবণীয় প্রােটিন, যা দ্রুত সুতার মতাে জালিকা প্রস্তুত করে। এটি ক্ষত স্থানে জমাট বাঁধে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। তবে রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়াটি আরও জটিল, এ প্রক্রিয়ায় জন্য আরও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ভিটামিন K ও ক্যালসিয়াম আয়ন জড়িত থাকে। রক্তে উপযুক্ত পরিমাণ অণুচক্রিকা না থাকলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না। ফলে অনেক সময় রােগীর প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকে।

একক কাজ শ্বেত রক্তকণিকা | কাজ: নিচের ছকটি খাতায় আঁক ও পূরণ কর। লােহিত ও শ্বেত রক্তকণিকার মধ্যে পার্থক্য ; | বৈশিষ্ট্য | লােহিত রক্তকণিকা | (a) নিউক্লিয়াস । (b) আকার (c) হিমােগ্লোবিন (d) সংখ্যা। | (e) কাজ রকের কাজ রক্ত দেহের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি দেহের নানাবিধ কাজ করে, যেমন:

(a) অক্সিজেন পরিবহন: লােহিত রক্তকণিকা অক্সিহিমােগ্লোবিনরূপে কোষে অক্সিজেন পরিবহন করে। (b) কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ: রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে কোষগুলােতে যে কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হয়, রক্তরস সােডিয়াম বাই কার্বনেটরূপে তা সংগ্রহ করে নিয়ে আসে এবং নিঃশ্বাস বায়ুর সাথে ফুসফুসের সাহায্যে দেহের বাইরে বের করে দেয়।

(c) খাদ্যসার পরিবহন; রক্তরস গ্লুকোজ, অ্যামাইনাে এসিড, চর্বিকণা ইত্যাদি কোষে সরবরাহ করে।

(d) তাপের সমতা রক্ষা: দেহের মধ্যে অনবরত দহনক্রিয়া সম্পাদিত হচ্ছে। এতে করে বিভিন্ন অঙ্গে বিভিন্ন মাত্রার তাপ সৃষ্টি হয় এবং তা রক্তের মাধ্যমে দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে দেহের সর্বত্র তাপের সমতা রক্ষা হয়। (e) বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন: রক্ত দেহের জন্য ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ বহন করে এবং বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে সেসব ইউরিয়া, ইউরিক এসিড ও কার্বন ডাই-অক্সাইড হিসেবে নিষ্কাশন করে। (০) হরমােন পরিবহন; হরমােন নালিবিহীন গ্রন্থিতে তৈরি এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ বা রস। এই রস সরাসরি রক্তে মিশে প্রয়ােজন অনুযায়ী বিভিন্ন অঙ্গে সঞ্চালিত হয় এবং বিভিন্ন জৈবিক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। (ঞ) রােগ প্রতিরােধ: কয়েক প্রকারের শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগােসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় দেহকে জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন উৎপাদনের মাধ্যমে রক্ত দেহের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। (h) রুস্ত জমাট বাঁধা: দেহের কোনাে অংশ কেটে গেলে অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এবং দেহের রক্তক্ষরণ বন্ধ করে।

