আগের শ্রেণিতে তােমরা জীবকোষ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলে। সেই সব ধারণার উপর ভিত্তি করে তােমরা এই অধ্যায়ে জীবকোষ সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানতে পারবে। সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রে | দেখা একটি জীবকোষ আর ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা ঐ একই জীবকোষের গঠন কি এক রকম? | এই অধ্যায়ে তােমরা এই ধরনের প্রশ্নগুলাের উত্তরগুলোও খুঁজে পাবে।
এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা:
♦ উদ্ভিদ ও প্রাণিকোষের প্রধান অঙ্গাণুর কাজ ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦ উদ্ভিদ ও প্রাণিকোষের তুলনা করতে পারব।
♦ স্নায়ু, পেশি, রক্ত, ত্বক এবং অস্থির কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে বিভিন্ন প্রকার কোষের ভূমিকা বর্ণনা করতে পারব।
♦ জীবদেহে কোষের উপযােগিতা মূল্যায়ন করতে পারব।
♦ উদ্ভিদ টিস্যু ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦ প্রাণি টিস্যু ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦ একই রকম কোষ সমষ্টির ও একই কাজ সম্পন্ন করার ভিত্তিতে টিস্যুর কাজ মূল্যায়ন করতে পারব।
♦ টিস্যু, অঙ্গ এবং তন্ত্রে কোষের সংগঠন ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦ টিস্যুতন্ত্রের কাজ ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦ অঙ্গ ও অঙ্গতন্ত্রের ধারণা এবং গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে উদ্ভিদকোষ (পেঁয়াজ) ও প্রাণিকোষ (প্রােটোজোয়া) পর্যবেক্ষণ করে চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন করতে পারব।
♦ উদ্ভিদ ও প্রাণিটিস্যুর চিত্র অঙ্কন করে চিহ্নিত করতে পারব।
সঠিকভাবে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করতে পারব।
♦ জীবের নানা কার্যক্রমে কোষের অবদান অনুধাবন করতে পারব।
2.1 জীবকোষ
আগের শ্রেণিতে তােমরা জেনেছ যে জীবকোষ হচ্ছে জীবদেহের একক। এই জীবকোষ কী? কোনাে কোনাে বিজ্ঞানী জীবকোষকে জীবদেহের গঠন ও জীবজ ক্রিয়াকলাপের একক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। লােয়ি (Loewy) এবং সিকেভিজ (Siekevitz) 1969 সালে বৈষম্য ভেদ্য (selectively permeable) পর্দা দিয়ে আবৃত এবং জীবজ ক্রিয়াকলাপের একক যা অন্য সজীব মাধ্যম ছাড়াই নিজের প্রতিরূপ তৈরি। করতে পারে, এমন সত্তাকে কোষ বলেছেন।
কোষের প্রকারভেদ সকল জীবকোষ এক রকম নয়। এদের মধ্যে গঠনগত পার্থক্য যেমন আছে তেমনই আছে আকৃতি ও কাজের পার্থক্য। নিউক্লিয়াসের গঠনের ভিত্তিতে কোষ দুই ধরনের, আদি কোষ এবং প্রকৃত কোষ।
(a) আদিকোষ বা প্রাককেন্দ্রিক কোষ (Prokaryotic cell): এ ধরনের কোষে কোনাে সুগঠিত নিউক্লিয়াস (nucleus) থাকে না। এ জন্য এদের আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষও বলা হয়। এসব কোষের নিউক্লিয়াস কোনাে পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে না, তাই নিউক্লিও-বস্তু সাইটোপ্লাজমে ছড়ানাে থাকে। এসব কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড, এন্ডােপ্লাজমিক রেটিকুলাম ইত্যাদি। অঙ্গাণু থাকে না তবে রাইবােজোম থাকে। ক্রোমােজোমে কেবল DNA থাকে। নীলাভ সবুজ শৈবাল বা । ব্যাকটেরিয়ায় এ ধরনের কোষ পাওয়া যায়।
(b) প্রকৃত কোষ বা সুকেন্দ্রিক কোষ (Eukaryotic cell): এসব কোষের নিউক্লিয়াস সুগঠিত অর্থাৎ নিউক্লিয়ার ঝিল্পি (nuclear membrane) দিয়ে নিউক্লিও-বস্তু পরিবেষ্টিত ও সুসংগঠিত। এসব কোষে রাইবােজোমসহ সকল অঙ্গাণু উপস্থিত থাকে। ক্রোমােজোমে DNA, প্রােটিন, হিস্টোন এবং অন্যান্য উপাদান থাকে। অধিকাংশ জীবকোষ এ ধরনের হয়। কাজের ভিত্তিতে প্রকৃত কোষ দুই ধরনের, দেহকোষ এবং জননকোষ।
দেহকোষ (Somatic cell): বহুকোষী জীবের দেহ গঠনে এসব কোষ অংশগ্রহণ করে। মাইটোসিস পদ্ধতিতে বিভাজনের মাধ্যমে দেহকোষ বিভাজিত হয় এবং এভাবে দেহের বৃদ্ধি ঘটে। বিভিন্ন তন্ত্র ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনে দেহকোষ অংশ নেয়।
জননকোষ (Gametic cell): যৌন প্রজনন ও জনঃক্রম দেখা যায়, এমন জীবে জননকোষ উৎপন্ন হয়। মিয়ােসিস পদ্ধতিতে জনন মাতৃকোষের বিভাজন ঘটে এবং জনন কোষ উৎপন্ন হয়। অপত্য জননকোষে ক্রোমােজোম সংখ্যা মাতৃজনন কোষের ক্রোমােজোম সংখ্যার অর্ধেক থাকে। পুং ও স্ত্রী জননকোষ মিলিত হয়ে নতুন জীবের দেহ গঠনের সূচনা করে। পুং ও স্ত্রী জননকোষের মিলনের ফলে সৃষ্ট এই প্রথম | কোষটিকে জাইগােট (Zygote) বলে। জাইগােট বারবার বিভাজনের মাধ্যমে জীবদেহ গঠন করে।
2.2 উদ্ভিদ ও প্রাণিকোষের প্রধান অশাণু এবং তাদের কাজ
উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদ ও প্রাণীরা সকলেই প্রকৃত কোষী। প্রতিটি কোষ কতগুলাে অঙ্গাণু নিয়ে তৈরি হয়।
এসব অণুৱ অধিকাংশই উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়ের কোষে থাকলেও কিছু অঙ্গাণু আছে, যা কেবল উদ্ভিদকোষে অথবা কেবল প্রাণিকোষে পাওয়া যায়। ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা যায়, এমন কিছু কোষ অঙ্গাণুর সাথে এবার আমরা পরিচিত হব।
কোষপ্রাচীর (cell wall) কোষপ্রাচীর উদ্ভিদ কোষের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এটি মৃত বা জড়বস্তু দিয়ে তৈরি। প্রাণিকোষে কোষপ্রাচীর থাকে না। কোষপ্রাচীরের রাসায়নিক গঠন বেশ জটিল, এতে সেলুলােজ, হেমিসেলুলােজ, লিগনিন, পেকটিন, সুবেরিন নামক রাসায়নিক পদার্থ থাকে। তবে ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীর প্রােটিন, লিপিড ও পলিস্যাকারাইড দিয়ে এবং ছত্রাকের কোষপ্রাচীর কাইটিন দিয়ে তৈরি। প্রাথমিক কোষপ্রাচীরটি একস্তরবিশিষ্ট। মধ্য পর্দার উপর প্রােটোপ্লাজম থেকে নিঃসৃত কয়েক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য জমা হয়ে ক্রমশ গৌণপ্রাচীর সৃষ্টি হয়। এ প্রাচীরে মাঝে মাঝে ছিদ্র থাকে, যাকে কূপ বলে। কোষপ্রাচীর কোষকে দৃঢ়তা প্রদান করে, কোষের আকার ও আকৃতি বজায় রাখে। পাশের কোষের সাথে প্লাজমােডেজমাটা (আণুবীক্ষণিক নালি) সৃষ্টির মাধ্যমে যােগাযােগ রক্ষা করে এবং পানি ও খনিজ লবণ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রোটোপ্লাজম কোষের ভিতরে যে অর্ধস্বচ্ছ, থকথকে জেলির মতাে বস্তু থাকে তাকে প্রােটোপ্লাজম বলে। কোষঝিল্লি দিয়ে ঘেরা সবকিছুই প্রােটোপ্লাজম, এমনকী কোষঝিল্লি নিজেও প্রােটোপ্লাজমের অংশ। কোষঝিল্লী ছাড়াও এখানে আছে সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুগুলাে এবং নিউক্লিয়াস।
2.2.1 কোষঝিল্লি (Plasmalemma):
প্রােটোপ্লাজমের বাইরে দুই স্তরের যে স্থিতিস্থাপক পর্দা থাকে, তাকে কোষঝিল্লি বা প্লাজমালেমা বলে। কোষঝিল্লির ভাঁজকে মাইক্রোভিলাই বলে। এটি প্রধানত লিপিড এবং প্রােটিন দিয়ে তৈরি। কোষঝিল্লি একটি বৈষম্যভেদ্য পর্দা হওয়ায় অভিস্রবণের মাধ্যমে পানি ও খনিজ লবণ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে এবং পাশাপাশি কোষগুলােকে পরস্পর থেকে আলাদা করে রাখে।
প্রােটোপ্লাজম থেকে নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রিকাটিকে সরিয়ে দিলে যে জেলির মত ছুটি থেকে যায় সেটিই সাইটোপ্লাজম। এই সাইটোপ্লাজমের মধ্যে অনেক ধরনের অঙ্গাণু থাকে। এদের প্রত্যেকের কাজ আলাদা হলেও একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এই অঙ্গাণুগুলাে কোনাে কোনােটি ঝিল্লিযুক্ত আবার কোনাে কোনােটি ঝিল্লিবিহীন। অঙ্গাণুগুলাে হচ্ছে:
ঝিল্লিযুক্ত সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু:
(a) মাইটোকন্ড্রিয়া (Mitochondria)
শ্বসনে অংশগ্রহণকারী এ অঙ্গাণুটি 1898 সালে বেনডা (Benda) আবিষ্কার করেন। এটি দুই স্তরবিশিষ্ট আবরণী বা ঝিল্লি দিয়ে ঘেরা। ভিতরের স্তরটি ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে থাকে। এদের ক্রিস্টি (cristae) বলে। ক্রিস্টির গায়ে বৃন্তযুক্ত গােলাকার বস্তু থাকে, এদের অক্সিজোম (oxisormes) বলে। অক্সিজোমে উৎসেচকগুলাে (enzymes) সাজানাে থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়নের ভিতরে থাকে ম্যাট্রিক্স (matrix)। জীবের শ্বসনকার্যে সাহায্য করা মাইটোকন্ড্রিয়ার প্রধান কাজ। তােমরা পরে দেখবে যে শ্বসন ক্রিয়ার ধাপ চারটি; গ্লাইকোলাইসিস, অ্যাসিটাইল কো-এ সৃষ্টি, ক্রেবস চক্র এবং ইলেকট্রন প্রবাহ তন্ম। এর প্রথম
