উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র

(HSC Biology 2nd Paper )


দ্বিতীয় অধ্যায় : প্রাণীর পরিচিতি

(Chapter 2. Introduction to Animal)


বৈচিত্র্যময় এ পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রকার প্রাণীর বসবাস। এসব প্রাণী সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হলে প্রাণীর স্বভাব, বসতি, দৈহিক গঠন, খাদ্য, শরীরবৃত্ত ও জীবনচμ সম্পর্কে জানা অত্যাবশ্যক। তাছাড়া প্রতিটি প্রাণীর কিছু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পর্বের সৃষ্টি হয়েছে। একটি পর্বের একটি প্রাণী সম্পর্কে অধ্যয়ন করে সার্বিকভাবে উল্লিখিত পর্বের সকল প্রাণীর পরিচিতি লাভ করা যায়। এ ইউনিটে পাঠ্যসূচিভুক্ত হাইড্রা, ঘাসফড়িং ও রুই মাছ এই তিনটি প্রাণী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

পাঠ-২.১ হাইড্রা (Hydra)- শ্রেণিবিন্যাস, স্বভাব ও বাসস্থান



হাইড্রার শ্রেণিবিন্যাসগত অবস্থান (Systemic position of Hydra): Hydra আবিষ্কার করেন আব্রাহাম ট্রেম্বলে। এর নামকরণ করেন বিজ্ঞানী লিনিয়াস।
Kingdom : Animalia (প্রাণী)
Sub-Kingdom : Metazoa (বহুকোষী)
Phylum : Cnidaria (নিডোব্লাস্ট কোষ ও সিলেন্টেরন)
Class : Hydrozoa (অবিভক্ত সিলেন্টেরন)
Order : Hydroida (পলিপ দশা প্রধান)
Genus : Hydra
Species : Hydra vulgaris

HYDRA-র স্বভাব (Habit): Hydra স্বাধীন মুক্তজীবী ও মাংসাশী প্রাণী। HYDRA মিঠা পানিতে নিমজ্জিত কঠিন বস্তু ও জলজ উদ্ভিদের পাতার নিচের পৃষ্ঠে ঝুলন্ত অবস্থায় আটকে থাকে। কর্ষিকার সাহায্যে এরা খাদ্য গ্রহণ, দেহের সংকোচন, প্রসারণ ও চলাচল সম্পন্ন করে থাকে। ব্যাপন প্রক্রিয়ায় শ্বসন ও রেচন সম্পন্ন করে। মুকুলোদগম ও দ্বিবিভাজনের সাহায্যে অযৌন জনন এবং জননকোষ সৃষ্টি করে যৌন জনন সম্পন্ন করে। Hydra পুনরুৎপত্তি (regeneration) ক্ষমতা প্রাপ্ত।

Hydra-র বাসস্থান (Habitat): Hydra মিঠাপানির প্রাণী। এরা সাধারণত খাল, বিল, পুকুর, হ্রদ, ডোবা, ঝর্ণার পানিতে বাস করে। ঘোলা পানিতে এদের কম পাওয়া গেলেও পরিস্কার, অপেক্ষাকৃত শীতল এবং স্রোতহীন পানিতে এদেরকে তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়। চলাচলে সক্ষম হলেও Hydra অধিকাংশ সময়ই পানিতে অবস্থিত কোন বস্তুকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকে। অনেক সময় এরা ভাসমান পত্রখণ্ড সংলগ্ন হয়ে পানিতে নিম্নমুখী অবস্থায় ঝুলতে থাকে। শিক্ষার্থীর কাজ নিচের ছকে হাইড্রার শ্রেণিবিন্যাস লিখুন।