6.3.2 ব্লাড গ্রুপ বা রক্তের গ্রুপ। একজন আশঙ্কাজনক বা মুমূর্ষ রােগীর জন্য রক্তের প্রয়ােজন, তার রক্তের গ্রুপ 'বি' পজিটিভ। তােমরা এ রকম বিজ্ঞাপন প্রায়শই টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে পাও। রক্তের গ্রুপ বা ব্লাড গ্রুপ কী? কেনই ব্লাড গ্রুপ জানা প্রয়ােজন? অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে যে বিভিন্ন ব্যক্তির লােহিত ন্ত কণিকায় A এবং B নামক দুই ধরনের অ্যান্টিজেন (antigens) থাকে এবং রক্তরসে a ও b দুই ধরনের অ্যান্টিবডি (antibody) থাকে। এই অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে মানুষের রকে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করা যায়। একে ব্লাড গ্রুপ বলে। বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার 1901 সালে মানুষের রক্তের শ্রেণিবিন্যাস করে তা A, B, AB এবং ০- এ চারটি গ্রুপের নামকরণ করেন। সাধারণত একজন মানুষের রক্তের গ্রুপ আজীবন একই রকম থাকে। নিচের সারণিতে রক্তের গ্রুপের অ্যান্টিবডি এবং অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি দেখানাে হলাে: রক্তের গ্রুপ | অ্যান্টিজেন (লােহিত রক্তকণিকায়) | অ্যান্টিবডি (রসে) | A AB A. B নেই a, b আমরা উপরের সারণিতে রক্তে বিভিন্ন অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখেছি। এর ভিত্তিতে আমরা ব্লাড গ্রুপকে এভাবে বর্ণনা করতে পারি। যেমন: গ্রুপ A; এ শ্রেণির রক্ত A এন্টিজেন ও b এন্টিবডি থাকে। গ্রুপ B: এ শ্রেণির ররে B এন্টিজেন ও a এন্টিবডি থাকে। এপ AB; এই শ্রেণির রত্ন A ও B এন্টিজেন থাকে এবং কোনাে এন্টিবডি থাকে না। গ্রুপ O; এ শ্রেণির রঙ্গ কোনাে এন্টিজেন থাকে না কিন্তু ৭ ও ৮ এন্টিবডি থাকে। দাতার লােহিত কণিকা বা কোষের কোষঝিল্লিতে উপস্থিত অ্যান্টিজেন যদি গ্রহীতার রক্তরসে উপস্থিত এমন অ্যান্টিবডির সংস্পর্শে আসে, যা উক্ত অ্যান্টিজেনের সাথে বিক্রিয়া করতে সক্ষম তাহলে, অ্যান্টিজেনঅ্যান্টিবডি বিক্রিয়া হয়ে গ্রহীতা বা রােগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে। এজন্য সব গ্রুপের র সবাইকে দেওয়া যায় না। যেমন: তােমার রক্তের গ্রুপ যদি হয় A (অর্থাৎ লােহিত কণিকার ঝিল্লিতে A অ্যান্টিজেন আছে) এবং তােমার বন্ধুর রক্তের গ্রুপ যদি B হয় (অর্থাৎ রক্তরসে a অ্যান্টিবডি আছে) তাহলে তুমি। তােমার বন্ধুকে রৰ দিতে পারবে না। যদি দাও তাহলে তােমার A অ্যান্টিজেন তােমার বন্ধুর । অ্যান্টিবডির সাথে বিক্রিয়া করে বন্ধুকে মৃত্যুর দিকে ঠলে দিতে পারে। তাই দাতার রত্র যে অ্যান্টিজেন থাকে তার সাথে মিলিয়ে এমনভাবে গ্রহীতা নির্বাচন করতে হয় যেন তার রক্সে দাতার অ্যান্টিজেনের সাথে সম্পর্কিত অ্যান্টিবডিটি না থাকে। এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে কোন গ্রুপ কাকে ন্তু দিতে পারবে বা পারবে না, তার একটা হক বানানাে যায়। সারণি: ABO পদ্ধতিতে মানুষের রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী দাতা ও গ্রহীতার তালিকা বরের গল্প | যে গ্রুপকে রু দান করতে পারে | যে গ্রুপ থেকে রু গ্রহণ করতে পারে। | A, AB A, 0. | BAB B, 0 AB AB TA, B, AB, ০। | 0 | A,B,AB,0 উপরের সারণিটি লক্ষ করলে দেখতে পারবে ০ গ্রুপের বিশিষ্ট ব্যক্তি সব গ্রুপের রক্তের ব্যক্তিকে রক্ত দিতে পারে। এদের বলা হয় সর্বজনীন রক্তদাতা (universal donor)। AB রক্তধারী ব্যক্তি যেকোনাে ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করতে পারে। তাই তাকে সর্বজনীন রক্তগ্রহীতা (universal recipient) বলা হয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে সর্বজনীন রক্তদাতা কিংবা সর্বজনীন রক্তগ্রহীতার ধারণা খুব একটা প্রযােজ্য নয়। কেননা, রক্তকে অ্যান্টিজেনের ভিত্তিতে শ্রেণিকরণ করার ক্ষেত্রে ABO পদ্ধতি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও রন্তে আরও অসংখ্য অ্যান্টিজেন থাকে, যেগুলাে ক্ষেত্রবিশেষে অসুবিধার কারণ হতে পারে। যেমন; বেসাস (Rh) ফ্যাক্টর, যা এক ধরনের অ্যান্টিজেন। কারাে রক্তে এই ফ্যাক্টর উপস্থিত থাকলে তাকে বলে পজিটিভ আর না থাকলে বলে নেগেটিভ। এটি যদি না মেলে তাহলেও গ্রহীতা বা রােগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাই ABO গ্রুপের পাশাপাশি রেসাস ফ্যাক্টরও পরীক্ষা করে মিলিয়ে দেখা চাই। অর্থাৎ রেসাস ফ্যাক্টরকে বিবেচনায় নেওয়া হলে রক্তের গ্রুপগুলাে হবে A+, A-, B+ B, AB+, AB-, 0+ এবং ০.। নেগেটিভ গ্রুপের রক্তে যেহেতু রেসাস ফ্যাক্টর অ্যান্টিজেন নেই, তাই এটি পজিটিভ গ্রুপকে দেওয়া যাবে কিন্তু পজিটিভ গ্রুপের রক্ত নেগেটিভ গ্রুপকে দেওয়া যাবে না। রুদান ও সামাজিক দায়বদ্ধতা: আঘাত, দুর্ঘটনা, শল্যচিকিৎসা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনাে কারণে অত্যধিক রক্তক্ষরণ হলে। দেহে রক্তের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য ঐ ব্যক্তির দেহে রক্ত পরিসঞ্চালনের প্রয়ােজন হয়। জরুরি ভিত্তিতে এই রন্যতা দূর করার জন্য রোগীর দেহে অন্য মানুষের রক্ত দিতে হয়। অন্যকে রক্তদান করা বর্তমানে একটি সাধারণ ঘটনা। জরুরি অবস্থায় অন্য ব্যক্তির জন্য সরাসরি বা ব্লাড ব্যাংকের মাধ্যমে সংগ্রহ করা রক্ত রােগীর দেহে প্রবেশ করানাে হয়। কোনাে ব্যক্তির শিরার মধ্য দিয়ে বাইরে থেকে অন্যের রক্ত প্রবেশ করানাের প্রক্রিয়াকে ত্ত সঞ্চালন (Blood transfusion) বলে। এটি একটি চমৎকার ফলপ্রদ ব্যবস্থা, যার ফলে রােগীর প্রাণ রক্ষা হয়। তবে কোনাে অবস্থাতেই রােগীর রক্তের গ্রুপ ও প্রকৃতি পরীক্ষা না করে এক রােগীর দেহে অন্য কোনাে ব্যক্তির বা ব্লাড ব্যাংকে রক্ষিত রক্ত প্রবেশ করানাে উচিত নয়। ব্যতিক্রম হলে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়ে রােগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে বেড়ে যায়। যেমন: রক্তকণিকাগুলাের জমাট বাঁধা, বিশ্লিষ্ট হওয়া, জন্ডিসের প্রাদুর্ভাব এবং প্রস্রাবের সাথে হিমােগ্লোবিন নির্গত হওয়া ইত্যাদি। আকস্মিক কোনাে দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়ােজন হয়। মনে রাখতে হবে, এটি আমাদের সবার জন্য একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা। যেহেতু রক্তের কোনাে বিকল্প নেই, তাই এরূপ অবস্থায় অনেক সময় প্রচুর রক্তের প্রয়ােজন হয় এবং অন্যের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে ঐ জরুরি। অবস্থা মােকাবেলা করতে হয়। এরূপ জরুরি পরিস্থিতিতে জনগণের সহযােগিতা প্রয়ােজন হয়। অন্যকে রক্তদান করা একটি মহৎ কাজ। এতে রক্তদাতার নিজের কোনাে ক্ষতি হয় না। একজন সুস্থ মানুষের দেহ থেকে 450 মিলি রক্ত বের করে দিলে তেমন কোনাে অসুবিধা হয় না। তার দেহ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় 20 লক্ষ লােহিত রক্তকণিকা সৃষ্টি করতে পারে। দেখা গেছে, কোনাে সুস্থ ব্যক্তি চার মাস পর পর রক্তদান করলে দাতার দেহে সামান্যতম কোনাে অসুবিধা হয় না। বর্তমানে রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণে নানা রকম কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। যেমন: কোনাে বিশেষ দিবসে বা বিশেষ কোনাে অনুষ্ঠানে রক্তদান কর্মসূচির আয়ােজন। এতে জনসাধারণের মাঝে রক্তদান সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ও ভীতি অনেকাংশে হ্রাস পাচ্ছে। অতীতের তুলনায় মানুষ এখন রক্তদান এবং গ্রহণ সম্পর্কে অধিক আগ্রহী ও সচেতন।