ধাপ (গ্লাইকোলাইসিসের বিক্রিয়াগুলাে) মাইটোকন্ড্রিয়ায় ঘটে না। তবে দ্বিতীয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ক্রেবস চক্রের বিক্রিয়াগুলাে এই অঙ্গণুর মধ্যেই সম্পন্ন হয়। ক্রেবস চক্রে অংশগ্রহণকারী সব উৎসেচক এতে উপস্থিত থাকায় এ বিক্রিয়াগুলাে মাইটোকন্ড্রিয়াতেই সম্পন্ন হয়। তােমরা দেখবে, ক্রেবস চক্রে সবচেয়ে বেশি শক্তি উৎপাদিত হয়। এ জন্য মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র বা পাওয়ার হাউস বলা হয়। এই শক্তি জীব তার বিভিন্ন কাজে খরচ করে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সকল উদ্ভিদকোষ ও প্রাণিকোষে মাইটোকন্ড্রিয়া পাওয়া যায়। প্রাককেন্দ্রিক কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে না। এমনকি কিছু সুকেন্দ্রিক কোষেও (যেমন: 'Trichomonas, Monocercomonoides ইত্যাদি প্রােটোজোয়াতে) মাইটোকন্ড্রিয়া অনুপস্থিত। তাহলে এমন কি হতে পারে যে বিবর্তনীয় ইতিহাসের কোনাে এক সময়ে সুকেন্দ্রিক কোষের ভিতর মাইটোকন্ড্রিয়া (কিংবা তার পূর্বসূরী) ঢুকে পড়েছিল এবং তারপর থেকে সেটি কোষের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছে? এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে এই ব্যাখ্যাটিই অনুমান করা হয়।
(b) প্লাস্টিড (Plastid) প্লাস্টিড উদ্ভিদ কোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু। প্লাস্টিডের প্রধান কাজ খাদ্য প্রস্তুত করা, খাদ্য সঞ্চয় করা এবং উদ্ভিদদেহকে বর্ণময় এবং আকর্ষণীয় করে পরাগায়নে সাহায্য করা। প্লাস্টিড তিন ধরনের | ক্লোরােপ্লাস্ট, ক্রোমােপ্লাস্ট এবং লিউকোপ্লাস্ট।
() ক্লোরােপ্লাস্ট (chloroplast); সবুজ রঙের প্লাস্টিডকে ক্লোরােপ্লাস্ট বলে। পাতা, কচি কাণ্ড ও অন্যান্য সবুজ অংশে এদের পাওয়া যায়। প্লাস্টিডের গ্রানা (grana) অংশ সূর্যালােককে আবদ্ধ করে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। এই আবদ্ধ সৌরশক্তি স্ট্রোমাতে (stroma) অবস্থিত উৎসেচক
সমষ্টি, বায়ু থেকে গৃহীত কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং কোষের ভিতরকার পানি ব্যবহার করে সরল শর্করা তৈরি করে। এই প্লাস্টিডে ক্লোরােফিল থাকে, তাই এদের সবুজ দেখায়। এছাড়া এতে ক্যারােটিনয়েড নামে এক ধরনের রঞ্জকও থাকে।
(i) ক্রোমােপ্লাস্ট (chromoplast): এগুলাে রঙিন প্লাস্টিড তবে সবুজ নয়। এসব প্লাস্টিডে জ্যাস্থফিল, ক্যারােটিন, ফাইকোএরিথ্রিন, ফাইকোসায়ানিন ইত্যাদি রঞ্জক থাকে, তাই কোনােটিকে হলুদ, কোনােটিকে নীল আবার কোনােটিকে লাল দেখায়। এদের মিশ্রণজনিত কারণে ফুল, পাতা এবং উদ্ভিদের অন্যান্য অংশ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। রঙিন ফুল, পাতা এবং গাজরের মূলে এদের পাওয়া যায়। ফুলকে আকষণীয় করে পরাগায়নে সাহায্য করা এদের প্রধান কাজ। এরা বিভিন্ন ধরনের রগক পদার্থ সংশ্লেষণ করে জমা করে রাখে।
(iii) লিউকোপ্লাস্ট (Leucoplast): যেসব প্লাস্টিডে কোনাে রঞ্জক পদার্থ থাকে না, তাদের লিউকোপ্লাস্ট বলে। যেসব কোষে সূর্যের আলাে পৌছায় না, যেমন মূল, ভ্রুণ, জননকোষ ইত্যাদি সেখানে এদের পাওয়া যায়। এদের প্রধান কাজ খাদ্য সঞ্চয় করা। আলাের সংস্পর্শে এলে লিউকোপ্লাস্ট ক্লোরােপ্লাস্টে রূপান্তরিত হতে পারে।
একক কাজ।
কাজ : প্লাস্টিডের চিত্র আঁকা।
উপকরণ : বিভিন্ন রকমের প্লাস্টিডের চিত্র, পােস্টার পেপার, সাইন পেন। পদ্ধতি : বিভিন্ন রকমে প্লাস্টিডের চিত্র এঁকে বাের্ডে ঝুলিয়ে দাও এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।
(c) গলজি বস্তু (Golgi body) গলজি বস্তু (কিংবা গলগি বস্তু) প্রধানত প্রাণিকোষে পাওয়া যায়, তবে অনেক উদ্রিদকোষেও এদের দেখা যায়। এটি সিস্টানি ও কয়েক ধরনের ভেসিকল নিয়ে তৈরি। এর পর্দায় বিভিন্ন উৎসেচকের পানি বিয়ােজন সম্পন্ন হয়। জীবকোষে বিভিন্ন পদার্থ নিঃসৃতকরণের সাথে এর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। হরমােন নিঃসরণেও এর ভূমিকা লক্ষ করা যায়। কোনাে কোনাে বিপাকীয় কার্যের সাথেও এরা সম্পর্কিত এবং কখনাে কখনাে এরা প্রােটিন সঞ্চয় করে রাখে।
(d) এন্ডােপ্লাজমিক রেটিকুলাম (Endoplasmic reticulum) এন্ডােপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর আবরণীর গায়ে প্রায়ই রাইবােজোম লেগে থাকে, তাই স্বাভাকিকভাবেই এই সব স্থানে প্রােটিন সংশ্লেষণের ঘটনা ঘটে। কোষে উৎপাদিত পদার্থগুলাের প্রবাহ পথ হিসেবে এন্ডােপ্লাজমিক রেটিকুলাম ব্যবহৃত হয়। এগুলাে কখনাে কখনাে প্লাজমা মেমব্রেনের সাথে যুক্ত থাকে, তাই ধারণা করা হয় যে এক কোষ থেকে অন্য কোষে উৎসেচক ও কোষে উৎপাদিত অন্যান্য দ্রবাদি এর মাধ্যমে চলাচল করে। মাইটোকন্ড্রিয়া, কোষগহ্বর এগুলাে সৃষ্টিতে এন্ডােপ্লাজমিক রেটিকুলামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উদ্ভিদ এবং প্রাণী উভয় কোষেই এরা উপস্থিত থাকে।
(e) কোষগহ্বর (Vacuole) সাইটোপ্লাজমে কোষের মধ্যে যে আপাত ফাঁকা স্থান দেখা যায়, সেগুলােই হচ্ছে কোষগহ্বর। বৃহৎ কোষগহ্বর উদ্ভিদ কোষের বৈশিষ্ট্য। এর প্রধান কাজ কোষরস ধারণ করা। বিভিন্ন ধরনের অজৈব লবণ, আমিষ, শর্করা, চর্বিজাতীয় পদার্থ, জৈব এসিড,
রঞ্জক পদার্থ, পানি ইত্যাদি এই কোষরসে থাকে। প্রাণিকোষে কোষগহ্বর সাধারণত অনুপস্থিত থাকে, তবে যদি কখনাে থাকে, তবে সেগুলাে আকারে ছােট হয়।
(f) লাইসােজোম (Lysosome) লাইসোেজাম জীবকোষকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে। এর উৎসেচক আগত
জীবাণুগুলােকে হজম করে ফেলে। এর পরিপাক করার উৎসেচকগুলাে একটি পর্দা দিয়ে আলাদা করা থাকে, তাই অন্যান্য অঙ্গাণু এর সংস্পর্শে এলেও হজম হয় না। দেহে অক্সিজেনের অভাব হলে বা বিভিন্ন কারণে লাইসােজোমের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তখন এর আশেপাশের অঙ্গগুলাে নষ্ট হয়ে যায়। কখনাে কোষটিই মারা যায়।
ঝিল্লিবিহীন সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু
(a) কোষকঙ্কাল (cytoskeleton) কোষঝিল্লি অতিক্রম করে কোষের ভিতরে ঢুকলে প্রথমেই কোষকঙ্কাল নজরে পড়বে, সেটি লম্বা। এবং মােটা-চিকন মিলিয়ে অসংখ্য দড়ির মতাে বস্তু কোষের চারদিকে জালের মতাে ছড়িয়ে রয়েছে। কোষকঙ্কাল ভিতর থেকে কোষটাকে ধরে রাখে। এগুলাে অ্যাকটিন, মায়ােসিন, টিউবিউলিন ইত্যাদি প্রােটিন দিয়ে কোষকঙ্কালের বিভিন্ন ধরনের তন্তু নির্মিত হয়। মাইক্রোটিউবিউল, মাইক্রোফিলামেন্ট কিংবা ইন্টারমিডিয়েট ফিলামেন্ট এ ধরনের তন্তুর উদাহরণ।
(b) রাইবােজোম (Ribosome) প্রাণী এবং উদ্ভিদ উভয় ধরনের কোষেই এদের পাওয়া যায়। এই ঝিল্লিবিহীন বা পর্দাবিহীন অঙ্গাণুটি প্রধানত প্রােটিন সংশ্লেষণে সাহায্য করে। প্রােটিনের পলিপেপটাইড চেইন সংযোজন এই রাইবােজোমে হয়ে থাকে। এছাড়া রাইবােজোম এ কাজে প্রয়ােজনীয় উৎসেচক সরবরাহ করে থাকে। উৎসেচক বা এনজাইমের কাজ হলাে প্রাণরাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে দেওয়া।
(c) সেন্ট্রোজোম (Centrosome) এটি প্রাণিকোষের বৈশিষ্ট্য, প্রধানত প্রাণিকোষে এদের পাওয়া যায়। নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ কোষে কদাচিৎ এদের দেখা যায়। প্রাণিকোষের নিউক্লিয়াসের কাছে দুটি ফাঁপা নলাকার বা দণ্ডাকার অঙ্গাণু দেখা যায়, তাদের সেন্ট্রিওল বলে। সেন্ট্রিওলের চারপাশে অবস্থিত গাঢ় তরলকে সেন্ট্রোস্ফিয়ার এবং সেন্ট্রোস্ফিয়ারসহ সেন্ট্রিওলকে সেন্ট্রোজোম বলে। সেন্ট্রোজোমে থাকা সেন্ট্রিওল কোষ বিভাজনের সময় অ্যাস্টার রে তৈরি করে। এছাড়া স্পিন্ডল যন্ত্র সৃষ্টিতেও সেন্ট্রোজোমের অবদান রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ফ্লাজেলা সৃষ্টিতে এরা অংশগ্রহণ করে।
2.2.3 নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রিকা (Nucleus):
