জীবপ্রযুক্তি বা বায়ােটেকনােলজি (Biotechnology) জীববিজ্ঞানের একটি ফলিত (Applied) শাখা। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই বংশগতিবিদ্যা নানাভাবে বিকাশ লাভ করতে থাকে। নানা তথ্যে সমৃদ্ধ হতে | থাকে এর ভাণ্ডার। বংশগতির একক বা জিনের উপাদানের প্রকৃতি, রাসায়নিক এবং অণুর গঠন ও | জৈবনিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলাে আবিষ্কৃত হওয়ার পর একটা জীবকোষ থেকে জিন আরেকটা
জীবকোষে প্রতিস্থাপন করা যায়, সেটি নিয়ে জীববিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করলেন। স্থাপিত হলাে জীবপ্রযুক্তি (Biotechnology) নামে জীববিজ্ঞানের নতুন এক শাখা। | এই শাখাটি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বাস্তব সমস্যা সমাধানে এবং মানুষের স্বাস্থ্য উন্নয়নে, উন্নততর | ফসল সৃষ্টিতে, ফসলের মান এবং পরিমাণ বৃদ্ধিতে, পরিবেশ সংরক্ষণে এই প্রযুক্তি ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এই অধ্যায়ে আমরা এই প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।
এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা:
• জীবপ্রযুক্তির ধারণা ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব। • টিস্যু কালচার ব্যাখ্যা করতে পারব। • শস্য উৎপাদনে টিস্যু কালচারের ব্যবহার বর্ণনা করতে পারব। • জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে পারব। • শস্য উৎপাদনে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবহার বর্ণনা করতে পারব। • ইনসুলিন এবং হরমােন উৎপাদনে জেনিটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবহার বর্ণনা করতে পারব। • জীবপ্রযুক্তির উপযােগিতা মূল্যায়ন করতে পারব। • পশুর রােগ নিরাময়ে জেনিটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবহার বর্ণনা করতে পারব। • জীবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবহারের বিষয়ে পােস্টার অঙ্কন করতে পারব। • আমাদের প্রতিদিনের জীবনে জীবপ্রযুক্তির অবদান উপলব্ধি করতে পারব।
14.1 জীবপ্রযুক্তি বা বায়ােটেকননালজি (Biotechnology)
জীবপ্রযুক্তি দুটি শব্দ Biology এবং Technology-এর সমন্বয়ে গঠিত। Biology শব্দের অর্থ জীব সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান এবং Technology শব্দের অর্থ প্রযুক্তি। অর্থাৎ Biology এবং Technology-এর আন্তঃসম্পর্কিত বিষয়ই হলাে জীবপ্রযুক্তি। 1919 সালে হাঙ্গেরীয় প্রকৌশলী কার্ল এরেকি (Karl Ereky) প্রথম Biotechnology শব্দটি প্রবর্তন করেন। এই প্রযুক্তি প্রয়ােগ করে কোনাে জীবকোষ, অণুজীব বা তার অংশবিশেষ ব্যবহার করে নতুন কোনাে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীবের (উদ্ভিদ বা প্রাণী বা অণুজীব) উদ্ভাবন বা সেই জীব থেকে প্রক্রিয়াজাত বা উপজাত দ্রব্য প্রস্তুত করা হয়।
বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় জীবপ্রযুক্তি কোনাে নতুন সংযােজন নয়। মানবসভ্যতার উষালগ্ন থেকেই জীবপ্রযুক্তির প্রয়ােগ শুরু হয়েছে। পজিন এবং চোলাইকরণের (Fermentation and brewing) মতে প্রযুক্তিজ্ঞান মানুষ প্রায় ৪ooo বছর আগেই রপ্ত করেছে। 1863 সালে গ্রেগর জোহান মেন্ডেল কৌলিতত্ত্ব বা। জেনেটিক্স-এর সূত্রগুলাে আবিষ্কারের পর থেকে জীবপ্রযুক্তি নতুনরূপে অগ্রযাত্রা শুরু করে। 1953 সালে। Watson এবং Crick কর্তৃক ডিএনএ ডাবল হেলিক্স মডেল আবিষ্কারের ধারাবাহিকতায় আজকের আধুনিক জীবপ্রযুক্তির শুরু। জীবপ্রযুক্তির অনেক পদ্ধতির মধ্যে বর্তমানে টিস্যু কালচার (Tissue culture) ও জিন প্রকৌশল । (Genetic engineering) পদ্ধতি কৃষি উন্নয়ন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