6.4 হৃৎপিণ্ডের গঠন ও কাজ



6.4.1 হৃৎপিণ্ডের গঠন



হৃৎপিণ্ড বক্ষ গহ্বরের বাম দিকে দুই ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থিত একটি ত্রিকোণাকার ফাঁপা অঙ্গ। এটি হৃৎপেশি নামক এক বিশেষ ধরনের অনৈচ্ছিক পেশি দিয়ে গঠিত। হৃৎপিণ্ড পেরিকার্ডিয়াম নামক পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। হৃৎপিণ্ড-প্রাচীরে থাকে তিনটি স্তর, বহিঃস্তর বা এপিকার্ডিয়াম, মধ্যস্তর বা মায়ােকার্ডিয়াম এবং অন্তঃস্তর বা এন্ডােকার্ডিয়াম। বহিঃস্তর (Epicardium); এটি মূলত যােজক কলা নিয়ে গঠিত। এই স্তরটিতে বিক্ষিপ্তভাৰে চৰি। থাকে এবং এটি আবরণী কলা দিয়ে আবৃত। মধ্যস্তর (Myocardium): এটি বহিঃস্তর এবং অন্তঃস্তরের মাঝখানে অবস্থান করে। দৃঢ় অনৈচ্ছিক পেশি দিয়ে এ স্তর গঠিত। অন্তঃস্তর (Endocardium): এটি সবচেয়ে ভিতরের স্তর। হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলাে অন্তঃস্তর দিয়ে আবৃত। এই স্তরটি হৃৎপিণ্ডের কপাটিকাগুলােকেও আবৃত করে রাখে। হৃৎপিণ্ডের ভিতরের স্তর ফাপা এবং চারটি প্রকোষ্ঠে বিত্ত। উপরের প্রকোষ্ঠ দুটি নিচের দুটির চেয়ে আকারে ছােট। উপরের প্রকোষ্ঠ দুটিকে ডান এবং বাম অলিন্দ (right & left atrium) বলে এবং নিচের প্রকোষ্ঠ দুটিকে ডান এবং বাম নিলয় (right | & left ventricle) বলে। অলিন্দ দুটির প্রাচীর তুলনামূলকভাবে পাতলা, আর নিলয়ের প্রাচীর পুরু। অলিন্দ এবং নিলয় যথাক্রমে আন্তঃঅলিন্দ পর্দা এবং আন্তঃনিলয় পর্দা দিয়ে পরস্পর পৃথক থাকে। হৃৎপিণ্ডের উভয় অলিন্দ এবং নিলয়ের মাঝে যে ছিদ্রপথ আছে, তা খােলা বা বন্ধ করার জন্য ভালভ (valve) বা কপাটিকা থাকে। ডান অলিন্দ এবং ডান নিলয়ের মধ্যবর্তী ছিদ্রপথ তিন পাল্লাবিশিষ্ট ট্রাইকাসপিড ভালভ দিয়ে সুরক্ষিত। একইভাবে বাম অলিন্দ এবং বাম নিলয় দুই পাগ্লাবিশিষ্ট বাইকাসপিড ভালভ (মাইট্রাল ভালভ নামেও পরিচিত) দিয়ে সুরক্ষিত থাকে। মহাধমনি ও ফুসফুসীয় ধমনির মুখে অর্ধচন্দ্রাকার কপাটিকা থাকে। এদের অবস্থানের ফলে পাম্প করা রক্ত একই দিকে চলে এবং এক ফোঁটা রক্তও উল্টো | দিকে ফিরে আসতে পারে না।

6.4.2 হৃৎপিণ্ডের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি

আমরা আগেই জেনেছি যে হৃৎপিণ্ড একটি পাম্পের মতাে কাজ করে। হৃৎপিণ্ডের সংকোচন এবং প্রসারণ দিয়ে এ কাজ সম্পন্ন হয়। হংপিণ্ডের অবিরাম সংকোচন এবং প্রসারণের মাধ্যমে সারা দেহে স্ত সংবহন পদ্ধতি অব্যাহত থাকে। হৃৎপিন্ডের সংকোচনকে বলা হয় সিস্টোল এবং প্রসারণকে বলা হয় ডায়াস্টোল। হৃৎপিণ্ডের একবার সিস্টোল-ডায়াস্টোলকে একত্রে হৃৎস্পন্দন (heart beat) বলে। | অলিন্দ দুটি প্রসারিত হলে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত হৃৎপিণ্ডে প্রবেশ করে। উর্ণ মহাশিরার। ভিতর দিয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড যুক্ত রক্ত ডান অলিন্দে প্রবেশ করে। ফুসফুসীয় বা পালমােনারি শিরার ভিতর দিয়ে অক্সিজেন যুক্ত ক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে। অলিন্দ দুটির সংকোচন হলে নিলয় দুটির পেশি প্রসারিত হয়। তখন ডান অলিন্দ-নিলয়ের ছিদ্রপথের ট্রাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড যুক্ত রক্ত ডান নিলয়ে প্রবেশ করে। ঠিক এই সময়ে বাম অলিন্দ এবং বাম নিলয়ের বাইকাসপিড ভালভ খুলে যায় তখন বাম অলিন্দ থেকে অক্সিজেন যুক্ত রন্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। এর পরপরই ছিদ্রগুলাে কপাটিকা দিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে নিলয় থেকে রক্ত আর অলিন্দে প্রবেশ করতে পারে না। যখন নিলয় দুটি সংকুচিত হয়, তখন ডান নিলয় থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত রক্ত ফুসফুসীয় ধমনির মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে। এখানে কর পরিশােধিত হয়। ঠিক একই সময়ে বাম নিলয় থেকে অক্সিজেনযুক্ত রপ্ত মহাধমনির মাধমে সারা দেহে পরিবাহিত হয় এবং উভয় ধমনির অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপটিকাগুলাে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রক্ত পুনরায় নিয়ে ফিরে আসতে পারে না। এভাবে হৃৎপিণ্ডে পর্যায়ক্রমিক সংকোচন এবং প্রসারণের ফলে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। হৃৎপিণ্ডের কাজ: রক্ত সংবহন তন্ত্রের প্রধান অঙ্গ হৃৎপিণ্ড। এর সাহায্যেই সংবহনতন্ত্রের রক্তপ্রবাহ সচল থাকে। হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলাে সম্পূর্ণ বিভক্ত থাকায় এখানে অক্সিজেনযুক্ত ও অকিজেনবিহীন রক্তের সংমিশ্রণ ঘটে না।