জীবকোষের প্রােটোপ্লাজমে নির্দিষ্ট পর্দাঘেরা ক্রোমােজোম বহনকারী সুস্পষ্ট যে বস্তুটি দেখা যায় সেটিই হচ্ছে নিউক্লিয়াস। এর আকৃতি গােলাকার, ডিম্বাকার বা নলাকার। সিভকোষ এবং লােহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না। নিউক্লিয়াসে বংশগতির বৈশিষ্ট্য নিহিত থাকে। এটি কোষে সংঘটিত বিপাকীয় কার্যাবলিসহ সব ক্রিয়া-বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। সুগঠিত নিউক্লিয়াসে নিচের অংশগুলাে দেখা যায়।
(a) নিউক্লিয়ার ঝিল্লি (Nuclear membrane) নিউক্লিয়াসকে ঘিরে রাখে যে ঝিল্লি, তাকে নিউক্লিয়ার ঝিল্লি বা কেন্দ্রিকা ঝিল্লি বলে। এটি দুই স্তর। | বিশিষ্ট। এই ঝিল্লি লিপিড ও প্রােটিনের সমন্বয়ে তৈরি হয়। এই ঝিল্লিতে মাঝে মাঝে কিছু ছিদ্র থাকে,
যেগুলােকে নিউক্লিয়ার রপ্ত বলে। এই ছিদ্রের ভিতর দিয়ে নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজমের মধ্যে কিছু বস্তু চলাচল করে। নিউক্লিয়ার ঝিল্লি সাইটোপ্লাজম থেকে নিউক্লিয়াসের অন্যান্য বস্তুকে পৃথক রাখে। এবং বিভিন্ন বস্তুর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
(b) নিউক্লিওপ্লাজম (Nucleoplasm)
নিউক্লিয়ার ঝিল্লির ভিতরে জেলির মতাে বস্তু বা রস থাকে। একে কেন্দ্রিকারস বা নিউক্লিওপ্লাজম বলে। নিউক্লিওপ্লাজমে নিউক্লিক এসিড, প্রােটিন, উৎসেচক ও কতিপয় খনিজ লবণ থাকে।
|
(c) নিউক্লিওলাস (Nucleolus)
নিউক্লিওপ্লাজমের মধ্যে ক্রোমােজোমের সাথে সংলগ্ন গােলাকার বস্তুকে নিউক্লিওলাস বা কেন্দ্রিকাণু বলে। ক্রোমােজোমের রংগ্রাহী অংশের সাথে এরা লেগে থাকে। এরা RNA ও প্রােটিন দিয়ে তৈরি হয়। এরা রাইবােজোম সংশ্লেষণ করে।
(d) ক্রোমাটিন জালিকা (Chromatin reticulum)
কোষের বিশ্রামকালে অর্থাৎ যখন কোষ বিভাজন চলে না, তখন নিউক্লিয়াসে কুণ্ডলী পাকানাে সূক্ষ্ম সুতার মতাে অংশই হচ্ছে ক্রোমাটিন জালিকা বা নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম। কোষ বিভাজনের সময় এরা | মােটা এবং খাটো হয়, তাই তখন তাদের আলাদা আলাদা ক্রোমােজোম হিসেবে দেখা যায়। ক্রোমােজোমে অবস্থিত জিনগুলাে বংশগতির গুণাবলি বহন করে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে নিয়ে যায়। কোনাে একটি জীবের ক্রোমােজোম সংখ্যা ঐ জীবের জন্য নির্দিষ্ট। এসব ক্রোমােজোমে বংশধারা বহনকারী জিন (gene) অবস্থান করে এবং বংশের বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় বহন করা ক্রোমােজোমের কাজ।
একক কাজ
কাজঃ এখানে আলােচিত কোষের বিভিন্ন অঙ্গাণুর শ্রেণি বিভাগ একটি চার্টের মাধ্যমে উপস্থাপন।
2.3 উদ্ভিদ ও প্রাণীর কাজ পরিচালনায় বিভিন্ন প্রকার কোষের ভূমিকা কোষ জীবদেহের (উদ্ভিদ ও প্রাণী) গঠনের একক। এককোষী ও বহুকোষী প্রাণীদের কোষের কাজ ভিন্ন ভিন্নভাবে পরিচালিত হয়। পৃথিবীর আদি প্রাণের আবির্ভাবের প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত এককোষী প্রাণী প্রােটোজোয়া পর্বের প্রজাতিগুলাে তাদের দেহের সব ধরনের ক্রিয়াকলাপ—যেমন খাদ্যগ্রহণ, দেহের বৃদ্ধি ও প্রজনন ঐ একটি কোষের মাধ্যেমেই সম্পন্ন করে থাকে। বহুকোষী প্রাণীদের দেহকোষের মাঝে ভিন্নতা আছে, আছে বৈচিত্র্য।
2.3.1 উদ্ভিদ টিস্যু (Plant tissue) একই বা বিভিন্ন প্রকারের একগুচ্ছ কোষ একত্রিত হয়ে যদি একই কাজ করে এবং তাদের উৎপত্তিও যদি অভিন্ন হয়, তখন তাদের টিস্যু বা কলা বলে। টিস্যু দুই ধরনের, ভাজক টিস্যু এবং স্থায়ী টিস। ভাজক টিস্যুর কোষগুলাে বিভাজনে সক্ষম কিন্তু স্থায়ী টিস্যুর কোষগুলাে বিভাজিত হতে পারে না। স্থায়ী
টিস্যু তিন ধরনের, সরল টিস্যু, জটিল টিস্যু এবং নিঃস্রাবী (ক্ষরণকারী) টি। এখানে শুধু সরল এবং জটিল টিস্যু নিয়ে আলােচনা করা হবে।
(a) সরল টিস্যু (Simple tissue) যে স্থায়ী টিস্যুর প্রতিটি কোষ আকার, আকৃতি ও গঠনের দিক থেকে অভিন্ন, তাকে সরল টিস্যু বলে। কোষের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে সরল টিস্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা, প্যারেনকাইমা, কোলেনকাইমা এবং ম্লেরেনকাইমা।
প্যারেনকাইমা (Parenchyma): উদ্ভিদদেহের সব অংশে এদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এ টিস্যুর কোষগুলাে জীবিত, সমব্যাসীয়, পাতলা প্রাচীরযুক্ত এবং প্রােটোপ্লাজম দিয়ে পূর্ণ। এই টিস্যুতে আন্তঃকোষীয় ফাঁক দেখা যায়। কোষপ্রাচীর পাতলা এবং সেলুলােজ দিয়ে তৈরি হয়। এসব কোষে যখন ক্লোরােপ্লাস্ট থাকে, তখন তাকে ক্লোরেনকাইমা (Chlorenchyma) বলে। জলজ উদ্ভিদের বড় বড় বায়ুকুঠুরিযুক্ত প্যারেনকাইমাকে অ্যারেনকাইমা (Aerenchyma) বলে। প্যারেনকাইমা টিস্যুর প্রধান কাজ দেহ গঠন করা, খাদ্য প্রস্তুত করা, খাদ্য সঞ্চয় করা এবং খাদ্যদ্রব্য পরিবহন করা।
কোলেনকাইমা (collenchyma): এগুলাে বিশেষ ধরনের প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে তৈরি হয়। কোষপ্রাচীরে সেলুলােজ এবং পেকটিন জমা হয়ে পুরু হয়। তবে এদের কোষপ্রাচীর অসমভাবে পুরু এবং কোণাগুলাে অধিক পুরু হয়। এ টিস্যুর কোষগুলাে লম্বাটে ও সজীব। এরা প্রােটোপ্লাজমপূর্ণ কোষ দিয়ে তৈরি হয়। এতে আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকতে পারে। কোষপ্রান্ত চৌকোনাকার, সরু ৰা তির্যক হতে পারে। খাদ্য প্রস্তুত এবং উদ্ভিদদেহকে দৃঢ়তা প্রদান করা এদের প্রধান কাজ। পাতার শিরা এবং পত্রবৃন্তে এদের দেখা যায়। কচি ও নমনীয় কাণ্ড, যেমন কুমড়া ও দণ্ডকলসের কাণ্ডে এ টিস্যু দৃঢ়তা প্রদান করে। এ কোষে যখন ক্লোরােপ্লাস্ট থাকে, তখন এরা খাদ্য প্রস্তুত করে।
ফ্লেরেনকাইমা (Sclerenchyma): এ টিস্যুর কোষগুলাে শন্ত, অনেক লম্বা এবং পুরু প্রাচীৱবিশিষ্ট হয়। প্রােটোপ্লাজমবিহীন, লিগনিনযুক্ত এবং যান্ত্রিক কাজের জন্য নির্দিষ্ট কোষ দিয়ে গঠিত টিস্যুকে
স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু বলে। প্রাথমিক অবস্থায় কোষগুলােতে প্রােটোপ্লাজম উপস্থিত থাকলেও খুব তাড়াতাড়ি তা নষ্ট হয়ে মৃত কোষে পরিণত হয়। কোষগুলাে প্রধানত দুই ধরনের, ফাইবার এবং ফ্লুেরাইড। উদ্ভিদদেহে দৃঢ়তা প্রদান এবং পানি এবং খনিজ লবণ পরিবহন করা এর মূল কাজ। |
(d) ফাইবার বা তন্তু (Fibre): এরা অত্যন্ত দীর্ঘ, পুরু প্রাচীরযুক্ত, শক্ত এবং দুই প্রান্ত সরু। তবে কখনাে কখনাে ভোঁতা হতে পারে। প্রাচীরের গায়ে ছিদ্র থাকে, এ ছিদ্রকে কুপ বলে। অবস্থান এবং গঠনের ভিত্তিতে এদের বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে, যেমন বাস্ট ফাইবার, সার্ফেস ফাইবার, জাইলেম তন্তু বা কাষ্ঠত।
(ii) ফ্লুেরাইড (Sclereids): এদেরকে স্টোন সেলও বলা হয়। এরা খাটো, সমব্যাসীয়, কখনাে লম্বাটে আবার কখনাে তারকাকার হতে পারে। এদের গৌণপ্রাচীর খুবই শপ্ত, অত্যন্ত পুরু এবং লিপনিনসুক। পরিণত ফ্লুেরাইড কোষ সাধারণত মৃত থাকে এবং এদের কোষপ্রাটীর কূপযুক্ত হয়। নগ্নবীজী ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের কর্টেক্স, ফল ও বীজত্বকে ফ্লুেরাইড টিস্যু দেখা যায়। বহিঃত্বক জাইলেম এবং ফ্লোয়েমের সাথে একত্রে পত্রবৃন্তে কোষগুচ্ছরূপে থাকতে পারে।
একক কাজ
কাজ : তিন ধরনের সরল টিস্যুর চিত্র অঙ্কন। উপকরণ : পােস্টার পেপার, সাইনপেন। পদ্দতি : তিন ধরনের সরল টিস্যুর চিহ্নিত চিত্র আঁক এবং এদের পার্থক্যগুলাে উপস্থাপন কর।
(b) জটিল টিস্যু (complex tissues) বিভিন্ন ধরনের কোষের সমন্বয়ে যে স্থায়ী টিস্যু তৈরি হয়, তাকে জটিল টিস্যু বলে। এরা উদ্ভিদে পরিবহনের কাজ করে, তাই এদের পরিবহন টিস্যুও বলা হয়। এ টিস্যু দুই ধরনের, জাইলেম এবং ফ্লোয়েম। জাইলেম এবং ফ্লোয়েম একত্রে উদ্ভিদের পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ (vascular bundle) গঠন করে। জাইলেম (xylem); জাইলেম দুই ধরনের, প্রাথমিক ও গৌণ জাইলেম। প্রােক্যাম্বিয়াম থেকে সৃষ্ট
জাইলেমকে প্রাথমিক জাইলেম বলে। প্রাথমিক বৃদ্ধি | শেষে যেসব ক্ষেত্রে গৌণবৃদ্ধি ঘটে, সেখানে গৌণ
জাইলেম সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক জাইলেম দুই ধরনের।