14.2 টিস্যু কালচার উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে টিপটেন্ট (totipotent) স্টেম কোষ থাকায় এর প্রায় যেকোনাে অংশ থেকে হুবহু আরেকটি পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদ জন্মানাে সম্ভব, এটিই টিস্যুর কালচারের মূলনীতি। সাধারণত এক বা একাধিক ধরনের এক গুচ্ছ কোষসমষ্টিকে টিস্যু (Tissue) বা কলা বলা হয়। এই এক গুচ্ছ শেষ উৎপত্তিগতভাবে অভিন্ন এবং সম্মিলিতভাবে একই কাজ করে। একটি টিস্যুকে ভীবাণুমুক্ত পুষ্টিবর্ধক কোনাে মিডিয়ামে (Nutrient medium) বর্ধিতকরণ প্রক্রিয়াই হলাে টিস্যু কালচার। টিস্যু কালচার উদ্ভিদবিজ্ঞানের একটি অপেক্ষাকৃত নতুন শাখা । উদ্ভিদ টিস্যু কালচারে উদ্ভিদের কোনাে বিচ্ছিন্ন অংশ বা অঙ্গবিশেষ (যেমন পরাগরেণু, শীর্ষ বা পার্শ্বমুকুল, পর্ব, মূলাংশ ইত্যাদি) কোনাে নির্দিষ্ট পুষ্টিবর্ধক মিডিয়ামে জীবাণুমুক্ত অবস্থায় কালচার করা হয়। মিডিয়ামগুলােতে পুষ্টি এবং বর্ধনের জন্য প্রয়ােজনীয় সকল উপাদান সরবরাহ করা হয়। টিস্যু কালচারের উদ্দেশ্যে উদ্ভিদের যে অংশ পৃথক করে নিয়ে ব্যবহার করা হয় তাকে এক্সপ্ল্যান্ট (Explant) বলে।
14.2.1 টিস্যু কালচার প্রযুক্তির ধাপসমূহ | (a) মাতৃ উদ্ভিদ নির্বাচন: উন্নত গুণসম্পন্ন স্বাস্থ্যবান এবং রােগমুক্ত উদ্ভিদকে এক্সপ্ল্যান্টের জন্য নির্বাচন
করা হয়। | (b) আবাদ মাধ্যম তৈরি: উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যকীয় খনিজ পুষ্টি, ভিটামিন, ফাইটোহরমােন, | সুক্রোজ এবং প্রায় কঠিন মাধ্যম (Semi-solid rnedium) তৈরির জন্য জমাট বাঁধার উপাদান, যেমন
অ্যাগার (Agar) সঠিক মাত্রায় মিশিয়ে আবাদ মাধ্যম তৈরি করা হয়। | (e) জীবাণুমুৰ আৰাদ প্রতিষ্ঠা; আবাদ মাধ্যমকে কাচের পাত্রে (টেস্টটিউব বা কনিক্যাল ফ্লাস্ক) নিয়ে তুলা। বা প্লাস্টিকের ঢাকনা দিয়ে মুখ বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে অটোক্লেভ (Autoclave) যন্ত্রে 121° সে, তাপমাত্রায় রেখে, 15 lb/sq. inch চাপে 20 মি, রেখে জীবাণুমুক্ত করা হয়। তারপর কাচের পাত্রের মুখ পুনরায় বন্ধ করে নির্দিষ্ট আলাে এবং তাপমাত্রা (25+2° সে.) সম্পন্ন নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বর্ধনের জন্য
রাখা হয়। এই পর্যায়ে আবাদে স্থাপিত টিস্যু বারবার বিভাজনের মাধ্যমে সরাসরি অণুচাৱা (Plantlets) তৈরি হয় বা ক্যালাস (Callus) বা অবয়বহীন টিমন্ডে পরিণত হয়। এই টিমণ্ড থেকে পরবর্তীসময়ে পর্যায়ক্রমে একাধিক অণুচারা (Plantlets) উৎপন্ন হয়। (d) মূল উৎপাদক মাধ্যমে স্থানান্তর: এ সমস্ত উৎপাদিত চারাগাছে যদি মূল উৎপন্ন না হয়, তবে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা লাভের পর বিটপগুলাে বিচ্ছিন্ন করে নেওয়া হয় এবং তাদেরকে পুনরায় মূল
উৎপাদনকারী আবাদ মাধ্যমে স্থাপন করা হয়। | (e) প্রাকৃতিক পরিবেশে তথা মাঠপর্যায়ে স্থানান্তর: মূলযুক্ত চারাগুলােকে পানিতে ধুয়ে অ্যাগারমুক্ত
অবস্থায় ল্যাবরেটরিতে মাটিভরা ছােট ছােট পাত্রে স্থানান্তর করা যায়। পাত্রে লাগানাে চারাগুলাে কক্ষের | বাইরে রেখে মাঝে মাঝে বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। পূর্ণাঙ্গ চারাগুলাে সজীব এবং সবল হয়ে উঠলে সেগুলােকে এক পর্যায়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে মাটিতে লাগানাে হয়।