সারসংক্ষেপ Hydra আবিষ্কার করেন আব্রাহাম ট্রেম্বলে। এর নামকরণ করেন বিজ্ঞানী লিনিয়াস। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির Hydra পাওয়া যায় তম্মধ্যে Hydra vulgaris সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। কর্ষিকার সাহায্যে এরা খাদ্য গ্রহণ, দেহের সংকোচন, প্রসারণ ও চলাচল সম্পন্ন করে থাকে। ব্যাপন প্রক্রিয়ায় শ্বসন ও রেচন সম্পন্ন করে। মুকুলোদগম ও দ্বিবিভাজনের সাহায্যে অযৌন জনন এবং জননকোষ সৃষ্টি করে যৌন জনন সম্পন্ন করে। Hydra পুনরুৎপত্তি (regeneration) ক্ষমতা প্রাপ্ত। Hydra মিঠাপানির প্রাণী। এরা সাধারণত খাল, বিল, পুকুর, হ্রদ, ডোবা, ঝর্ণার পানিতে বাস করে। ঘোলা পানিতে এদের কম পাওয়া গেলেও পরিস্কার, অপেক্ষাকৃত শীতল এবং স্রোতহীন পানিতে এদেরকে তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়।

পাঠ-২.২ গঠন, খাদ্য গ্রহণ ও পরিপাক



বাহ্যিক গঠন: Hydra -র দেহ নরম, নলাকার এবং অরীয় প্রতিসম। এরা সাধারণত ১০-৩০ মি.মি. পর্যন্ত লম্বা ও প্রায় ১ মিলিমিটার চওড়া হয়। একটি পরিণত হাইড্রার দেহ নিম্নলিখিত অংশ নিয়ে গঠিত-

১. হাইপোস্টোম (Hypostome): দেহের মুক্ত ও সম্মুখ প্রান্তে অবস্থিত মোচাকৃতি, সংকোচন প্রসারণশীল অংশটিই হাইপোস্টোম। এর চূড়ায় মুখছিদ্র অবস্থিত। মুখ ছিদ্রপথে খাদ্য গৃহীত ও অপাচ্য অংশ বহিষ্কৃত হয়।

২. দেহকাণ্ড (Trunk): হাইপোস্টোমের নিচ থেকে পাদচাকতির উপর পর্যন্ত অংশটিকে দেহকাণ্ড বলে। দেহকাণ্ডে নিম্নলিখিত অংশগুলো পাওয়া যায়-

ক. কর্ষিকা (Tentacles): হাইপোস্টোমের চারপাশে ৫-৮ টি সরু, সংকোচন প্রসারণক্ষম, দেহ অপেক্ষা সামান্য লম্বা ও ফাঁপা সুতার ন্যায় কর্ষিকা থাকে। কর্ষিকার বহিঃপ্রাচীরে অসংখ্য ছোট ছোট টিউমারের মত নেমাটোসিস্ট ব্যাটারী বিদ্যমান। প্রত্যেক ব্যাটারীতে কয়েকটি করে বিভিন্ন ধরনের নেমাটোসিস্ট থাকে। কর্ষিকা ও নেমাটোসিস্টের সহযোগিতায় Hydra খাদ্য গ্রহণ, চলন ও আত্মরক্ষায় অংশ নেয়।

খ. মুকুল (Bud): দেহকাণ্ডের সাথে এক বা একাধিক গঠনরত ও পরিণত মুকুল সংলগড়ব অবস্থায় থাকতে পারে যা পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ হাইড্রায় পরিণত হয়। গ্রীষ্মকালে যখনই পর্যাপ্ত খাদ্য পাওয়া যায় এবং অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করে তখনই মুকুলোদগম (Budding) প্রক্রিয়ায় হাইড্রার অযৌন জনন সম্পন্ন হয়।

গ. জননাঙ্গ (Gonad) : প্রজনন ঋতুতে (হেমন্ত ও শীতকালে) দেহকাণ্ডের উপরের অর্ধাংশে এক বা একাধিক কোণাকার শুক্রাশয় এবং নিচের অর্ধাংশে এক বা একাধিক গোলাকার ডিম্বাশয় নামক অস্থায়ী জননাঙ্গ দেখা যায়। শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় যথাক্রমে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উৎপাদন করে যৌন জননে অংশ গ্রহণ করে।