6.4.3 রক্তবাহিকা (Blood vessel)

যেসব নালির ভিতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত বা সঞ্চালিত হয়, তাকে রক্তনালি বা রক্তবাহিকা বলে। এসব নালিপথে হৃৎপিণ্ড থেকে দেহের বিভিন্ন অংশে রক্ত বাহিত হয় এবং দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে পুনরায় হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে। গঠন, আকৃতি এবং কাজের ভিত্তিতে রক্তবাহিকা বা রক্তনালি তিন ধরনের ধমনি, শিরা এবং কৈশিক জালিকা। (a) ধমনি (Artery) যেসব রক্তনালির মাধ্যমে সাধারণত অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে সারাদেহে বাহিত হয় তাকে ধমনি বলে। ফুসফুসীয় ধমনি এর ব্যতিক্রম। এই ব্যতিক্রমধর্মী ধমনি হৃৎপিন্ড থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত রক্ত ফুসফুসে পৌঁছে দেয়।

ধমনির প্রাচীর তিন স্তরবিশিষ্ট: (i) টিউনিকা এক্সটার্না (Tunica externa): এটি তন্তুময় যােজক কলা দিয়ে তৈরি বাইরের স্তর। (ii) টিউনিকা মিডিয়া (Tunica media); এটি বৃত্তাকার অনৈচ্ছিক পেশি দিয়ে তৈরি মাঝের স্তর। (ii) টিউনিকা ইন্টারনা (Tunica interna): এটি সরল আবরণী কলা দিয়ে তৈরি ভিতরের স্তর। ধমনির প্রাচীর পুরু ও স্থিতিস্থাপক। ধমনিতে কপাটিকা থাকে না, এর নালিপথ সরু। হৃৎপিণ্ডের প্রত্যেক সংকোচনের ফলে দেহে ছােট-বড় সব ধমনিতে রক্ত তরঙ্গের মতাে প্রবাহিত হয়। এতে ধমনিগাত্র সংকুচিত বা প্রসারিত হয়। ধমনির এই কীতি এবং সংকোচনকে নাড়িস্পন্দন বলে। ধমনির ভিতর রক্তপ্রবাহ, ধমনিগাত্রের সংকোচন, প্রসারণ এবং স্থিতিস্থাপকতা নাড়িস্পন্দনের প্রধান কারণ। হাতের কব্দির ধমনির উপর হাত রেখে নাড়িস্পন্দন অনুভব করা যায়।

(b) Fist (Vein) | যেসব নালি দিয়ে রক্ত দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে তাদের শিরা বলে। এরা ধমনির মতােই সারা দেহে ছড়িয়ে থাকে। শিরাগুলাে সাধারণত দেহের বিভিন্ন স্থানের কৈশিকনলি থেকে আরম্ভ | হয় এবং এ রকম অসংখ্য নালি একত্রে সূক্ষ্ম শিরা, উপশিরা, অতঃপর শিরা এবং মহাশিরায় পরিণত হয়ে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে। শিরার প্রাচীর ধমনির মতাে তিন স্তরবিশিষ্ট। শিরার প্রাচীর কম পুর, কম | স্থিতিস্থাপক ও কম পেশিময়। এদের নালিপথ একটু চওড়া এবং কপাটিকা থাকে। ফুসফুস থেকে | হৃৎপিণ্ডে আসা শিরাটি ছাড়া অন্য সব শিরা কার্বন ডাই-অক্সাইডসমৃদ্ধ রন্ত পরিবহন করে হৃৎপিণ্ডে নিয়ে আসে। ফুসফুসীয় শিরা অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত ফুসফুস থেকে হৃৎপিন্ডে পৌঁছে দেয়।

(e) কৈশিক জালিকা (Capillaries)। পেশিতন্তুতে চুলের মতাে অতি সূক্ষ্ম রক্তনালি দেখা যায়। একে কৈশিক জালিকা বা কৈশিক নালি বলে। | এগুলাে একদিকে ক্ষুদ্রতম ধমনি এবং অন্যদিকে ক্ষুদ্রতম শিরার মধ্যে সংযােগ সাধন করে। ফলে ধমনি শাখা-প্রশাখায় বিস্ত হয়ে ক্রমে ক্রমে সূক্ষ্ম হতে সূক্ষ্মতর কৈশিক নালিতে পরিণত হয় এবং প্রত্যেকটি কোষকে পরিবেষ্টন করে রাখে। এদের প্রাচীর অত্যন্ত পাতলা। এই পাতলা প্রাচীর ভেদ করে রক্তে দ্রবীভূত সব বস্তু ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কোষে প্রবেশ করে। একক কাজ ধমনি | শিরা কাজ: ধমনি ও শিরার মধ্যে পার্থক্য কর। | বৈশিষ্ট্য | (a) উৎপত্তি ও সমাপ্তি (b) রক্তপ্রবাহের দিক (c) রক্তের প্রকৃতি (d) প্রাচীর | (e) ভিতরের নালিপথ (f) কপাটিকা (g) অবস্থান

6.4.4 রক্তচাপ (Blood Pressure)

রক্তপ্রবাহের সময় ধমনির গায়ে যে চাপ সৃষ্টি হয়, তাকে রক্তচাপ বলে। হৃৎপিণ্ডের সংকোচন বা সিস্টোল অবস্থায় ধমনির গায়ে রক্তচাপের মাত্রা সর্বাধিক থাকে। একে সিস্টোলিক চাপ (Systolic Pressure) বলে। হৃৎপিণ্ডের (প্রকৃতপক্ষে নিলয়ের) প্রসারণ বা ডায়াস্টোল অবস্থায় রক্তচাপ সবচেয়ে কম থাকে। একে ডায়াস্টোলিক চাপ (Diastolic Pressure) বলে।