| 14.2.2 টিস্যু কালচারের ব্যবহার | টিস্যু কালচার প্রযুক্তির কৌশলকে কাজে লাগিয়ে আজকাল উদ্ভিদ প্রজননের ক্ষেত্রে এবং উন্নত জাত উদ্ভাবনে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গেছে এবং এ ক্ষেত্রগুলোতে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর মাধ্যমে উদ্ভিদাংশ থেকে কম সময়ের মধ্যে একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অসংখ্য চারা সৃষ্টি করা যায়। সহজেই রােগমুক্ত, বিশেষ করে ভাইরাসমুক্ত চারা উৎপাদন করা যায়। ঋতুভিত্তিক চারা উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হওয়া যায়। স্বল্পসময়ে কম জায়গার মধ্যে যথেষ্ট সংখ্যক চারা উৎপাদনের সুবিধা থাকায় চারা মজুদের সমস্যা এড়ানাে যায়। যে সব উদ্ভিদ বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে না, সেগুলাের চারাপ্রাপ্তি এবং স্বল্পব্যয়ে দুত সতেজ অবস্থায় স্থানান্তর করা যায়। বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ উৎপাদন এবং সংরক্ষণ করতে টিস্যু কালচার নির্ভরযােগ্য প্রযুক্তি হিসেবে স্বীকৃত। যেসব ভূণে শস্যকলা থাকে না, সেসব দৃণ কালচার করে সরাসরি উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায়। যে সকল উদ্ভিদে যৌনজনন অনুপস্থিত অথবা প্রাকৃতিকভাবে জননের হার কম, তাদের দূত সংখ্যাবৃদ্ধির ব্যবস্থা করা যায়। নতুন প্রকৃতির উদ্ভিদ উদ্ভাবনে টিস্যু কালচার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফরাসি বিজ্ঞানী George Morel (1964) প্রমাণ করে দেখান যে সিম্বিডিয়াম (Cymbidium) নামক অর্কিড প্রজাতির একটি মেরিস্টেম থেকে এক বছরে প্রায় 40 হাজার চারা পাওয়া সম্ভব। উল্লেখ্য, সাধারণ নিয়মে একটি সিম্বিডিয়াম উদ্ভিদ থেকে বছরে মাত্র অল্প কয়েকটি চারা উৎপন্ন হয়। থাইল্যান্ড টিস্যু কালচার পদ্ধতির মাধ্যমে এক বছরে 50 মিলিয়ন অণুচারা উৎপন্ন করে, যার অধিকাংশই অর্কিড। এই ফুল রপ্তানি করে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশ প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। 1952 সালে মার্টিন নামক বিজ্ঞানী মেরিস্টেম কালচারের মাধ্যমে রােগমুক্ত ডালিয়া ও আলুগাছ উদ্ভব করেন। বর্তমানে মেরিস্টেম কালচারের মাধ্যমে কোনাে কোনাে ভাইরাস রােগাক্রান্ত ফুল ও ফলগাছকে (যেমন
আলুর টিউবার) রােগমুক্ত করা টিস্যু কালচারের একটি নিয়মিত কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। মালয়েশিয়ায় oil Palm -এর বংশবৃদ্ধি টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হয়। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে চন্দ্রমল্লিকার একটি অঙ্গজ টুকরা থেকে বছরে ৪৪ কোটি চারা গাছ পাওয়া সম্ভব। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে জুই (asmirum) সাস্পেনসান থেকে সুগন্ধি আতর বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। উড়োজাহাজ, রকেট প্রভৃতি ভারী ইঞ্জিন চলানাের জন্য এক রকমের তিমি মাছের (Sperm whale) তেলের প্রয়ােজন হয়। এই তিমি মাছ ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। একমাত্র জোজোবা (jojoba) নামক গাছ হতে নিষ্কাশিত তেল বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়, কিন্তু এই গাছ এক বিশেষ মরুভূমির পরিবেশ ছাড়া (যেমন Arizona, California) জন্মায় না এবং এদের বংশবৃদ্ধিও অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এই গাছের দ্রুত বংশবৃদ্ধি করাই কেবল সম্ভব হয়নি, একে ভারতবর্ষের জলবায়ু উপযােগীও করে তােলা