প্রাথমিক অবস্থায় একে প্রােটোজাইলেম এবং পরিণত অবস্থায় মেটাজাইলেম বলে। মেটাঙ্গাইলেমের | অভ্যন্তরীণ ফাঁকা গহ্বরটি বড় থাকে। জাইলেমে কয়েক ধরনের কোষ থাকে, যেমন: ট্রাকিড, ভেসেল, জাইলেম প্যারেনকাইমা ও জাইলেম ফাইবার।
(i) ট্রাকিড (Tracheids): ট্রাকিড কোষ লম্বা। এর প্রান্তদ্বয় সরু এবং সুচালো। প্রাচীরে লিগনিন জমা হয়ে পুরু হয় এবং অভ্যন্তরীণ গহবর বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পানির চলাচল পাশাপাশি জোড়া কূপের (paired pits) মাধ্যমে হয়ে থাকে। প্রাচীরের পুরুত্ব কয়েক ধরনের | হয়, যেমন- বলয়াকার, সর্পিলাকার, সােপানকার,
জালিকাকার কিংবা কৃপাক্ষিত। ফার্নবর্গ, নগ্নবীজী ও আবৃতবীজী উদ্ভিদের প্রাথমিক ও গৌণ জাইলেম কলায় ট্রাকিড দেখা যায়। কোষরসের পরিবহন এবং অঙ্গকে দৃঢ়তা প্রদান করা এদের প্রধান কাজ। তবে কখনাে খাদ্য সঞ্চয়ের কাজও এই টিস্যু করে থাকে।
(i) ভেসেল (Vessels): ভেসেল কোষগুলাে খাটো চোঙের মতো। কোষগুলাে একটির মাথায় আরেকটি সজ্জিত হয় এবং প্রান্তীয় প্রাচীরটি গলে গিয়ে একটি দীর্ঘ নলের মতাে অঙ্গের সৃষ্টি করে। এর ফলে কোষরসের
উপরে ওঠার জন্য একটি সরু পথ সৃষ্টি হয়ে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় এ কোষগুলাে প্রােটোপ্লাজমপূর্ণ থাকলেও পরিণত বয়সে এরা মৃত এবং প্রােটোপ্লাজমবিহীন হয়। ভেসেলের প্রাচীর ট্রাকিডের মতাে বিভিন্নরূপে পুরু হয়, যেমন- সােপানাকার, সর্পিলাকার, বলয়াকার, কূপাঙ্কিত ইত্যাদি। ভেসেল সাধারণত কয়েক সেন্টিমিটার লম্বা হয়। তবে বৃক্ষ বা আরােহী উদ্ভিদে আরও অনেক লম্বা হতে পারে। এদের প্রধানত গুপ্তবীজী উদ্ভিদের সব অঙ্গে দেখা যায়। নগ্নবীজী উদ্ভিদের মধ্যে উন্নত উদ্ভিদ, যেমন নিটামে (Gretum) প্রাথমিক পর্যায়ের ভেসেল থাকে। পানি এবং খনিজ লবণ পরিবহনে এবং অঙ্গকে দৃঢ়তা প্রদান করা এর প্রধান কাজ।
(ii) জাইলেম প্যারেনকাইমা (xylem parenchyma): জাইলেমে অবস্থিত প্যারেনকাইমা কোষকে জাইলেম প্যারেনকাইমা বা উড প্যারেনকাইমা (wood parenchyma) বলে। এদের প্রাচীর পুরু বা পাতলা হতে পারে। প্রাইমারি জাইলেমে অবস্থিত প্যারেনকাইমার কোষ পাতলা | প্রাচীরযুক্ত । তবে গৌণ জাইলেমে এরা পুরু প্রাচীরযুক্ত হয়ে থাকে। খাদ্য সঞ্চয় এবং পানি পরিবহন করা এদের প্রধান কাজ।
(iv) জাইলেম ফাইবার (xylem fibre): জাইলেমে অবস্থিত ক্লেরেনকাইমা কোষই হচ্ছে জাইলেম ফাইবার। এদের উড ফাইবারও বলে। এ কোষগুলাে লম্বা, এদের দুপ্রান্ত সরু। পরিণত কোষে প্রােটোপ্লাজম থাকে না বলে এরা মৃত। উদ্ভিদে এরা যান্ত্রিক শক্তি যােগায়। দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের সব জাইলেমে এরা অবস্থান করে। পানি ও খনিজ পদার্থ পরিবহন, খাদ্য সঞ্চয়, উজিদকে যান্ত্রিক শান্তি
আর দৃঢ়তা প্রদান করা জাইলেম টিস্যুর প্রধান কাজ। ফ্লোয়েম (phloem): উদ্ভিদ কাণ্ডে এরা জাইলেমের সাথে একত্রে পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ তৈরি করে। সিভনল, সঙ্গীকোষ, ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা এবং ফ্লোয়েম তন্তু নিয়ে ফ্লোয়েম টিস্যু গঠিত হয়। জাইলেম যেমন খাদ্যের কাঁচামাল পানি সরবরাহ করে, তেমনি ফ্লোয়েম পাতায় প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করে।
(i) সিভকোষ (sieve cell): এরা বিশেষ ধরনের কোষ। দীর্ঘ, পাতলা কোষপ্রাচীরযুক্ত এবং জীবিত এ কোষগুলাে লম্বালম্বিভাবে একটির উপর একটি সজ্জিত হয়ে সিভনল (sieve tube). গঠন করে। এ কোষগুলাে চালুনির মতাে ছিদ্রযুক্ত সিভপ্লেট দিয়ে পরস্পর থেকে আলাদা থাকে। সিভকোষে প্রােটোপ্লাজম প্রাচীর ঘেঁষে থাকে বলে একটি কেন্দ্রীয় ফাঁপা জায়গার সৃষ্টি হয়, যেটা খাদ্য পরিবহনের নল হিসেবে কাজ করে। এদের প্রাচীর লিগনিনযুক্ত। পরিণত সিভকোষে কোনাে নিউক্লিয়াস থাকে না। সকল ধরনের গুপ্তবীজী উদ্ভিদের ফ্লোয়েমে সঙ্গীকোষ এবং সিভনল থাকে। পাতায় প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন অংশে পরিবহন করা এদের প্রধান কাজ।
(i) সঙ্গীকোষ (companion cell): প্রতিটি সিভকোষের সাথে একটি করে প্যারেনকাইমা জাতীয় কোষ অবস্থান করে। এদের কেন্দ্রিকা বা নিউক্লিয়াস বেশ বড়। ধারণা করা হয় এই
নিউক্লিয়াস সিভকোষের কার্যাবলি কিছু পরিমাণে হলেও নিয়ন্ত্রণ করে। এ কোষ প্রােটোপ্লাজম দিয়ে পূর্ণ এবং পাতলা প্রাচীরযুক্ত। ফার্ন ও বক্তবীজী উদ্ভিদে এদের উপস্থিতি নেই।
(i) ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা (Phloem parenchayma): ফ্লোয়েমে উপস্থিত প্যারেনকাইমা কোষগুলােই ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা। এদের কোষ সাধারণ প্যারেনকাইমার মতাে পাতলা কোষপ্রাচীরযুক্ত এবং প্রােটোপ্লাজমযুক্ত। এরা খাদ্য সঞ্চয় করে এবং খাদ্য পরিবহনে সহায়তা করে। ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ (Pteridophyta), নগ্নবীজী উদ্ভিদ এবং দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের ফ্লায়েম টিস্যুতে ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা থাকে। একবীজপত্রী উদ্ভিদে ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা থাকে না।
(iv) ফ্লোয়েম ফাইবার বা তন্তু (Phloem fibre): ফ্লেরেনকাইমা কোষ সমন্বয়ে ফ্লোয়েম ফাইবার তৈরি হয়। এগুলাে একধরনের দীর্ঘ কোষ, যাদের প্রান্তদেশ পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। এদের বাস্ট ফাইবারও বলে। পাটের আঁশ এক ধরনের বাস্ট ফাইবার। উদ্ভিদ অঙ্গের গৌণবৃদ্ধির সময় এ ফাইবার উৎপন্ন হয়। এসব কোষের প্রাচীরে কূপ দেখা যায়। ফ্লোয়েম টিস্যুর মাধ্যমে পাতায় উৎপাদিত শর্করা এবং মূলে সঞ্চিত খাদ্য একই সাথে উপরে নিচে পরিবাহিত হয়।
2.3.2 প্রাণিটিস্যু বহুকোষী প্রাণিদেহে অনেক কোষ একত্রে কোনাে বিশেষ কাজে নিয়ােজিত থাকে। একই ভ্ৰণীয় কোষ থেকে উৎপন্ন হয়ে এক বা একাধিক ধরনের কিছুসংখ্যক কোষ জীবদেহের কোনাে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে সমষ্টিগতভাবে একটা কাজে নিয়ােজিত থাকলে ঐ কোষগুলাে সমষ্টিগতভাবে টিস্যু (Tissue) বা তন্ম তৈরি করে। একটি টিস্যুর কোষগুলাের উৎপত্তি, কাজ এবং গঠন একই ধরনের হয়। টিস্যু নিয়ে আলােচনাকে টিস্যতত্ত্ব (Histology) বলে। কোষ এবং টিস্যুর মধ্যে পার্থক্য খুবই নির্দিষ্ট। কোষ হচ্ছে টিস্যুর গঠনগত ও কার্যকরী একক, যেমন লােহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং অণুচক্রিকা বিভিন্ন ধরনের রক্তকোষ। আবার এরা একত্রে তরল যােজক টিস্ নামে এক ধরনের টিস্যু হিসেবে পরিচিত। তরল যােজক টিস্যু রক্ত দেহের বিভিন্ন প্রয়ােজনীয় শারীরবৃত্তীয় কাজে অংশ নেয়।
মানবদেহে নানা ধরনের কোষ আছে, যারা ভিন্ন ভিন্ন কাজে নিয়ােজিত। মানবদেহের স্নায়ুকোষ দেহজুড়ে জালের মতাে ছড়িয়ে থাকে। দেহের যে কোনাে অংশের উদ্দীপনা গ্রহণ করে মস্তিষ্কে প্রেরণ করা, আবার মস্তিষ্কের কোনাে বার্তা শরীরের নির্দিষ্ট অংশে পৌঁছে দেওয়াই এদের কাজ। চোখের স্নায়ুকোষগুলে দেখতে এবং কানের মায়ুকোষগুলাে শুনতে সাহায্য করে। মানুষের চোখের মতাে বিভিন্ন ধরনের বায়ুকোষ
থাকায় বেশিরভাগ প্রাণীই পৃথিবীর দৃশ্যমান বস্তুগুলাে রঙিন হিসেবে দেখতে পারে না, অনেক প্রাণী শুধু দিনে বা রাতে দেখতে পায়। আমাদের কাজকর্মে, হাঁটা-চলায় এবং নড়াচড়ায় পেশিকোষ ব্যবহৃত হয়। তিন ধরনের রুস্তকোষ মানব দেহের বিভিন্ন কাজে নিয়ােজিত। লােহিত রক্তকণিকা কোষগুলাে ফুসফুসে অক্সিজেন গ্রহণ করে হৃদ্যন্ত্রের সাহায্যে ধমনির মাধ্যমে কৈশিকনালি হয়ে দেহের প্রতিটি
কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। শ্বেত রক্তকণিকা দেহের রােগ প্রতিরােধ করে। রক্তের অণুচক্রিকা কোষগুলাে শরীরের কেটে যাওয়া অংশ থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে। শরীরের ত্বকীয় কোষগুলাে দেহের আবরণ দেওয়া ছাড়াও শরীরের অবস্থানভেদে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। মাথার ত্বকীয় কোষগুলাে থেকে চুল গজিয়ে থাকে। শরীরের ত্বকীয় কোষগুলাে নির্দিষ্ট স্থানে ঘাম নির্গমন কোষ থেকে ঘাম নির্গত করে। অস্থিকোষ দেহে অস্থি অথবা কোমলাস্থি তৈরি করে দেহের দৃঢ়তা দিয়ে থাকে। দেহের আকার, গঠন, অস্থির বৃদ্ধি ইত্যাদিতে অস্থিকোষের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। প্রাণি টিস্যুর প্রকারভেদ: প্রাণি টিস্যু তার গঠনকারী কোষের সংখ্যা, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের নিঃসৃত পদার্থের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে প্রধানত চার ধরনের হয়— আবরণী টিস্যু, যােজক টিস্যু, পেশি টিস্যু এবং স্নায়ু টিস্যু।