আদর্শ রক্তচাপ: চিকিৎসকদের মতে, পরিণত বয়সে একজন মানুষের আদর্শ রক্তচাপ (Blood pressure) সাধারণত 120/80 মিলিমিটার মানের কাছাকাছি। রক্তচাপকে দুটি সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়। প্রথমটি উচ্চমান এবং দ্বিতীয়টি নিম্নমান। রক্তের উচ্চ চাপকে সিস্টোলিক (Systolic) চাপ বলে যার আদর্শ মান 120 মিলিমিটারের নিচে। নিম্নচাপকে ডায়াস্টোলিক (Diastolic) চাপ বলে। এই চাপটির আদর্শ মান ৪০ মিলিমিটারের নিচে। এই চাপটি হৃৎপিণ্ডের দুটি বিটের মাঝামাঝি সময় রক্তনালিতে সৃষ্টি হয়। দুধরনের রক্তচাপের পার্থক্যকে ধমনিঘাত বা নাড়িঘাত চাপ (Pulse pressure) বলা হয়। সাধারণত সুস্থ অবস্থায় হাতের কজিতে রেট তথা হংস্পন্দনের মান প্রতি মিনিটে 60-1oo। হাতের কজিতে হালকা করে চাপ দিয়ে ধরে পালস রেট বের করা যায়। স্ফিগমােম্যানােমিটার (sphygmomanometer) বা সংক্ষেপে বিপি যন্ত্রের সাহায্যে রক্তচাপ মাপা যায়। এই যন্ত্র দিয়ে ডায়াস্টোলিক ও সিস্টোলিক চাপ দেখে রক্তচাপ নির্ণয় করা যায়।

একক কাজ কাজ; তুমি তােমার বন্ধু, ভাই, বােনের প্রতি মিনিটের নাড়িস্পন্দন গণনা কর। দৌড়ে আসার পর পুনরায় তাদের নাড়িপন্দন গণনা কর। কোনাে পরিবর্তন লক্ষ করছ কি? কেন এমন হলাে তা ব্যাখ্যা কর।

উচ্চ রক্তচাপ (High blood pressure or hypertension)। উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক হিসেবে গণ্য করা হয়। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপাের্টে বলা হয়েছে 2020 সালের মধ্যে স্ট্রোক ও করােনারি ধমনির রােগ হবে বিশ্বের এক নম্বর মরণব্যাধি এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলােতে এর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়বে মহামারী আকারে। হৃদরােগ এবং স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ হলাে উচ্চ রক্তচাপ। উচ্চ রক্তচাপ কী? রক্ত চলাচলের সময় রক্তনালিগাত্রে যে চাপ সৃষ্টি হয়, তাকে রক্তচাপ বলে। আর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তচাপকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে সাধারণত সিস্টোলিক চাপ 120 মিলিমিটার পারদের নিচে এবং ডায়াস্টোলিক চাপ ৪০ মিলিমিটার পারদের নিচের মাত্রাকে কাকিত মাত্রা হিসেবে ধরা হয়। আর এই রক্তচাপ যখন মাত্রাতিরিক্ত হয় তখনই আমরা তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে থাকি।

উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকির কারণ: বাবা বা মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তার সন্তানদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও যারা স্নায়বিক চাপে (Tension) বেশি ভােগেন অথবা ধূমপানের অভ্যাস আছে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। দেহের ওজন বেশি বেড়ে গেলে কিংবা লবণ এবং চর্বিযুক্ত খাদ্য বেশি খেলে এমনকি পরিবারের সদস্যদের ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরলের পূর্ব ইতিহাস থাকলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। সন্তান প্রসবের সময় খিচুনি রােগের (Eclampsia) কারণে মায়ের রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ: মাথাব্যথা, বিশেষ করে মাথার পেছন দিকে ব্যথা করা উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক লক্ষণ। এছাড়া রােগীর মাথা ঘােরা, ঘাড় ব্যথা করা, বুক ধড়ফড় করা ও দুর্বল বােধ করাও উচ্চরক্তচাপের লক্ষণ। অনেক সময় রােগীর নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীর ভালাে ঘুম হয় না এবং অল্প পরিশ্রমে তারা হাঁপিয়ে ওঠে। ভয়ের ব্যাপার হলাে, প্রায় 50% ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ হলে কোনাে লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তখন স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই।

রুস্তচাপ নির্ণয় করা: রক্তচাপ মাপক যন্ত্ৰ ৰা বিপি যন্তু দিয়ে চাপ মাপা হয়। চাপ মাপার শুরুতে রােগীকে কয়েক মিনিট নিরিবিলি পরিবেশে শান্তভাবে সােজা হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। কমপক্ষে 15 থেকে 20 মিনিটের ব্যবধান রেখে রক্তচাপ নির্ণয় করা ভালাে। | একক কাজ কাজ: রক্তচাপ মাপার কৌশল আয়ত্ত করে তােমার বন্ধুদের রক্তচাপ নিচের ছকে উপস্থাপন কর। শিক্ষার্থীর নাম | রক্তচাপ (সিস্টোল/ডায়াস্টোল) | মন্তব্য ।

উচ্চ রক্তচাপের প্রতিকার: উচ্চ রক্তচাপের প্রতিকারে টাটকা ফল এবং শাক-সবজি খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে শারীরিক পরিশ্রম করা বা ব্যায়াম করা প্রয়ােজন। চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা ছাড়াও খাবারের সময় অতিরিক্ত লবণ (কাঁচা লবণ) খাওয়া উচিত নয়। ধূমপান ত্যাগ করা জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটতে পারে, যা স্ট্রোক নামে পরিচিত। কর্মতৎপরতা, স্বাস্থ্য, বয়স এবং রােগের কারণে মানুষের রক্তচাপের মাত্রা কমবেশি হতে পারে। মােটা লোেকদের ওজন কমানাে, চর্বিজাতীয় খাদ্য কম খাওয়া, খাবারে কম লবণ দেওয়া ইত্যাদি নিয়ম মেনে চললে উচ্চ রক্তচাপ এড়ানাে যায়। রক্তচাপ খুব বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়িমিত ঔষধ সেবন করা উচিত।

6.4.5 কোলেস্টেরল (cholesterol)