হয়েছে। বাংলাদেশে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে ইতােমধ্যে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে, যেমন, বিভিন্ন প্রকার দেশি ও বিদেশি অর্কিডের চারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। রােগ প্রতিরােধী এবং অধিক উৎপাদনশীল কলার চাৱা, বেলের চারা, কাঁঠালের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস, লিলি, কার্নেশান প্রভৃতি ফুল উৎপাদনকারী বৃক্ষের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। বিভিন্ন ডালজাতীয় শস্য, বাদাম ও পাটের চারার উৎপাদন করা হয়েছে। টিস্যু কালচার প্রয়ােগ করে আলুর রােগমুক্ত চারা এবং বীজ মাইক্রোটিউবার উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।
14.3 জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic engineering) একটি জীব থেকে একটি নির্দিষ্ট জিন বহনকারী ডিএনএ খণ্ড পৃথক করে ভিন্ন একটি জীবে স্থানান্তরের কৌশল হচ্ছে জিন প্রকৌশল (Genetic engineering)। আরও সহজভাবে বলা যায়, কাঙিক্ষত নতুন একটি বৈশিষ্ট্য সৃষ্টির জন্য কোনাে জীবের ডিএনএর পরিবর্তন ঘটানােকে জিন প্রকৌশল বলে। এই জিন যে কৌশলগুলাের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়, তাদের একত্রে রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ কৌশল বলে। এই কৌশল অবলম্বন করে একটি ডিএনএ অণুর কাক্ষিত অংশ কেটে আলাদা করে অন্য একটি ডিএনএ অনুতে প্রতিস্থাপন করার ফলে যে নতুন ডিএনএ অণুর সৃষ্টি হয়, তাকে রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ বলে। রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ তৈরির প্রক্রিয়াকে রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি বা জিন ক্লোনিং বলা হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে DNA-এর কাক্ষিত অংশ ব্যাকটেরিয়া থেকে মানুষে, উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে, প্রাণী থেকে উদ্ভিদে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়েছে। জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে উৎপন্ন নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীবের কোনাে কোনােটিকে বলা হয় GMO (Genetically Modified Organism) আর কোনােটিকে বলে ট্রান্সজেনিক (Transgenic)। জিএমও এবং ট্রান্সজেনিক জীব এক নয়। জীবের জিনে মিউটেশনের মাধ্যমে বা অন্য যেকোনাে উপায়ে যেকোনাে ধরনের পরিবর্তন ঘটলেই সেটিকে জেনেটিক মডিফিকেশন বলে। মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে অর্থাৎ জেনেটিক্সের নিয়ম আবিষ্কারের আগে থেকেই কৃত্রিম নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জেনেটিক্যালি
মডিফায়েড কাক্ষিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নতুন জাত উদ্ভাবন করে আসছে। প্রকৃতিতেও অনুরূপ প্রক্রিয়া চলছে | লক্ষ-কোটি বছর ধরে, যার নাম জৈব বিবর্তন। জীবপ্রযুক্তির কল্যাণে এই জেনেটিক মডিফিকেশনের ব্যাপারটি আরও নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং কম সময়ে করা সম্ভব। এভাবে যে জীব উৎপন্ন হয়, সেটি জিএমও বা জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম। আর ট্রান্সজেনিক জীব বলতে সেসব জীবকে বোেঝায়, যাদের জিনােমে এমন এক বা একাধিক জিন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা অন্য কোনাে প্রজাতি থেকে নেওয়া।