(a) আবরণী টিস্যু (Epithelial Tissue) এই টিস্যু বিভিন্ন অঙ্গের আবরণ (lining) হিসেবে কাজ করে। তবে অঙ্গকে আবৃত রাখাই আবরণী। টিস্যুর একমাত্র কাজ নয়। এই টিস্যুর আরও চারটি কাজ হলাে: অঙ্গকে আবৃত রাখা, সেটিকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করা (protection), প্রােটিনসহ বিভিন্ন পদার্থ ক্ষরণ বা নিঃসরণ করা (secretion), বিভিন্ন পদার্থ শােষণ করা (absorption) এবং কোষীয় স্তর পেরিয়ে সুনির্দিষ্ট পদার্থের পরিবহন (transcellular transport)। আবরণী টিস্যুর কোষগুলাে ঘন সন্নিবেশিত এবং একটি ভিত্তিপর্দার উপর বিন্যস্ত থাকে। কোষের আকৃতি, প্রাণিদেহে তার অবস্থান এবং কাজের প্রকৃতিভেদে এ টিস্যু তিন ধরনের হয়। যেমন:
(i) কোয়ামাস আবরণী টিস্যু (squamous Epithelial Tissue): এই টিস্যুর কোষগুলাে মাছের আঁশের মতাে চ্যাপটা এবং এদের নিউক্লিয়াস বড় আকারের হয়। উদাহরণ: বৃক্কের বােম্যান্স ক্যাপসুল প্রাচীর। এই টিস্যু প্রধানত আবরণ ছাড়াও ছাঁকনির কাজ করে থাকে।
(ii) কিউবয়ডাল আবরণী টিস্যু (cuboidal Epithelial Tissue): এই টিস্যুর কোষগুলাে ঘনাকার বা কিউব আকৃতির অর্থাৎ কোষগুলাের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা প্রায় সমান। উদাহরণ: বৃকের সংগ্রাহক নালিকা। এই টিস্যু প্রধানত পরিশােষণ এবং আবরণ কাজে লিপ্ত থাকে।
(iii) কলামনার আবরণী টিস্যু (columnar Epithelial Tissue): এই টিস্যুর কোষসমূহ স্তম্ভের মতাে সরু এবং লম্বা। উদাহরণ: প্রাণীর অন্যের অন্তঃপ্রাচীরের কোষগুলাে প্রাধনত ক্ষরণ, রক্ষণ এবং শশাষণ কাজ করে থাকে।
প্রাণিদেহে ভিত্তিপর্দার উপর সজ্জিত কোষগুলাের সংখ্যার ভিত্তিতে এপিথেলিয়াল বা আবরণী টিস্যুকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
(i) সাধারণ আবরণী টিস্যু: ভিত্তিপর্দার উপর কোষসমূহ একস্তরে সজ্জিত। উদাহরণ: বৃক্কের বোম্যান্স। ক্যাপসুল, বৃক্কের সংগ্রাহক নালিকা, অন্য প্রাচীর।
(ii) স্ট্র্যাটিফাইড আবরণী টিস্যু: ভিত্তিপর্দার উপর কোষগুলো একাধিক স্তরে সজ্জিত। এমন স্ট্র্যাটিফাইড আবরণী টিসও আছে, যার স্তরের সংখ্যা মিনিটের মধ্যে পাল্টে যেতে পারে—কখনাে দেখা যায় তিনচারটি স্তর আবার পরক্ষণেই দেখা যায় সাত-আটটি। তাই একে বলে ট্রানজিশনাল আবরণী। উদাহরণ: মেরুদী প্রাণিদের ত্বক।
(iii) সিউডাে-স্ট্র্যাটিফাইড আবরণী টিস্যু: এই টিস্যুর কোষগুলাে ভিত্তিপর্দার উপর একস্তরে বিন্যস্ত থাকে। তবে কোষগুলাে বিভিন্ন উচ্চতার হওয়ায় এই টিস্যুকে দেখতে স্তরীভূত টিস্যু মনে হয়। উদাহরণ ট্রাকিয়া।
আবরণী টিস্যুর কোষগুলাে আবার বিভিন্ন কাজের জন্য নানাভাবে রূপান্তরিত হয়। যেমন
(i) সিলিয়াযুক্ত আবরণী টিস্যু: মেরুদণ্ডী প্রাণীদের শ্বাসনালির প্রাচীরে দেখা যায়। |
(ii) ফ্লাজেলাফুক আবরণী টিস্যু: হাইড্রার এন্ডােডার্মে থাকে।
(iii) ক্ষণপদযুক্ত আবরণী টিস্যু: হাইড্রার এন্ডােডার্মে এবং মেরুদণ্ডী প্রাণীদের অন্ত্রে দেখা যায়।
(iv) জনন অঙ্গের আবরণী টিস্যু:
বিশেষভাবে রূপান্তরিত আবরণী টিস্যু যা থেকে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু কোষ উৎপন্ন হয়। এরা প্রজননে অংশগ্রহণ করে প্রজাতির ধারা অক্ষুন্ন রাখে।
(v) গ্রন্থি আবরণী টিস্যু: বিভিন্ন ধরনের রস নিঃসরণ করে। দেখা যাচ্ছে যে আবরণী টিস্যু কোনাে অঙ্গের বা নালির ভিতরের ও বাইরের অংশ তৈরি করে থাকে।
আবার এই টিস্যু রূপান্তরিত হয়ে রক্ষণ, ক্ষরণ, শােষণ, ব্যাপন, পরিবহন এই সব কাজে অংশ নেয়। | আবরণী টিস্যু রূপান্তরিত হয়ে গ্রন্থি টিস্যু এবং জন টিস্যুতে পরিণত হয় এবং দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে।
(b) যােজক টিস্যু (connective Tissue) যােজক বা কানেকটিভ টিস্যুতে মাতৃকার (Matrix) পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি এবং কোষের সংখ্যা কম। গঠন এবং কাজের ভিত্তিতে কানেকটিভ টিস্যু প্রধানত তিন ধরনের হয়। যথা(6) ফাইব্রাস যােজক টিস্যু (Fibrous Connective Tissue): এই ধরনের যােজক টিস্যু দেহত্বকের নিচে পেশির মধ্যে থাকে। এদের মাতৃকায় বিভিন্ন ধরনের তন্তুর আধিক্য দেখা যায়।
(ii) কেলিটাল যােজক টিস্যু (Skeletal connective Tissue): দেহের অভ্যন্তরীণ কাঠামাে গঠনকারী টিস্যুকে কেলিটাল যােজক টিস্যু বলে। এই টিস্যু দেহের অভ্যন্তরীণ কাঠামাে গঠন করে। দেহকে নির্দিষ্ট আকৃতি এবং দৃঢ়তা দেয়। অঙ্গ সঞ্চালন এবং চলনে সহায়তা করে। মস্তিষ্ক, মেরুরজ্ঞ, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড এরকম দেহের নরম ও নাজুক অঙ্গগুলােকে রক্ষা করে। বিভিন্ন ধরনের রক্তকণিকা উৎপাদন করে। ঐচ্ছিক পেশিগুলাের সংযুক্তির ব্যবস্থা করে। পঠনের ভিত্তিতে স্কেলিটাল যােজক টিস্যু দুধরনের হয়। যেমন: কোমলাস্থি এবং অস্থি। কোমলাস্থি (Cartilage): কোমলাস্থি এক ধরনের নমনীয় স্কেলিটাল যােজক টিস্যু। মানুষের নাক ও কানের পিনা কোমলাস্থি দিয়ে তৈরি। অস্থি; অস্থি বিশেষ ধরনের দৃঢ়, ভঙ্গুর এবং অনমনীয় কেলিটাল কানেকটিভ টিস্যু। এদের মাতৃকায় ক্যালসিয়াম-জাতীয় পদার্থ জমা হয়ে অস্থির দৃঢ়তা প্রদান করে।
(iii) তরল যােজক টিস্যু (Fluid connective tissue): তরল টিস্যুর মাতৃকা তরল। মাতৃকায় বিভিন্ন ধরনের জৈব পদার্থ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। এই টিস্যুর প্রধান কাজ দেহের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দ্রব্যাদি পরিবহন করা, রােগ প্রতিরােধ করা এবং রক্ত জমাট বাঁধায় বিশেষ ভূমিকা রাখা। তরল যােজক টিস্যু দুই ধরনের, রক্ত এবং লসিকা।
রক্ত
রক্ত এক ধরনের ক্ষারীয়, ঈষৎ লবণাক্ত এবং লালবর্ণের তরল যােজক টিস্যু। ধমনি, শিরা ও | কৈশিকনালির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রক্ত অভ্যন্তরীণ পরিবহনে অংশ নেয়। উষ্ণ স্তবাহী প্রাণীর দেহে
রক্ত তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে। রক্তের উপাদান দুটি— রক্তরস এবং রক্তকণিকা। রক্তরস (Plasma) রকের তরল অংশ, এর রং ঈষৎ হলুদাভ। এর প্রায় 91-92% অংশ পানি এবং ৪-9% অংশ জৈব ও অজৈব পদার্থ। এসব রক্তরসের ভিতর বিভিন্ন ধরনের প্রােটিন এবং বর্জ্য পদার্থ থাকে। রক্তকণিকা তিন ধরনের, যথা- লােহিত রক্তকণিকা (Erythrocyte বা Red blood corpuscles বা RBC), শ্বেত রক্তকণিকা (Leukocyte বা white blood corpuscles বা WBC) এবং অণুচক্রিকা (Thrombocytes বা Blood platelet)। লােহিত রক্তকণিকায় হিমােগ্লোবিন নামে একটি লৌহজাত যৌগ থাকে, যার জন্য রক্ত লাল হয়। হিমােগ্লোবিন অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি অক্সিহিমােগ্লোবিন যৌগ গঠন করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে অক্সিজেন পরিবহন করে। শ্বেত রক্তকণিকা জীবাণু ধ্বংস করে দেহের প্রকৃতিগত আত্মরক্ষায় অংশ নেয়। মানবদেহে বেশ কয়েক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা থাকে। অণুচক্রিকা ন্ত জমাট
বাঁধায় অংশ নেয়। ষষ্ঠ অধ্যায়ে রক্ত নিয়ে বিস্তারিত আলােচনা করা হবে।
লসিকা: মানবদেহে বিভিন্ন টিস্যর মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে (Intercellular space) যে জলীয় পদার্থ জমা হয় তাকে লসিকা বলে। এগুলাে ছােট নালির মাধ্যমে সংগৃহীত হয়ে একটি আলাদা নালিকাত গঠন করে, যাকে লসিকাত (Lymphatic system) বলে। লসিকা ঈষৎ ক্ষারীয় স্বচ্ছ হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ। এর মধ্যে কিছু রােগপ্রতিরােধী কোষ থাকে, এদের লসিকাকোষ (Lymphoid cell) বলে।