কোলেস্টেরল হাইড্রোকার্বন কোলেস্টেইন (Cholestane) থেকে উৎপন্ন একটি যৌগ। উচ্চশ্রেণির প্রাণিজ কোষের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কোলেস্টেরল লিপােপ্রােটিন নামক যৌগ সৃষ্টির মাধ্যমে ররে প্রবাহিত হয়। রক্তে তিন ধরনের লিপােপ্রােটিন দেখা যায়।

(a) LDL (Low Density Lipoprotein): একে খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয়, কারণ এটি হৃদ্‌রােগের ঝুঁকি বাড়ায়। সাধারণত আমাদের রক্তে 70% LDL থাকে। ব্যক্তিবিশেষে এই পরিমাপের পার্থক্য দেখা যায়।

(b) HDL (High Density Lipoprotein): একে সাধারণত ভালাে কোলেস্টেরল বলা হয়। এটি হৃদ্‌রােগের ঝুঁকি কমায়। (e) ট্রাইগ্লিসারাইড (Tyglyceride): এই কোলেস্টেরল চর্বি হিসেবে রক্তের প্লাজমায় অবস্থান করে। ট্রাইগ্লিসারাইড আমাদের খাদ্যের প্রাণিজ চর্বি অথবা কার্বোহাইড্রেট থেকে তৈরি হয়ে থাকে। নিচের সারণিতে রক্তে কোলেস্টেরলের আদর্শ মান দেখানাে হলাে। | কোলেস্টেরলে প্রকার | মিলিমােল/লিটার। LDL 1.৪ HDL | 15 | ট্রাইগ্লিসারাইড | <1,7। অধিক মাত্রার কোলেস্টেরল উপস্থিত এমন খাদ্যের মধ্যে মাখন, চিংড়ি, ঝিনুক, গবাদিপশুর যকৃৎ, ডিম, বিশেষ করে ডিমের কুসুম উল্লেখযােগ্য। রর উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা: দেহের অন্যান্য অঙ্গের মতাে হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেন এবং খাদ্যসার সরবরাহের প্রয়ােজন হয়। হৃৎপিণ্ডের করােনারি ধমনিগাত্রে চর্বি জমা হলে ধমনিতে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহে বিম ঘটে, ফলে হৃৎপিণ্ড পর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং খাদ্যসার না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার কারণে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। এ অবস্থাকে অ্যানজিনা (Angina) বলা হয়। এছাড়া ধমনির গায়ে বেশি চর্বি জমা হলে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় ফলে করােনারি হৃদ্‌রােগের আশঙ্কা অনেকগুণ বেড়ে যায়।

কোলেস্টেরলের কাজ: উপকারিতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি
কোলেস্টেরল কোষপ্রাচীর তৈরি এবং রক্ষার কাজ করে। প্রতিটি কোষের ভেন্যতা (Perrmeability) নির্ণয় করে বিভিন্ন দ্রব্যাদি কোষে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে। মানবদেহের জনন হরমােন এনড্রোজেন ও | ইস্ট্রোজেন তৈরিতে সাহায্য করে। অ্যাডরেনাল গ্রন্থির হরমােন ও পিত্তরস তৈরিতে কোলেস্টেরলের | বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কোলেস্টেরল পিত্ত তৈরি করে। সূর্যালােকের উপস্থিতিতে চামড়ার কোলেস্টেরল থেকে ভিটামিন 'ডি' তৈরি হয়, যা রক্তের মাধ্যমে কিডনিতে গিয়ে ভিটামিন 'ডি'র কার্যকর রূপে পরিণত হয় এবং আবার রক্তে ফিরে আসে। কোলেস্টেরল মাত্রা দেহের চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনকে (এ, ডি, ই এবং কে) বিপাকে সহায়তা করে। স্নায়ুকোষের কার্যকারিতার জন্য কোলেস্টেরল প্রয়ােজন। দেহের রােগ। | প্রতিরােধ ব্যবস্থার সাথে কোলেস্টেরল ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। গবেষণায় প্রমাণিত যে রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল হৃৎপিণ্ড এবং রক্ত সংবহনের বিশৃঙ্খলার সাথে জড়িত। কোলেস্টেরল পিত্তরসের অন্যতম উপাদান হলেও একটি একটি বর্জ্য পদার্থ এবং যকৃতের মাধ্যমে দেহ থেকে অপসারিত হয়। পিত্তরসে কোলেস্টেরােলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা তলানির মতাে পিত্তথলিতে জমা হয়। কোলেস্টেরলের এ তলানিই শক্ত হয়ে পিত্তথলির পাথর (Gallbladder stone) নামে পরিচিত হয়। উল্লেখ্য, কোলেস্টেরল ছাড়াও পিত্ত, ফসফেট, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি জমেও পিত্তথলির পাথর হতে পারে।

6.4.6 অস্থিমজ্জা ও রক্তের অস্বাভাবিক অবস্থা:

লিউকেমিয়া (Leukemia) ভণ অবস্থায় যকৃৎ এবং প্লীহায় লােহিত রক্ত কণিকা উৎপন্ন হয়। শিশুদের জন্মের পর থেকে লাল অস্থিমজ্জা হতে লােহিত কণিকা উৎপন্ন শুরু হয়। এগুলাে প্রধানত দেহে 0, সরবরাহের কাজ করে। যদি কোনাে কারণে অস্বাভাবিক শ্বেত কণিকার বৃদ্ধি ঘটে তাহলে রােগের লক্ষণগুলাে প্রকাশ পায়। তখন অস্থিমজ্জা অত্যধিক হারে শ্বেত রক্তকোষ উৎপাদন করার কারণে পরােক্ষভাবে লােহিত রক্তকোষ এবং অণুচক্রিকার উৎপাদন কমে যেতে পারে। লিউকেমিয়াকে রক্তের ক্যান্সার বলা হলেও এটি আসলে কান্ত উৎপাদন ব্যবস্থার অস্বাভাবিকতাজনিত একটি রােগ এবং এতে প্রধানত যে অঙ্গটি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তা হলাে অস্থিমজ্জা। লােহিত রক্তকোষের অভাবে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়, যার ফলে রােগী দুর্বল বােধ করে, ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট হয়। অণুচক্রিকার অভাবে রক্ত জমাট বাঁধতে না পারার কারণে দাঁতের গােড়া ও নাকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক সময় কোনাে আঘাত ছাড়াই অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয়। একই কারণে দেহত্বকে ছােট ছােট লাল বর্ণের দাগ দেখা দিতে পারে এবং পায়ের গিটে ব্যথা হয়ে ফুলে উঠতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শ্রেণিবিভাগ অনুসারে অর্ধশতাধিক প্রকারের লিউকেমিয়া আছে, যার বেশির ভাগেই শ্বেত রক্তকোষের আধিক্য দেখা যায়। কিন্তু অধিক হারে শ্বেত রক্তকোষ উৎপন্ন হলেও সেগুলাে আসলে ক্যান্সার কোষ এবং শ্বেতকোষের স্বাভাবিক কাজ, রােগ প্রতিরােধে অক্ষম। তাই লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি সহজেই বিভিন্ন রােগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হন। রােগ প্রতিরােধ ব্যবস্থার অস্বাভাবিকতার কারণে দীর্ঘমেয়াদি জ্বর হতে পারে এবং লসিকা গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। এভাবে রক্তের তিন ধরনের কোষের প্রায় প্রতিটিরই স্বাভাবিক কাজ ঠিকমতাে না করতে পারা এ রােগের লক্ষণ। তবে লিউকেমিয়ার প্রকারভেদ অনুসারে লক্ষণের তারতম্য হতে পারে। চিকিৎসা : বর্তমানে প্রাথমিক অবস্থায় এ রােগ নির্ণয় করা গেলে এবং রােগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে এ রােগ নিরাময় করা সম্ভব। সাধারণত ক্যান্সার কেমােথেরাপি এবং অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এ রােগের চিকিৎসা করা হয়, অবশ্য প্রকারভেদ অনুসারে চিকিৎসার ভিন্নতা রয়েছে। একসময় লিউকেমিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। তবে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব এবং দেশের বহু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ক্যান্সার কেমােথেরাপির ব্যবস্থা আছে।

6.5 রক্ত সংবহনতন্ত্রের কয়েকটি রােগ ও প্রতিকার



(a) হার্ট অ্যাটাক

যখন কারও হৃদযন্ত্রের কোনাে অংশে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় কিংবা বাধাগ্রস্ত হয়, তখন হৃৎপিণ্ডের কোষ কিংবা হৃৎপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে মায়ােকারডিয়াল ইনফ্রাকশন, করােনারি গ্ৰোমৰসিস ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হয়, যেগুলােকে একনামে হার্ট অ্যাটাক নামে ডাকা হয়। বাংলাদেশে হৃদরােগ, বিশেষ করে করােনরি (coronary) হৃদ্‌রােগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। হৃৎপিণ্ড রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন এবং খাবারের সারবস্তু অর্থাৎ পুষ্টিকর পদার্থ রক্তনালির মধ্য দিয়ে দেহের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়। নিজের কাজ সঠিকভাবে করার জন্য অর্থাৎ তার হৃৎপেশির অক্সিজেন এবং পুষ্টি অর্জনের জন্য হৃৎপিণ্ডের তিনটি প্রধান রক্তনালি আছে। এগুলাের মধ্যে অনেক সময় চর্বি জমে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ফলে প্রাণঘাতী রােগ হার্ট অ্যাটাক হয়। বর্তমান সময়ে হার্ট অ্যাটাকে শুধু 40-60 বছর বয়সী লােকেরাই আক্রান্ত হচ্ছে না, অনেক সময়ে তরুণরাও এ রােগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ রােগের সাথে দেহের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত থাকলে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস যেমন অধিক তেলযুক্ত খাবার (বিরিয়ানি, তেহারি ইত্যাদি), ফাস্টফুঞ্জ (বার্গার, বিফ বা চিকেন প্যাটিস ইত্যাদি) খাওয়া, অলস জীবনযাপন এবং শারীরিক পরিশ্রম না করার ফলে এই বােগ দেখা যায়। এ ছাড়াও সব সময় হতাশা, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও বিমর্ষ থাকায় যেকোনাে বয়সে এই রােগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। রােগের লক্ষণসমূহ: হার্ট অ্যাটাক হলে বুকে অসহনীয় ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষ করে বুকের মাঝখানে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হয় যা, প্রাথমিকভাবে এন্টাসিড ঔষধ খেলেও কমবে না। ব্যথা বাম দিকে বা সারা বুকে ছড়িয়ে যেতে পারে। ব্যথা অনেক সময় গলা এবং বাম হাতে ছড়িয়ে যায়। রােগী প্রচণ্ডভাবে ঘামতে থাকে এবং বুকে ভারি চাপ অনুভব করছে বলে মত প্রকাশ করে। রােগীর যদি আগে থেকে ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে তার বুকে কোনাে ব্যথা ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাই রােগী কিছু বুঝে ওঠার আগেই সর্বনাশ হয়ে যায়। এজন্য ডায়াবেটিস রোগী কোনাে অসুবিধা বোধ না করলেও নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চেক-আপ করাতে হবে। প্রতিকার; এমন অবস্থা দেখা দিলে অবহেলা না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইসিজি করিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার। করােনারি হৃদরােগ এক মারাত্মক হৃদ্‌রােগ। এ রােগ থেকে বাঁচতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার, যাতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যেমন: ধূমপান না করা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা বা হাটা, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা, কাঁচা ফল ও শাকসবজি বেশি বেশি খাওয়া। চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়া, ভাজা খাবার, মশলাযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড না খাওয়া ইত্যাদি।

(b) বাতজ্বর (Rheumatic Fever)