14.3.1 জিএমও (GM0) বা রিকম্বিনেন্ট DNA প্রস্তুত করার ধাপসমূহ মানুষের অন্ত্রে বসবাস করে একধরনের ব্যাকটেরিয়া, যার নাম Escherichia coli। এই ব্যাকটেরিয়ার উপর গবেষণা করে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধিকাংশ কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি নিচে উল্লেখ করা ধাপগুলাে (চিত্র 14.02) অবলম্বন করে সম্পন্ন করা হয়।
(a) প্রথমে দাতা জীব থেকে কাক্ষিত জিনসহ ডিএনএ অণুকে পৃথক করা হয়। এরপর এই জিনের বাহক বা ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ব্যাকটেরিয়ার প্লাজমিড ডিএনএ পৃথক করা হয়। প্লাজমিড হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া কোষের ক্রোমােজোমের বাইরে আরেকটি স্বতন্ত্র ডিএনএ অণু, যেটি বিভাজিত হতে পারে বা স্ববিভাজনে সক্ষম। (b) এ ধাপে প্লাজমিড ডিএনএ এবং দাতা ডিএনএকে এক বিশেষ ধরনের এনজাইম বা উৎসেচক দিয়ে খণ্ডিত করা হয়। দাতা ডিএনএ এর এসব খণ্ডের কোনাে একটিতে কাক্ষিত জিনটি থাকে। (e) এ ধাপে লাইগেজ নামক একধরনের এনজাইম দিয়ে দাতা ডিএনএকে প্লাজমিড ডিএনএ-এর। কাটা প্রান্ত দুটোর মাঝখানে স্থাপন করা হয়। লাইগেজ এখানে আঠার মতাে কাজ করে। এর ফলে নির্দিষ্ট জিনসহ রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্লাজমিড তৈরি হয়। এই রিকম্বিন্টেন্ট প্লাজমিড এখন দাতা ডিএনএর খন্ডিত অংশ বহন করে। (d) এখন এই রিকম্বিনেন্ট প্লাজমিডকে ব্যাকটেরিয়ার ভিতরে প্রবেশ করানাে হয়। খণ্ডিত ডিএনএ গ্রাহক কোষে প্রবেশ করনাের পদ্ধতিকে ট্রান্সফরমেশন বলে। ট্রান্সফরমেশনের ফলে নতুন জিন নিয়ে যে ব্যাকটেরিয়া বা জীবের উদ্ভব ঘটে, তাকে ট্রান্সজেনিক জীব বলে। (e) এবার নির্দিষ্ট জিন বহনকারী রিকম্বিনেন্ট প্লাজমিড ধারণ করা ব্যাকটেরিয়াকে শনাক্ত করে আলাদা করা হয়। এরপর নির্দিষ্ট জিন বহনকারী ব্যাকটেরিয়াগুলাের ব্যাপক বংশবৃদ্ধি ঘটানাে হয়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলাের প্রত্যেকটিতে এখন একটি করে কাকিত জিন রয়েছে। এই পদ্ধতিতে জিন তৈরি করাকে বলা হয় জিন ক্লোনিং। জিনকে ব্যবহার করার জন্য প্লাজমিডকে আবার আলাদা করে নেওয়া হয়।
আধুনিক জীবপ্রযুক্তি বা জিন কৌশলের মাধ্যমে জিন স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় কাঙিক্ষত বৈশিষ্ট্য অল্প সময়ে সুচারুভাবে স্থানান্তর করা সম্ভব হয় বলে সংশ্লিষ্ট উদ্ভাবক বা উদ্যোক্তাগণের নিকট প্রচলিত প্রজননের তুলনায় এ প্রযুক্তিটি অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। নতুন ফসল উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে প্রচলিত প্রজননের তুলনায় জিন প্রকৌশল অনেক বেশি কার্যকরী, কারণ প্রচলিত প্রজনন প্রক্রিয়ায় জিন স্থানান্তর একই অথবা খুব নিকটবর্তী প্রজাতির মাঝে সীমাবদ্ধ, কিন্তু জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে নিকটবর্তী বা দূরবর্তী যেকোনাে প্রজাতির মাঝে এক বা একাধিক জিন সরাসরি স্থানান্তর করা সম্ভব। প্রচলিত প্রজননে কক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে অনেক সময়ের প্রয়ােজন। জিন প্রকৌশলের সাহায্যে খুব হ্রত কাক্ষিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ, প্রাণী বা অণুজীব পাওয়া সম্ভব। প্রচলিত প্রজননে কাক্ষিত জিনের সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত জিনও স্থানান্তর হয়ে যেতে পারে এবং কাক্ষিত জিনের স্থানান্তরও অনেক খানি অনিশ্চিত। জিন প্রকৌশলে অনাকাক্সিক্ষত জিন স্থানান্তরের সম্ভাবনা নেই এবং কাঙ্ক্ষিত জিন স্থানান্তরও নিশ্চিত। প্রচলিত প্রজনন কোনাে রকম জীবনিরাপত্তা (Biosafety) নিয়ম পদ্ধতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত নয় কিন্তু জিন প্রকৌশলের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জীবনিরাপত্তা নিয়ম-নীতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। প্রচলিত প্রজননে বিষাক্ততা (Toxicity) পরীক্ষা করা হয় না, কিন্তু জিন প্রকৌশলে বিষাক্ততা (Toxicity) পরীক্ষা করা হয়।