গ. পাদচাকতি (Pedal disc) : দেহকাণ্ডের নিম্নে বা পশ্চাৎ প্রান্তে অবস্থিত গোলাকার বা চাপা অংশই হলো পদতল বা পাদচাকতি। পাদচাকতি থেকে নিঃসৃত আঠালো রসের সাহায্যে Hydra কোন তলের সাথে লেগে থাকে এবং বুদবুদ সৃষ্টি করে প্রাণীকে ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করে। পাদচাকতি বিমুক্ত করে হাইড্রা বিভিন্ন রকমের চলন সম্পন্ন করে। গ্রন্থিকোষ নিঃসৃত পিচ্ছিলরস অ্যামিবয়েড চলনে সাহায্য করে এবং ক্ষণপদ গঠনকারী কোষের সাহায্যে গ্লাইডিং চলন সম্পন্ন করে।

HYDRA-র অভ্যন্তরীণ গঠন (Internal structure): Hydra দ্বিস্তরী (diploblastic) প্রাণী। Hydra -র দেহ মূলত দেহপ্রাচীর (body wall) ও কেন্দ্রীয় গ্যাস্ট্রোভাস্কুলার গহ্বর (Coelenteron) নিয়ে গঠিত। হাইড্রার দেহের প্রস্থচ্ছেদ ও লম্বচ্ছেদের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ গঠন সুস্পষ্ট প্রতিভাত হয়। নিচে হাইড্রার অভ্যন্তরীণ গঠন আলোচনা করা হল-

বহিঃত্বক/এপিডার্মিসের গঠন: একটি পাতলা ও নমনীয় কিউটিকল এ আবৃত এপিডার্মিস দেহের বহিঃত্বক গঠন করে। গঠন ও কাজের ভিত্তিতে Hydra-র এপিডার্মিস সাত ধরনের কোষ নিয়ে গঠিত। নিচে কোষসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো-

১। পেশি আবরণী কোষ (Musculo epithelial cell): এপিডার্মিসে বিদ্যমান যেসব কোষ দেহের সাধারণ বহিরাবরণ গঠন করে তাদের পেশি আবরণী কোষ বলে। বহির্মুখী চওড়া ও অন্তর্মুখী সরু প্রান্তবিশিষ্ট এ কোষগুলো দেখতে কোনাকার, চওড়া প্রান্ত, গহ্বরযুক্ত, সাইটোপ্লাজম পূর্ণ। ভিতরের সরু প্রান্তের শেষে মায়োনিম নির্মিত দুটি পেশি প্রবর্ধন দেহ অক্ষের সমান্তরালে অবস্থান করে।

কাজ
♦ আবরণী কোষের মতো দেহাবরণ সৃষ্টি করে দেহকে রক্ষা করে।
♦ প্রবর্ধনগুলো সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে দেহের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিয়ে পেশির মতো কাজ করে।
♦ মিউকাস দানা কিউটিকল ক্ষরণ করে ও দেহ পিচ্ছিল রাখে।

২। ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ (Interstitial cell): পেশি আবরণী কোষের অন্তর্মুখী সরু প্রান্তের ফাঁকে ফাঁকে গুচ্ছাকারে অবস্থিত ক্ষুদ্রাকৃতির অপরিণত কোষগুলোকে ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ বলে। এগুলো গোল বা তিনকোণা, ৫ µm ব্যাসযুক্ত, এবং সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস ও মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক জালিকাসহ অসংখ্য মাইটোকন্ড্রিয়া নিয়ে গঠিত।

কাজ
♦ প্রয়োজনে অন্য যে কোন কোষে পরিণত হয়।
♦ হাইড্রার বৃদ্ধি, প্রজনন, পুনরুৎপত্তি ও মুকুল সৃষ্টিতে অংশ নেয়।

৩। স্নায়ু কোষ (Nerve cell): এসব কোষ মেসোগ্লিয়া ঘেঁষে অবস্থিত। অনিয়ত আকার বিশিষ্ট এবং একটি ক্ষুদ্র কোষদেহ ও দুই বা ততোধিক সূক্ষ্ম শাখান্বিত স্নায়ুতন্তু নিয়ে গঠিত। তন্তুগুলো পরস্পর মিলে স্নায়ু জালিকা গঠন করে।

কাজ
♦ সংবেদী কোষে সংগৃহীত উদ্দীপনা দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে ।
♦ এরা দেহের বিভিন্ন কোষের কাজের মধ্যে সমন্বয় করে