(c) coffetfoy (Muscular Tissue) ভূণের মেসােডার্ম থেকে তৈরি সংকোচন ও প্রসারণশীল বিশেষ ধরনের টিস্যুকে পেশি টিস্যু বলে। এদের মাতৃকা প্রায় অনুপস্থিত। পেশিকোষগুলাে সরু, লম্বা এবং তন্তুময়। যেসব তন্দুতে আড়াআড়ি ডােরাকাটা থাকে, তাদের ডােরাকাটা পেশি (striated muscle) এবং ডােরাবিহীন তন্তুকে মসৃণ পেশি (Smooth muscle) বলে। পেশিকোষ সংকোচন এবং প্রসারণের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালন, চলন ও
অভ্যন্তরীণ পরিবহন ঘটায়। অবস্থান, গঠন এবং কাজের ভিত্তিতে পেশি টিস্যু তিন ধরনের, ঐচ্ছিক
পেশি, অনৈচ্ছিক পেশি এবং হৃৎপেশি।
(i) ঐচ্ছিক পেশি (voluntary) বা ডােরাকাটা পেশি (Striated muscle); এই পেশি প্রাণীর ইচ্ছানুযায়ী সংকুচিত বা প্রসারিত হয়। ঐচ্ছিক পেশিটিস্যুর কোষগুলাে নলাকার, শাখাবিহীন ও আড়াআড়ি ডােরামুক্ত হয়। এদের সাধারণত একাধিক নিউক্লিয়াস থাকে। এই পেশি দ্রুত সংকুচিত এবং প্রসারিত হতে পারে। ঐচ্ছিক পেশি অস্থিতন্ত্রে সংলগ্ন থাকে। উদাহরণ: মানুষের হাত এবং পায়ের পেশি।
(ii) অনৈচ্ছিক পেশি (Involuntary muscle) বা মসৃণ পেশি (Smooth muscle): এই পেশি টিস্যুর সংকোচন ও প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছাধীন নয়। এ পেশি কোষগুলাে মাকু আকৃতির। এদের গায়ে আড়াআড়ি দাগ থাকে না। এজন্য এ পেশিকে মসৃণ পেশি বলে। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের রক্তনালি, পৌষ্টিকনালি ইত্যাদির প্রাচীরে অনৈচ্ছিক পেশি থাকে। অনৈচ্ছিক পেশি প্রধানত দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির সঞ্চালনে অংশ নেয়। যেমন খাদ্য হজম প্রক্রিয়ায় অন্ত্রের ক্রমসংকোচন।
(iii) কার্ডিয়াক পেশি বা হৃৎপেশি (cardiac muscle): এই পেশি মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হৃৎপিণ্ডের এক বিশেষ ধরনের অনৈচ্ছিক পেশি। এই টিস্যুর কোষগুলাে নলাকৃতি (অনেকটা ঐচ্ছিক পেশির মতাে), শাখান্বিত ও আড়াআড়ি দাপযুক্ত। এ টিস্যুর কোষগুলাের মধ্যে ইন্টারক্যালাটেড ডিস্ক (Intercalated disc) থাকে। এদের সংকোচন ও প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছাধীন নয়। অর্থাৎ কার্ডিয়াক পেশির গঠন ঐচ্ছিক পেশির মতাে হলেও কাজ অনৈচ্ছিক পেশির মতাে। কার্ডিয়াক পেশির কোষগুলাে শাখার মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত থাকে। হৃৎপিণ্ডের সব কার্ডিয়াক পেশি সমন্বিতভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। মানব ভুণ সৃষ্টির একটা বিশেষ পর্যায় থেকে মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত হৃৎপিণ্ডের কার্ডিয়াক পেশি একটা নির্দিষ্ট গতিতে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে দেহের মধ্যে রক্ত চলাচলের প্রক্রিয়া সচল রাখে।
d) স্নায়ু টিস্যু (Nerve tissue) দেহের বিশেষ সংবেদী কোষ নিউরন বা স্নায়ুকোষগুলাে একত্রে স্নায়ু টিস্যু গঠন করে। স্নায়ু টিস্যু অসংখ্য নিউরন দিয়ে গঠিত। এর গঠন সম্পর্কে তােমরা দশম | অধ্যায়ে আরও বিস্তারিতভাবে জানতে পারবে। স্নায়ু টিস্যু পরিবেশ থেকে উদ্দীপনা, যেমন তাপ, স্পর্শ, চাপ ইত্যাদি গ্রহণ করে দেহের ভিতরে মস্তিষ্কে বহন করে এবং মস্তিষ্কের বিশ্লেষণের পর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপযুক্ত কাজ করে থাকে। একটি আদর্শ নিউরনের তিনটি অংশ থাকে, কোষদেহ, ডেনড্রাইট এবং অ্যাক্সন। নিউরন কোষ বহুভুজাকৃতি এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত। কোষের সাইটোপ্লাজমে মাইটোকন্ড্রিয়া, গলজিবডি, রাইবােজোম, এন্ডােপ্লাজমিক রেটিকুলাম ইত্যাদি থাকে, তবে নিউরনের সাইটোপ্লাজমে সক্রিয় সেন্ট্রিওল থাকে না বলে নিউরন বিভাজিত হয় না। কোষদেহের চারদিকের শাখাযুক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রলম্বিত অংশকে ডেনড্রন বলে। ডেনড্রন থেকে যে শাখা বের হয়, তাদের ডেনড্রাইট বলে। ডেনড্রাইটের সংখ্যা এক বা একাধিক হতে পারে। নিউরনের কোষদেহ থেকে একটি লম্বা স্নায়ুতন্তু পরবর্তী নিউরনের ডেনড্রাইটের সাথে যুক্ত থাকে, তাকে অ্যাক্সন বলে। একটি নিউরনের একটি মাত্র অ্যাক্সন থাকে। পরপর দুটি নিউরনে প্রথমটির অ্যাক্সন এবং পরেরটির ডেনড্রাইটের মধ্যে একটি স্নায়ুসন্ধি গঠিত হয়, তাকে সিন্যাপস (synapse) বলে। সিন্যাপসের মধ্য দিয়েই একটি নিউরন থেকে উদ্দীপনা পরবর্তী নিউরনে পরিবাহিত হয়। সায়ুটিস্যু উদ্দীপনা গ্রহণ করে মস্তিষ্কে প্রেরণ করে এবং মস্তিষ্ক তাতে সাড়া দেয়। উচ্চতর প্রাণীতে স্নায়ুটিস্যু স্মৃতি সংরক্ষণ (Memorise) করাসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। অনেকের মধ্যে একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে আমরা আমাদের মস্তিষ্কের মাত্র দশ শতাংশ ব্যবহার করতে পারি। ধারণাটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষ বা অন্য সব প্রাণী তার মস্তিঙ্কের একশাে শতাংশ ব্যবহার করে থাকে। এটা ঠিক যে সবসময় একই সাথে মস্তিস্কের সকল অংশ সমানভাবে সক্রিয় থাকে না। কিন্তু মস্তিষ্কের সবগুলাে অংশ কখনাে না কখনাে আমরা কোনাে না কোনােভাবে ব্যবহার করে থাকি। এমনকি এটাও ঠিক নয় যে একটা নির্দিষ্ট সময়ে মস্তিষ্কের দশ শতাংশের বেশি ব্যবহার করা যায় না। এরকম কোনাে সীমা নেই। বিবর্তনগতভাবে এরকম কোনাে সীমা আরােপিত হওয়ার কোনাে কারণ নেই।
2.4 অঙ্গ ও তন্ত্র। এক বা একাধিক টিস্যু দিয়ে তৈরি এবং একটা নির্দিষ্ট কাজ করতে সক্ষম প্রাণিদেহের অংশবিশেষকে অঙ্গ (Organ) বলে। অর্থাৎ কোনাে অঙ্গে একই অথবা একাধিক ধরনের টিস্যু থাকে এবং সেই অঙ্গ কোনাে না কোনাে নির্দিষ্ট কাজ করতে পারে। দেহের অঙ্গসমূহ নিয়ে জীববিজ্ঞানের যে শাখায় আলােচনা করা হয়, তাকে অঙ্গসংস্থানবিদ্যা (Morphology) বলে। অবস্থানভেদে মানবদেহে দুধরনের অঙ্গ আছে। চোখ, কান, নাক, হাত, পা, মাথা— এগুলাে বাহ্যিক অঙ্গ। বাহ্যিক অঙ্গসংস্থান সম্বন্ধে জীববিজ্ঞানের যে শাখায় বিশদভাবে আলােচনা করা হয়, তাকে বহিঃঅঙ্গসংস্থান (External Morphology) বলে। আর জীবদেহের ভিতরের অঙ্গগুলাে সম্বন্ধে জীববিজ্ঞানের যে শাখায় বিশদভাবে আলােচনা করা হয়, তাকে অন্তঃঅঙ্গসংস্থান (internal morphology বা Anatomy) বলে। পাকস্থলী, ডিওডেনাম, ইলিয়াম, মলাশয়, হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, প্লীহা, ফুসফুস, বৃক্ক, শুক্রাশয়, ডিম্বাশয়— এগুলাে হচ্ছে মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। পরিপাক, শ্বসন, রেচন, প্রজনন ইত্যাদি শারীরবৃত্তীয় কাজ করার জন্য প্রাণিদেহে কতগুলাে অঙ্গের সমন্বয়ে বিভিন্ন তন্ম গঠিত হয়। নিচে মানবদেহের কয়েকটি উল্লেখযােগ্য তন্ত্রের ধারণা দেওয়া হলাে। পরবর্তী অধ্যায়গুলােতে এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলােচনা করা হবে।
(a) পরিপাকতন্ত্র (Digestive system) এই তল খাদ্যগ্রহণ, পরিপাক, শােষণ এবং অপাচ্য খাদ্যাংশ নিষ্কাশনের সাথে জড়িত। পরিপাকতন্ত্রের | দুটি প্রধান অংশ থাকে, যথা: পৌষ্টিক নালি (digestive canal) এবং পৌষ্টিক গ্রন্থি (digestive
glands)। মুখছিদ্র, মুখগহ্বর, গলবিল, অন্ননালি, পাকস্থলী, ডিওডেনাম, ইলিয়াম, রেকটাম বা মলাশয় এবং পায়ুছিদ্র নিয়ে পৌষ্টিক নালি গঠিত। মানুষের লালাগ্রন্থি, যকৃৎ এবং অগ্ন্যাশয় পৌষ্টিক গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে। এসব গ্রন্থির নিঃসৃত রস খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে।
(b) শ্বসনতন্ত্র (Respiratory system) নাসার, গলবিল, ল্যারিংস, ট্রাকিয়া, ব্রঙ্কাস, ব্রঙ্কিওল, অ্যালভিওলাই এবং একজোড়া ফুসফুস নিয়ে মানুষের শ্বসনতন্ত্র গঠিত। এই তন্ত্র মানুষের দেহের সঞ্চিত খাদ্যকে পরিবেশ থেকে গৃহীত অক্সিজেনের সাহায্যে জারণ প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপাদন করে। এ শক্তি দেহের দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করে।
(c) og (Nervous system) দেহের বাইরের এবং ভিতরের উদ্দীপনা গ্রহণ করা এবং সে অনুযায়ী উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা এই তন্ত্রের কাজ। মস্তিষ্ক, সুষুম্নাকাণ্ড এবং করােটিক স্নায়ু নিয়ে স্নায়ুতন্ত্র গঠিত। এছাড়া স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র নামে স্নায়ুতন্ত্রের আরও একটি অংশ আছে। স্নায়ুতন্ত্রের এই অংশ দেহের অনৈচ্ছিক পেশির কাজগুলাে নিয়ন্ত্রণ করে।