14.3.2 জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবহার জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি হলাে সর্বাধুনিক জীবপ্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলাে নতুন ও উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীব সৃষ্টি, যা দিয়ে মানুষ সর্বোত্তমভাবে লাভবান হতে পারে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ইতােমধ্যেই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
(a) শস্য উন্নয়নে ; এই প্রযুক্তির সাহায্যে ক্ষতিকর পােকামাকড় প্রতিরােধী ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। Bacillus thuringiensis (Bt) নামক ব্যাকটেরিয়ার জিন শস্যে প্রবেশ করানাের কারণে জেনেটিকভাবে পরিবর্তিত শস্যসমূহকে Bt Corn, Bt Cotton ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হচ্ছে। একইরকমভাবে বিটি ভুট্টা, বিটি ধান (চীনে) ইত্যাদি উদ্ভাবিত হয়েছে। এসব ফসল লেপিডোপটেরা (Lepidoptera) এবং কলিওপটেরা (coleoptera) বর্গের অন্তর্ভুক্ত ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিরােধক্ষম। এই প্রযুক্তির সাহায্যে ভাইরাস প্রতিরােধী ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যেমন ভাইরাল কোট প্রােটিনে (coat Protein) জিন স্থানান্তরের মাধ্যমে টমেটো মােজাইক ভাইরাস (ToMV), টোবাকো মােজাইক ভাইরাস (TMv) এবং টোবাকো মাইল্ড গ্রিন মােজাইক ভাইরাস (TMGM) প্রতিরােধী ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। রিং স্পট ভাইরাস (PRSv) প্রতিরােধে সক্ষম পেঁপের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। লেট ব্লাইট ছত্রাক প্রতিরােধী জিন স্থানান্তরের মাধ্যমে লেট ব্লাইট প্রতিরােধী গােল আলুর
জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষণা চলছে। জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে আগাছানাশক রাসায়নিক পদার্থের বিরুদ্ধে সহনশীলতাসম্পন্ন (Herbicide tolerant) ভুট্টা, তুলা ইত্যাদি ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে বিজ্ঞানীরা আগাছানাশক সহিষ্ণু জিন টমেটোতে স্থানান্তর করে আগাছানাশক সহিষ্ণু (Herbicide tolerant) টমেটোর জাত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। একইভাবে সয়াবিন, ভুট্টা, তুলা, ক্যানােলা (Canola) ইত্যাদি আগাছা নাশক সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে একই উদ্ভিদে একাধিক বৈশিষ্ট্য (Trait) অনুপ্রবেশ করানাে যায় । বাণিজ্যিকভাবে এখন এ ধরনের ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ সহজলভ্য হয়েছে। যেমন তুলা এবং ভুট্টার মধ্যে একই সাথে আগাছানাশক সহিষ্ণু (Herbicide tolerant) এবং পােকামাকড় প্রতিরােধী (Insect resistant) বৈশিষ্ট্য অনুপ্রবেশ করানাে হয়েছে। জিনগত রূপান্তরের মাধ্যমে ফসলের পুষ্টিমান উন্নয়ন করা হয়েছে। যেমন, ধানে ভিটামিন A তথা বিটাক্যারােটিন জিন স্থানান্তর করা হয়েছে। এই ধানের চাল থেকে প্রস্তুত ভাত খেলে আলাদা করে আর ভিটামিন A খেতে হবে না। ধানে লৌহ বা আয়রন যােগ করারও প্রচেষ্টা অব্যাহত হয়েছে। লবণাক্ততা এবং খরা সহনশীল জিন স্থানান্তরের মাধ্যমে জিনগত পরিবর্তন (Genetic modification) ঘটিয়ে বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে।