৪। সংবেদী কোষ (Sensory cell): এসব কোষ সরু, লম্বাকৃতির বা মাকু আকৃতির। মুখের চারদিকে, কর্ষিকায় ও পাদচাক্তিতে অধিক সংখ্যায় অবস্থান করে। এসব কোষ বাইরের দিকে সংবেদী রোম বহন করে এবং ভিতরের দিকে স্নায়ুতন্তু দ্বারা স্নায়ু কোষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে।

কাজ:
♦ পরিবেশ হতে বিভিন্ন অনুভূতি (আলো, তাপ, স্পর্শ, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি) গ্রহণ করে তা স্নায়ু কোষে প্রেরণ করে থাকে। চিত্র: ২.২.২ : Hydra -র এপিডার্মিসের কোষসমূহ

৫। গ্রন্থিকোষ (Gland cell): হাইপোস্টোম, কর্ষিকা, পাদচাক্তির তলদেশের কতগুলো পেশি আরবণী কোষ রূপান্তরিত হয়ে বিশেষ ধরনের নিঃস্র্রাবী কোষে পরিণত হয়, এদের গ্রন্থিকোষ বলে। এর বাইরের প্রান্ত অসংখ্য নিঃসারী দানা যুক্ত এবং ভিতরের প্রান্ত পেশি প্রবর্ধনযুক্ত। প্রবর্ধনগুলো পদতলের কেন্দ্র থেকে অরীয়ভাবে বিন্যস্ত ।

কাজ
♦ এ কোষগুলো আঁঠালো পদার্থ নিঃসৃত করে প্রাণীকে কোন বস্তুর সাথে আটকে রাখতে সহায়তা করে। বুদবুদ সৃষ্টি করে এরা প্রাণীকে ভাসতে সাহায্য করে।

৬। জননকোষ (Germ cell): প্রজনন ঋতুতে Hydra Ñর দেহকাণ্ডের নির্দিষ্ট অঞ্চলের এপিডার্মিসের ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ বিভাজিত হয়ে শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় গঠন করে। পরিণত শুক্রাণু অতিক্ষুদ্র নিউক্লিয়াসযুক্ত একটি স্ফীত মস্তক, সেন্ট্রিওলযুক্ত একটি সংকীর্ণ মধ্যখণ্ড ও একটি লম্বা বিচলনক্ষম লেজ নিয়ে গঠিত। পরিণত ডিম্বাণুটি বড় ও গোল; এর সাথে তিনটি পোলার বডি যুক্ত থাকে।

কাজ
♦ যৌন জননে অংশগ্রহণ করে।

৭। নিডোব্লাস্ট কোষ (Cnidoblast cell): Hydra -র পদতল ছাড়া বহিঃত্বকের সর্বত্র বিশেষ করে কর্ষিকার পেশি আবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে বা ঐসব কোষের ভিতরে এগুলো অনুপ্রবিষ্ট থাকে। নিম্নে নিডোব্লাস্ট কোষের অংশসমূহ তুলে ধরা হলো-

(ক) কোষ আবরণী (Cell membrane): প্রতিটি নিডোব্লাস্ট কোষ প্রোটিন লিপিড নির্মিত একটি দ্বিস্তরী আবরণী দ্বারা তৈরি। ইহা সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস দ্বারা গঠিত।

(খ) নেমাটোসিস্ট (Nematocyst): কোষের ভিতরে আমিষ ও ফিনলে গঠিত হিপনোটক্সিন নামক বিষাক্ত তরলে পূর্ণ ক্যাপসুলটি নেমাটোসিস্ট। নেমাটোসিস্টের সূত্রকটি লম্বা, সরু ও ফাঁপা প্রকৃতির। সূত্রকের গোড়ার অংশটি প্রশস্ত থাকে যাকে বাট (but) বা শ্যাফট (shaft) বলে। শ্যাফটে বার্ব (barb) নামক তিনটি বড় কাঁটা এবং বার্বিওল (barbule) নামক কতগুলো ছোট কাঁটা থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় সূত্রকটি থলির ভিতরে উল্টো অবস্থায় প্যাঁচানো থাকে।

(গ) অপারকুলাম (Operculum): নিডোব্লাস্ট কোষের নেমাটোসিস্ট থলিটি বাইরের দিকে একটি ঢাকনা দ্বারা আবৃত থাকে, যাকে অপারকুলাম বলে।