(d) রেচনত (Excretory system) বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় বিপাক ক্রিয়ার ফলে শরীরে উপজাত দ্রব্য হিসেবে নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য পদার্থ | তৈরি হয়। এসব বর্জ্য পদার্থ সাধারণত দেহের জন্য ক্ষতিকর এবং দেহ থেকে নিষ্কাশনের প্রয়ােজন। হয়। দেহ থেকে এসব অপ্রয়ােজনীয় বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করার পদ্ধতিকে রেচন প্রক্রিয়া বলে। যে তলের সাহায্যে রেচন প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয়, তাকে রেচনতন্দ্র বলে। একজোড়া বৃক্ষ, একজোড়া ইউরেটার, একটি মূত্রথলি এবং একটি মূত্রনালি (ইউরো ) নিয়ে মানুষের রেচন তন্ম গঠিত।
(e) জননতন্ত্র (Reproductive system) প্রজাতির ধারাকে বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য এই তন্ত্র নিজস্ব বৈশিষ্ট্যযুক্ত নতুন প্রজন্ম সৃষ্টির লক্ষ্যে গ্যামেট (অর্থাৎ শুক্রাণু ও ডিম্বাণু) তৈরি করে। এটি ভূণ ও শিশু ধারক অঙ্গ নিয়ে গঠিত হয়। সাধারণত পরিণত বয়সে জননতন্ত্রের মাধ্যমে প্রাণী প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে। এভাবে প্রজননের মাধ্যমে প্রজাতির ধারা অব্যাহত থাকে। মানুষ একলিন্স প্রাণী। পুরুষ মানুষের দেহে পুরুষ প্রজননতন্য এবং স্ত্রীলােকের দেহে স্ত্রী প্রজননতন্ত্র থাকে।
( voeu (Integumentary system) দেহের বাইরের দিকে যে আচ্ছাদনকারী আবরণ থাকে, তাকে ত্বক বা চামড় (skin) বলে। কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রন্থিযুক্ত এই ত্বক দেহকে আচ্ছাদন করে, বাইরের আঘাত এবং জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এছাড়া দেহের জলীয় অংশকে দেহের ভিতর সংরক্ষণ করে।
g) অন্তঃক্ষরা গ্রন্বিত (Endocrine system). প্রাণিদেহে কতগুলাে নালিহীন বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি আছে। এসব গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রসকে হরমােন বলে। পরিবহন করার জন্য এর কোনাে নির্দিষ্ট নালি থাকে না। শুধু রক্তের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে হরমােন পরিবাহিত করে। পিটুইটারি, থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অৰ ল্যাঙ্গারহ্যানস, সুপ্ৰারেনাল ইত্যাদি গ্রন্থির সমম্বয়ে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিত গঠিত।
2.5 অণুবীক্ষণ যন্ত্র যােদ্ধর কাছে যেমন অস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞানীর কাছে যেমন দূরবীক্ষণ যন্ত্র, ঠিক তেমনি জীববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের কাছে অণুবীক্ষণ যন্ত্র একটি অপরিহার্য গবেষণা সহায়ক উপকরণ। এর সাহায্যে অতি ক্ষুদ্র কোনাে বস্তুকে বহুগুণ বড় করে দেখা যায়। তােমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র রয়েছে, তাতে আলাের সাহায্যে এসব ক্ষুদ্র বস্তু দেখার ব্যবস্থা আছে। এসব অণুবীক্ষণ যন্ত্রকে আলােক অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলে। আলাের বদলে ইলেকট্রন ব্যবহার করা হয় যে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে, তাকে ইলেকট্রন (ইলেকট্রনিক নয়!) অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলে। আলােক অণুবীক্ষণ যন্ত্র দুধরনের, সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র এবং যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র।
2.5.1 সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র (Simple microscope) এই অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ফুটের উপরে একটি স্তম্ভ থাকে, যার সাথে একটি কাচের স্টেজ সংযুক্ত থাকে। এই কাচের স্টেজে দুটো ক্লিপ লাগানাে থাকে। তন্তের নিচের দিকে সম্মুখভাগে একটি আয়না রয়েছে। তম্বের উপরে একটি টানা নল এবং এর বাহুতে লেন্স ধরে রাখার জন্য আংটা থাকে। এই আংটায়
লেন্স বসিয়ে স্কুল এডজাস্টমেন্ট – ঘুরিয়ে দ্রষ্টব্য বস্তুর উপর ফোকাস করা যায়। আয়না দিয়ে দ্রষ্টব্য বহুতে আলাে প্রতিফলিত করে পরীক্ষার কাজ শুরু করতে হবে। যে ভিত্তির উপর যন্ত্রটি দাঁড়িয়ে, সেটিকে পাদদেশ বলে।
2.5.2 যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র (Compound Microscope) যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানার পূর্বে এর বিভিন্ন অংশগুলাের নাম জেনে। নেওয়া প্রয়ােজন। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের চিত্রটি লক্ষ কর। স্ট্যান্ড: এটি বেজ-এর ওপর দণ্ডায়মান একটি উল্লম্ব পিলার। আর্ম: স্ট্যান্ড-এর উপরের দিকে বাঁকানাে অংশকে আর্ম বলে। বেজ; স্ট্যান্ড-এর নিচের দিকে পাটাতনের মতাে অংশটির নাম বেজ। স্টেজ: আর্ম-এর নিচের অংশে স্টেজ লাগানাে থাকে। বডি টিউব: অণুবীক্ষণ যন্ত্রের উপরের দিককার একটি নলাকার অংশ যার একপ্রান্তে আইপিস এবং অপর প্রান্তে অবজেকটিভ লেন্সগুলাে লাগানাে থাকে।
নােজপিস ও অবজেকটিভ; বডি টিউবের নিচের দিকের ঘূর্ণনশীল অংশটিকে নােজপিস বলে। এতে তিনটি অবজেকটিভ (লেন্স) লাগানাে থাকে, যথা- লাে পাওয়ার অবজেকটিভ (10x-12x), হাই পাওয়ার অবজেকটিভ (40x-45x), অয়েল ইমারশন অবজেকটিভ (100x)। কোনাে কোনাে যন্ত্রে অবশ্য আরও একটি অবজেকটিভ থাকে, যাকে বলে স্ক্রিনিং অবজেকটিভ (4x-5x)। আইপিস: বডি টিউবের উপরের অংশে একটি (monocular) বা দুটি (binocular) আইপিস (লেন্স) লাগানাে থাকে। এর বিবর্ধন ক্ষমতা সাধারণত 10x-12x হয়।
ফাইন অ্যাডজাস্টমেন্ট নব; এটি একটি ছােট নব। এটিকে ঘুরিয়ে স্টেজকে ওঠা-নামা করানাের মাধ্যমে | লাইভকে লেন্সের ফোকাস দূরত্বের (focal length) ভিতরে বা বাইরে নেওয়া যায়। এটিকে অনেকখানি
ঘােরালে স্টেজের অল্প একটু সরণ ঘটে অর্থাৎ এটি দিয়ে ফোকাসের সূক্ষ্ম সমন্বয় করা হয়।
কোর্স অ্যাডজাস্টমেন্ট নৰ: এটি একটি বড় নব। এটিকে ঘুরিয়ে স্টেজকে ওঠা-নামা করানাের মাধ্যমে
লাইডকে লেন্সের ফোকাস দূরত্বের ভিতরে বা বাইরে নেওয়া যায়। এটিকে অল্প ঘােরালেই স্টেজের অনেকখানি সরণ ঘটে অর্থাৎ এটি দিয়ে ফোকাসের শূল সমন্বয় করা হয়। সাৰস্টেজ ডায়াফ্রাম ও কনডেন্সর: স্টেজের নিচে সাবস্টেজ অবস্থিত যেটা উঠা-নামা করানাে যায় এবং এর সাথে একটি কনভেন্সর লাগানাে থাকে। কনডেন্সরের মধ্যে একটি ডায়াফ্রাম বা পর্দা থাকে যেটা কতটুকু আলাে কনডেন্সরের ভিতরে প্রবেশ করবে তা নির্ধারণ করে। | আলাের উৎস: বেস-এর কেন্দ্রে একটি আলাের উৎস থাকে, যেখান থেকে আলাে কনডেন্সারের মধ্য দিয়ে লেন্সে প্রবেশ করে।
যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের ব্যবহার অণুবীক্ষণ যন্যে প্রাকৃতিক আলাে ব্যবহার করতে চাইলে গবেষণাগারের আলােকিত স্থানে এটি স্থাপন করতে হবে। প্রথমেই আয়নাটি এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে প্রতিফলিত আলােকরশ্মি মঞ্চটির। ছিদ্র বরাবর বসানাে কাচের লাইডের নিচে প্রতিফলিত হয়। আর যদি কৃত্রিম আলােক উৎস অণুবীক্ষণ। যাের অংশ হিসেবে উপস্থিত থাকে, তাহলে শুধু সেটি জ্বালালেই চলবে। যে গাইডটি পর্যবেক্ষণ করা হবে তা মঞ্চের ক্লিপের সাহায্যে এঁটে দিতে হবে। এরপর নােজপিস ঘুরিয়ে নিয়ে অবজেকটিভের কম পাওয়ারের লেন্স লাইড বরাবর স্থাপন করতে হবে। এবার প্রথমে কোর্স অ্যাডজাস্টমেন্ট স্কু এবং পরে ফাইন অ্যাডজাস্টমেন্ট – ঘুরিয়ে দেখার বস্তুটি ফোকাসে আনতে হবে। এবার বডি টিউবে স্থাপিত আইপিস লেন্সে চোখ রেখে দেখতে হবে। প্রয়ােজনে ফাইন অ্যাডজাস্টমেন্ট স্কু ঘুরিয়ে নেওয়া যাবে। মনােকুলার হােক বা বাইনােকুলার, অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখার সময় দুটি চোখই খােলা রাখার চেষ্টা করতে হবে। প্রথমে কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে। এক চোখে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দেখলে চোখ সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। যদি উচ্চ পাওয়ারের দরকার হয়, তবে অবশ্যই শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে নােজপিস ঘুরিয়ে উচ্চ পাওয়ারের লেন্স স্থাপন করতে হবে।