(b) প্রাণীর ক্ষেত্রে : গবাদিপশু যেমন, গরুর দুধে আমিষের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য Protein c জিন স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে এটা এখনাে গবেষণা পর্যায়ে আছে। আকার বৃদ্ধি এবং মাংসের উৎপাদন বাড়ানাের উদ্দেশ্যে মানুষের বৃদ্ধির জন্য দায়ী হরমােনের জিন স্থানান্তর করে ভেড়ার জেনেটিক পরিবর্তন ঘটানাে হয়েছে। ভেড়ার পশমের পরিমাণ ও গুণগতমান বৃদ্ধির জন্য ব্যাকটেরিয়ার 2টি জিন, যথা CysE এবং CysM ভেড়ার জিনােমে স্থানান্তর করা হয়েছে।
(c) মৎস্য উন্নয়নে:
মাগুর, কমন কার্প, লইট্টা ও তেলাপিয়া মাছে স্যামন মাছের দৈহিক বৃদ্ধি হরমােনের (Growth | hormone) জিন স্থানান্তরের মাধ্যমে জেনেটিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় এসব মাছের আকার প্রায় 60
ভাগ বড় করা সম্ভব হয়েছে।
(d) চিকিৎসা ক্ষেত্রে: জেনেটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ইস্ট নামক ছত্রাক থেকে হেপাটাইটিস বি-ভাইরাসের ওষুধ (ইন্টারফেরন)। তৈরি হচ্ছে।
মানবদেহের ইনসুলিন তৈরির জিন ব্যবহার করে জেনেটিকভাবে পরিবর্তিত E. coli ব্যাকটেরিয়া এবং ইস্ট থেকে বাণিজ্যিকভাবে ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে, যা মানুষের বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রােগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। জেনেটিকভাবে পরিবর্তিত E. coli ব্যাকটেরিয়া এবং ইস্ট থেকে মানববৃদ্ধির হরমােন (growth hormne) এবং থ্যানুলােসাইট ম্যাক্রোফাজ স্টিমুলােটিং ফ্যাক্টর (GM-CSF) কলােনি উদ্দীপক উপাদান ইত্যাদি তৈরি করা হচ্ছে। এগুলাে যথাক্রমে অস্বাভাবিক খাটো হওয়া রােগ (dwarfism), ভাইরাসজনিত রােগ, ক্যান্সার, AIDs ইত্যাদির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
(e) পরিবেশ সুরক্ষায়: পেট্রোলিয়াম ও কয়লাখনি এলাকা দূষণমুক্তকরণ, শিল্পক্ষেত্রে বর্জ্যশােধন, পয়ােনিষ্কাশন ইত্যাদি পরিবেশ ব্যবস্থাপনা সহজ এবং দ্রুত করার উদ্দেশ্যে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। জিন প্রকৌশলের উপর গবেষণা করে নতুন এক জাতের Pseudomonas ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে যা পরিবেশের তেল ও হাইড্রোকার্বনকে দ্রুত নষ্ট করে পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে সক্ষম।
একক কাজ
কাজ: জীবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যবহার বিষয়ে পােস্টার অঙ্কন কর ও শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।
একক কাজ
কাজ: বাংলাদেশে জীবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার সুযােগ সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরি কর ও শিক্ষকের নিকট জমা দাও।
অনুশীলনী
(৫) সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
1. কীভাবে আবাদ মাধ্যম তৈরি করা হয়? 2. টিস্যুকালচার বলতে কী বােঝ? 3. এক্সপ্লান্ট কী? 4. জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কী? 5. ট্রান্সজেনিক কী?
(3) রচনামূলক প্রশ্ন
1. উদ্ভিদ প্রজনন ও উন্নত জাত উদ্ভাবনে টিস্যুকালচার প্রযুক্তির ভূমিকা উল্লেখ কর। 2. শস্য উন্নয়নে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভূমিকা আলােচনা কর।
(খ) বহুনির্বাচনি প্রশ্ন 1. DNA কাটার জন্য বিশেষ এনজাইম কোনটি?