স্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococcus) অণুজীবের সংক্রমণে সৃষ্ট শ্বাসনালির প্রদাহ, ফুসকুড়িযুক্ত সংক্রামক জর, টনসিলের প্রদাহ অথবা মধ্যকর্ণের সংক্রামক রােগ বাতজ্বরের উল্লেখযােগ্য লক্ষণ। সাধারণত শিশুকালেই এ রােগের আক্রমণ শুরু হয় এবং দেহের অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, বিশেষ করে হৃৎপিণ্ড আক্রান্ত হয়। হৃৎপিণ্ড যদি এ রােগে পূর্ণভাবে আক্রান্ত নাও হয়, হৃৎপেশি এবং হৃৎপিণ্ডের কপাটিকা বা ভালভ অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে হৃৎপিন্ড যথাযথভাবে রুর পাম্প করতে সক্ষম হয় না এবং দেহে রর প্রবাহের পরিমাণ কমে যায়। শুরুতেই রােগটি নির্ণীত না হলে বা সঠিক চিকিৎসা না হলে পরে রােগের প্রকোপ বেড়ে গেলে ওজন হাস, রক্তস্বল্পতা, ক্লান্তি, ক্ষুধামান্দ্য, চেহারায় ফ্যাকাশে ভাব ইত্যাদি দেখা দেয় এবং রােগের উপস্থিতি অগ্রাহ্য করার আর উপায় থাকে না। পরবর্তী সময়ে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, ফুলে যাওয়া এবং ত্বকে লালচে রঙ দেখা দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এ রােগ শনাক্ত করা গেলে পেনিসিলিন জাতীয় ঔষধ যথাযথভাবে প্রয়ােগে এ রােগের সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। অনেক চিকিৎসক আক্রান্ত ছেলেমেয়েদের প্রাপ্ত বয়সে না পৌছানাে পর্যন্ত নিয়মিতভাবে পেনিসিলিন খাবার পরামর্শ দেন।

হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখার উপায়: মানুষ পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে থেকেই তার হৃৎপিণ্ড কাজ করা শুরু করে এবং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত নির্দিষ্ট গতিতে চলতে থাকে। মানুষের বাঁচা-মরায় হৃদ্যন্ত্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হৃদ্যন্ত সুস্থ রাখার জন্য সঠিক জীবনধারা (lifestyle) এবং খাদ্য নির্বাচনের প্রয়ােজন রয়েছে। নানা ধরনের তেল বা চর্বিজাতীয় খাদ্য হৃদ্যন্ত্রের কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। রক্তের কোলেস্টেরল হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে হৃদ্‌যন্ত্রের ক্ষতি করে থাকে। মাদক সেবন ও নেশা করলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াও হৃৎস্পন্দন সাধারণ মান থেকে বৃদ্ধি পায়। ফলে মাদকসেবী কিছুটা মানসিক আনন্দ এবং প্রশান্তি পেলেও তার হৃদ্যন্ত্রের অনেক ক্ষতি হয়। সিগারেটের তামাক অথবা জর্দার নিকোটিনের বিষক্রিয়া শরীরের অন্য অংশের মতাে হৃৎপেশির ক্ষতি করে। সঠিক খাদ্য নির্বাচনের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখা যায়। মেদ সৃষ্টিকারী খান যেমন তেল, চর্বি, অতিরিক্ত শর্করা পরিহার এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ, প্রতিদিন পরিমিত ব্যায়াম এবং হাঁটা-চলার মাধ্যমে সুস্থ জীবন লাভ করা যায়।

অনুশীলনী। সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
1. প্রস্বেদন কী?
2. ব্যাপন কাকে বলে?
3, রক্তকণিকা কত প্রকার ও কী কী? |
4. ধমনির কাজ কী?
5. রক্তচাপ বলতে কী বােঝায়?

3) রচনামূলক প্রশ্ন
1. হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখার উপায় বর্ণনা কর।
2. চিত্রসহ পানি শােষণ প্রক্রিয়ার বর্ণনা দাও।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
1. হৃৎপিণ্ডকে আবৃতকারী পর্দার নাম কী?
ক. এপিকার্ডিয়াম
খ. মায়ােকার্ডিয়াম
গ, পেরিকার্ডিয়াম
ঘ, এন্ডােকার্ডিয়াম

2. আরাফাত পায়েস খাওয়ার সময় টসটসে কিশমিশ দেখতে পেল। এক্ষেত্রে কিশমিশ টসটসে হওয়ার কারণ কী?
ক. ব্যাপন
খ, শােষণ
প, অভিস্রবণ।
ঘ. ইমবাইবিশন নিচের উদ্দীপকটি লক্ষ কর এবং 3 ও 4 নং প্রশ্নের উত্তর দাও। নাম। রক্তের গ্রুপ B রাফিন তামিম তাসমিয়া। রাতুল। AB।

3. সর্বজনীন রক্তদাতা বা গ্রহীতার ধারণা যদিও বর্তমানে খুব একটা প্রযােজ্য নয়, তবু উক্ত ধারণা। অনুসারে তাত্ত্বিক বিবেচনায় রাফিনের রক্তের প্রয়ােজন হলে কার নিকট থেকে রক্ত নিতে পারবে?
ক, তামিম
খ, তাসমিয়া
গ. রাতুল
ঘ, তামিম ও রাতুল

4. তাসমিয়া –
(i) রক্তে A, B অ্যান্টিজেন বহন করে
(ii) রাফিনকে রক্ত দান করতে পারবে
(iii) তামিমের রক্ত গ্রহণ করতে পারবে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) i ও ii
খ) i ও iii
গ) ii ও ii
ঘ) i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন।
ক, বৈষম্যভেদ্য পর্দা কী?
খ. ইমবাইবিশন বলতে কী বুঝ?
গ, চিত্রে s উপাদানটির অনুপস্থিতি প্রক্রিয়াটিতে কীরুপ প্রভাব পড়বে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. চিত্রে X উপাদানটি যদি Y অঞ্চলে না পৌঁছায়, তাহলে উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কী সমস্যা দেখা দিবে বিশ্লেষণ কর।

2. হাসান সাহেবের বয়স 50। তিনি একটি আর্থিক ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। কিছুদিন যাবৎ তিনি মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড় এবং অস্থিরতা ভাব অনুভব করছেন। অন্যদিকে তার 7 বছর বয়সী মেয়ে মুনের গিটে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, ত্বকে লালচে ভাব দেখা যাচ্ছে। তারা দুজন ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়ােজনীয় পরামর্শ দেন।
ক, রক্ত কী?
খ. শ্বেতকণিকা কীভাবে দেহকে রক্ষা করে? বুঝিয়ে লেখ।
গ. হাসান সাহেবের সমস্যাগুলোর কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যা দুটির মধ্যে কোনটি অনিরাময়যােগ্য যুক্তিসহ ব্যাখ্যা কর।




প্রধান শব্দভিত্তিক সারসংক্ষেপ



♦ জীববৈচিত্র্য : জীবের জিনগত, প্রজাতিগত ও পরিবেশগত বৈচিত্র্যকে একসঙ্গে জীববৈচিত্র্য বলা হয়।