offe (staining) কোষ বা টিস্যুর পাতলা স্তরকে যখন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা হয়, তখন সেটি যে জলীয় মাধ্যমে অবস্থান করে, তার থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করা মুশকিল। এ সমস্যা সমাধান করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে, তার মধ্যে একটি উপায় হলাে ওই কোষ বা টিস্যুকে রং করা, যাতে সেই রং দেখে পারিপার্শ্বিকতার সাপেক্ষে তার অবস্থান এবং আকৃতি আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়। অনেক সময় এই রঞ্জন প্রক্রিয়া এত সূক্ষতার সাথে করা সম্ভব, যাতে করে শুধু বিশেষ ধরনের কোষ কিংবা কোষের বিশেষ কোনাে অংশ
বা অঙ্গাণু অথবা টিস্যুর নির্দিষ্ট কোনাে উপাদানই কেবল রঙিন হয়। একেই বলে স্পাইড স্টেইনিং। | যেসব রঞ্জক পদার্থ দিয়ে স্টেইনিং করা হয়, সেগুলােকে একত্রে স্টেইন (stain) বলে।
2.5.3 ইলেন অণুবীক্ষণ যন্স (Electron microscope) বিবর্ধনের জন্য ব্যবহৃত শেৱ তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যত সুম হবে, ভক্ত হেট ককে বিবর্ধিত করা সম্ভব হবে। সাধারণত বিবর্ধন ব্যবহৃত অনুশ দৈর্যের প্রায় অর্ধেকের চেয়ে ছােট কছু অণুবীক্ষণ যন্দে দেখার মতাে করে ফোকাস করা সম্ভব নয়। দৃশ্যমান অলোর জল দৈৰ্ঘ্য 400-700 ন্যানােমিটারের মধ্যে থাকে। ভাই সবচেয়ে উন্নমানের আলােক অণুবীক্ষণে 20D ন্যানােমিটারের থেকে ছােটবন্দুকে আলােক অণুবীক্ষণে বিবর্ধিত করে দেখা যায় না, এমনকি অনেক শক্তিশালী বহুসংখ্যক লেলের সমন্বয় করে সেটি করা যায় না। ফলে আলােক অপূৰীক্ষলৈ কোষের কোষঝিলি, নিউক্লিষ্মাস এবং সাইটোপ্লাজম ছাড়া আর কিছু গুব একটা ভালো ফল বােঝা যায় না। সাইটোপ্লামে
অবস্থিত অশাগুলােকে আলাদা করে দেখা যায় না। এ সমস্যা সমাধানের জন্য দৃশ্যমান আলােয় | পরিবর্তে ইলেক্ট্রন করল ব্যবহৃত হয়, কেননা ইলেক্ট্রনের জল দৈৰ্থ দৃশ্যমান আলোর চেয়ে অনেক ছোট করা সম্ভব। কাচের লেলের পরিবর্তে সেখানে ব্যবহৃত হয় শক্তিশালী তড়িৎ চুম্বক, যা ইলেক্ট্রন ত্রাতের পতিপথ বাঁকিয়ে দিতে পারে, ঠিক যেরকম কাট, আলােকে বাঁকিয়ে দেয়। ফলে কোষের ভিতরকার অণুগুলাে স্পষ্ট দেখা সম্ভব হয়। যে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ইনে তরঙ্গকে ব্যবহার করে বিবর্ধন করা হয়, | তাকে ইলেক্ট্রন (ইলেলিক নয়) মাইক্রোক্ষেপ electron microscope) বা ফুলেল স্বৰীক্ষণ যন্ত্র বলে। উল্লেখ্য, ইলেন ভুল দিয়ে তৈরি করা হৰি অমৰা সরাসরি চোখে দেখৱে পাই না। ইলেন অণুবীক্ষণ বলের সাথে সংযুর একটি কম্পিটার ঐ অদৃশ্য ছবিকে আমাদের দেখার উপযোগী ছবিতে পরিণত করে যা, কম্পিউটারের মনিটরে দৃশ্যমান হয়।
(৭) একক কাজ কা:অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে উজিদ কোষ (পেঁয়াজ কোষ) পর্যবেক্ষণ কর। এথেনীয় উপাদান: পেঁয়াজ, ক্লেদ, শাইড, কক্সর স্পিণ, ওয়াচ প্লাস, তুলি, গ্লিসারিন এবং অণুবীক্ষণ ফ । পঞ্জি পেঁয়াজ থেকে শুকনাে খোসাগুলো ছঞ্ছিত্রে নাও। এবার যেকোনাে একটি শীত, রুসালে শপত্র ।
নাও। ব্লেড দিয়ে শল্কপত্রের উপরিভাগ থেকে সামান্য ত্বকস্তর তুলে নিয়ে ওয়াচ গ্লাসের পানিতে রাখ। এবারে তুলির সাহয্যে ওয়াচ গ্লাসের পানি থেকে ত্বকস্তর তুলে নিয়ে একটি পরিষ্কার প্রাইডের উপর রাখ। ত্বকশুরের উপর এক ফোঁটা গ্লিসারিন দিয়ে তার উপর ধীরে ধীরে কভার শিপ রাখ। পর্যবেক্ষণ: যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিম্নক্ষমতাসম্পন্ন অভিলক্ষ (objective) দিয়ে দেখ। আয়তাকার, পাতলা কোষপ্রাচীরযুক্ত কোষ দেখতে পাবে। এবার উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অভিশ্রু দিয়ে দেখ। প্রতিটি কোষে পাতলা দানাযুক্ত প্রােটোপ্লাজম, কোষগহ্বর এবং একপাশে একটি নিউক্লিয়াস দেখতে পাবে। এবার যা যা দেখলে তার চিত্র খাতায় এঁকে চিহ্নিত কর।
এএকক কাজ
কাজ :
অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে প্রাণিকোষ (অ্যামিবা) পর্যবেক্ষণ কর। প্রয়ােজনীয় উপাদান; অণুবীক্ষণ যন্ত্র, স্পাইড, কভার স্লিপ, ড্রপার, পেট্রিডিস, পিপেট, কাচের দণ্ড, কাচের বাটি এবং পুকুরের তলদেশ থেকে সংগৃহীত ডালপালাসহ পচা পাতা ও পানি।
পদ্ধতি : কাজের শুরুতে কোনাে পচা ডােবা বা পুকুরের তলদেশ থেকে ডালপালাসহ পচা পাতা সংগ্রহ কর। এগুলাে ছােট ছােট করে কেটে কাচের বাটিতে রেখে অল্প পানিসহ কাচের দণ্ড দিয়ে আস্তে আস্তে নাড়তে থাক। এভাবে কিছুক্ষণ নেড়ে বাটিটিকে একস্থানে স্থিরভাবে রেখে দাও। কচি পাত্রে তলানি জমলে একটি পিপেট দিয়ে ঔ তলানি তুলে পেট্রিডিসে জমা কর। এবার ড্রপার দিয়ে এক ফোঁটা তলানি কাচের লাইডে তুলে কভার স্লিপ দিয়ে চাপা দেওয়ার পর অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে বসাও। পর্যবেক্ষণ : গাইড একটু এদিক সেদিক করে খোঁজাখুঁজি করলেই স্বচ্ছ জেলির মতাে কতগুলাে ক্ষুদ্র জীৰ দেখতে পাবে। এগুলােই অ্যামিবা। এত বহু ক্ষণপদ এবং গহর দেখতে পাবে এবং কোষটিকে বেষ্টন করে প্লাজমালেমা নামক একটি পর্দা দেখতে পাবে। এতে উদ্ভিদকোষের মতাে কোনাে প্লাস্টিড থাকে না। উদ্ভিদকোষ ও প্রাণিকোষের মধ্যে কোনাে পার্থক্য দেখা গেল কি? এবার যা যা দেখলে তার চিত্র খাতায় এঁকে চিহ্নিত কর।
অনুশীলনী
(৫) সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
1. কোষ কাকে বলে?
2. প্লাস্টিডের কাজগুলাে কী কী?
3. টিস্যু ও অঙ্গের মধ্যে সম্পর্ক দেখাও। |
4. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির গুরুত্ব কী?
5. কোষের শক্তিঘর কাকে বলে?
6. রক্তের কাজ কী?
রচনামূলক প্রশ্ন।
1. চিত্রসহ মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন বর্ণনা কর।
2. বিভিন্ন ধরনের সরল কলার গঠন এবং কাজের তুলনামূলক আলােচনা কর।
3, বিভিন্ন ধরনের প্রাণিকলার গঠন এবং কাজ আলােচনা কর।
(ক) বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
1. লাইসােজোমের কাজ কোনটি?
ক, খাদ্য তৈরি।
খ, শক্তি উৎপাদন
গ, জীবাণু ভক্ষণ ।
ঘ, আমিষ সংশ্লেষণ
2. অ্যামিবা একটি প্রাণিকোষ, কারণ এর
i. কেন্দ্রিকার গঠন সুসম্পূর্ণ
ii. বর্ণ গঠনকারী অঙ্গ আছে
iii. কোষঝিল্লি দেখা যায়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
গ, ii ও iii
খ. i ও iii
ঘ, i, ii ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে 3 ও 4 নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও। রােহিত গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় দেখল একজন লোক পাটগাছ থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছে। 3. উদ্দীপকের সংগৃহীত অংশটিতে কোন ধরনের টিস্যু বিদ্যমান? ক. প্যারেনকাইমা
খ, কোলেনকাইমা গ, ক্লোরেনকাইমা ঘ, ফ্লেরেনকাইমা। 4. উদ্দীপকের সংগৃহীত অংশের টিস্যুর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে
1. কোষপ্রাচীর লিগনিনযুক্ত ii. কোষপ্রাচীরের পুরুত্ব অসমান। iii. কোষে প্রােটোপ্লাজম অনুপস্থিত
নিচের কোনটি সঠিক? ক. i ও ii গ. i ও iii
খ, ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
সৃজনশীল প্রশ্ন
1.
ক) প্লাজমালেমা কী?
(খ) প্লাস্টিডকে বর্ণগঠনকারী অঙ্গ বলা হয় কেন?
(প) জীবজগতের জন্য N চিহ্নিত অংশটি গুরুত্বপূর্ণ কেন? ব্যাখ্যা কর।
(ঘ) M চিহ্নিত অংশটির অনুপস্থিতিতে জীবদেহে কী ধরনের সমস্যা দেখা দিবে তা বিশ্লেষণ কর।
2.
ক, পেশি টিস্যু কী?
খ, কেলিটাল টিস্যু কীভাবে মস্তিষ্ককে রক্ষা করে?
গ. চিত্রের Q চিহ্নিত অংশটির ঐরূপ অবস্থানের কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ, চিত্র A ও B-এর মধ্যে একটি পরিবহন কাজ ছাড়াও অন্যান্য জৈবিক কাজে কীভাবে ভূমিকা রাখে যুক্তিসহ ব্যাখ্যা কর।
▣ প্রধান শব্দভিত্তিক সারসংক্ষেপ
♦ জীববৈচিত্র্য : জীবের জিনগত, প্রজাতিগত ও পরিবেশগত বৈচিত্র্যকে একসঙ্গে জীববৈচিত্র্য বলা হয়।
♦ ICZN : International Commission on Zoological Nomenclature. এটি প্রাণী নামকরণের একটি আর্ন্তজাতিক সংস্থা ।