ক, লাইগেজ খ, রেস্ট্রিকশন
গ, লেকটেজ ঘ, লাইপেজ 2. জীবপ্রযুক্তির প্রয়ােগ হয়
i. গাঁজনে ii. টিস্যুকালচারে iii. ট্রান্সজেনিক জীব উৎপন্নে নিচের কোনটি সঠিক? ক. i ও ii খ. i ও iii গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে 3 ও 4 নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও ইমতিয়াজ তার বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে খুবই ভালাে জাতের একটি বেল গাছের সন্ধান পেল। সে হুবুহু একই বৈশিষ্ট্যের চারা উৎপাদনের জন্য গাছটির পার্শ্বমুকুল নিয়ে এলাে এবং তার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান ল্যাবে এর চারা তৈরি করল। 3. ল্যাবে ইমতিয়াজের গৃহীত প্রক্রিয়াটি কী?
ক. জিন স্থানান্তরকরণ খ, হরমােন প্রয়ােগ
গ, এনজাইমের ব্যবহার ঘ, টিস্যুকালচার । 4. ল্যাবে ইমতিয়াজের কার্যক্রমের মানুযায়ী ধাপগুলাে কোনটি? ক, আবাদ মাধ্যম তৈরি এক্সপ্লান্ট স্থাপন+অণুচারা উৎপাদন মূল উৎপাদন।
+ প্রাকৃতিক পরিবেশে স্থানান্তর। খ, আবাদ মাধ্যম তৈরী — অণুচারা উৎপাদন — মুল উৎপাদন — এক্সপ্লান্ট স্থাপন
প্রাকৃতিক পরিবেশে স্থানান্তর প, মাতৃউদ্ভিদ নির্বাচন – আবাদ মাধ্যম তৈরি → এক্সপ্লান্ট স্থাপন → অণুচারা উৎপাদন
প্রাকৃতিক পরিবেশে স্থানান্তর ঘ, মাতৃউদ্ভিদ নির্বাচন + আবাদ মাধ্যম তৈরি — ক্যালাস তৈরি — এক্সপ্লান্ট স্থাপন
প্রাকৃতিক পরিবেশে স্থানান্তর
(
সৃজনশীল প্রশ্ন
1. জিন প্রকৌশলী ড. হায়দারের বাগানের লেবু গাছগুলােতে প্রচুর লেবুর ফলন হলেও গাছগুলাে মুত রােগাক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তিনি লক্ষ করলেন তার বাড়ির পাশের জঙ্গলে একজাতের লেবুগাছ রয়েছে যাতে খুব একটা লেবু না হলেও গাছগুলাে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে। এ দুটি লেবুর জাত থেকে তিনি অধিক ফলনশীল রােগ প্রতিরােধী একটি জাত উদ্ভাবন করলেন। তিনি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এর চারা উৎপাদন না করে ল্যাবে বিশেষ প্রক্রিয়ায় এর চারা তৈরি করলেন।
ক, জীব প্রযুক্তি কী? খ, GMO বলতে কী বােঝায়? গ, ড, হায়দারের লেবুগাছের জাত উন্নয়নের কৌশল ব্যাখ্যা কর। ঘ, ড, হায়দারের বিশেষ প্রক্রিয়ায় চারা তৈরি করার কারণ বিশ্লেষণ কর।
সমান্ত
▣ প্রধান শব্দভিত্তিক সারসংক্ষেপ
♦ অ্যান্টিবায়োসিস (Antibiosis): একটি জীব কর্তৃক সৃষ্ট জৈব রাসায়নিক পদার্থের কারণে যদি অন্য জীবের বৃদ্ধি এবং বিকাশ আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে বাধাগ্রস্ত হয় অথবা মৃত্যু ঘটে তখন সেই প্রক্রিয়াকে অ্যন্টিবায়োসিস বলে। অণুজীবজগতে এ ধরনের সম্পর্ক অনেক বেশি দেখা যায়। আলেকজান্ডার ফ্লেমিংয়ের (১৮৮১-১৯৫৫) পেনিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পেছনে ছিল পেনিসিলিয়াম ছত্রাক কর্তৃক একই কালচার প্লেটে রাখা ব্যাক্টেরিয়াগুলোর অ্যান্টিবায়োসিস।