(ঘ) নিডোসিল (Cnidocil): এটি নিডোব্লাস্টের মুক্তপ্রান্তের একপাশে অবস্থিত দৃঢ়, ক্ষুদ্র, সংবেদনশীল রোমের মত অংশ। এর উপর চাপ পড়লেই নেমাটোসিস্ট সূত্রক বাহিরে নিক্ষিপ্ত হয়।

(ঙ) পেশিসূত্র ও ল্যাসো (Muscle fibre and lasso): অনেক নিডোব্লাস্ট কোষে নেমাটোসিস্ট থলির প্রাচীর হতে পেশিতন্তু বের হয়ে সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করে। তাছাড়া নেমাটোসিস্ট থলির নিম্ন দিকে ল্যাসো নামক প্যাঁচানো সূত্রক থাকে। চিত্র : ২.২.৩ : নিডোসাইট; বাম দিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ও ডান দিকে সুতাটি উন্মুক্ত

নিডোব্লাস্ট কোষের কাজ ♦ এগুলো Hydra -র শিকার অসাড় করা ও ধরার কাজে ব্যবহৃত হয়। ♦ Hydra -র আত্মরক্ষায় অংশ নেয়। ♦ চলনে সহায়তা করে। ♦ প্রাণীকে কোন বস্তু আকড়ে ধরতে সাহায্য করে। Hydra-র গ্যাস্ট্রোডার্মিস (অন্তঃত্বক) কোষসমূহ: গ্যাস্ট্রোডার্মিস দেহের অন্তঃত্বক গঠন করে। এর অধিকাংশই বৃহদাকার কলামনার এপিথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। HYDRA র গ্যাস্ট্রোডার্মিস নিম্নলিখিত কোষ নিয়ে গঠিত-

১। পুষ্টি কোষ বা পেশি আবরণী কোষ (Nutritive cell or musculo epithelial cells): গ্যাস্ট্রোডার্মিসের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে এ কোষগুলো অবস্থান করে, স্তম্ভাকার কোষগুলো একটি বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ও গহ্বরযুক্ত। পুষ্টি কোষসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

(ক) ফ্ল্যাজেলীয় কোষ (Flagellated cell): কোষের মক্তু প্রান্তে ১-৪টি লম্বা সুতার মত ফ্ল্যাজেলা যুক্ত থাকে। এসব ফ্ল্যাজেলার আন্দোলনের ফলে সিলেন্টেরনের অভ্যন্তরে প্রবেশকৃত খাদ্য মরে যায়।

(খ) ক্ষণপদীয় কোষ (Pseudopodial cell): এসব কোষ এদের মুক্ত প্রান্তে অস্থায়ী ক্ষণপদ গঠন করে যার সাহায্যে পরিপাককৃত খাদ্য কোষের ভিতরে প্রবেশ করায়। এরা পরিপাককৃত খাদ্যের পরিশোষণে ভূমিকা রাখে।

২। ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ (Interstitial cell): এন্ডোডার্মের কোষগুলোর ফাঁকে ফাঁকে গোলাকৃতি ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ অবস্থান করে। প্রতিটি ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ মাইটোকন্ড্রিয়া, মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা ও রাইবোসোম নিয়ে গঠিত।

৩। গ্রন্থি কোষ (Gland cell): আবরণী পেশিকোষের ফাঁকে ফাঁকে প্রচুর পরিমাণে ডিম্বাকৃতির গ্রন্থিকোষ বিদ্যমান থাকে। হাইপোস্টোমে এদের সংখ্যা সর্বাধিক। এসব কোষ সাধারণত মিউকাস নিঃসারী অথবা এনজাইম নিঃসারী হয়ে থাকে।

৪। স্নায়ু কোষ (Nerve cell): এন্ডোডার্মের এ কোষগুলো মেসোগ্লিয়া ঘেঁসে অবস্থান করে এবং সংখ্যায় খুব কম হয়ে থাকে। বহুভূজাকৃতি এ কোষগুলো দুই বা ততোধিক শাখান্বিত তন্তু সৃষ্টি করে স্নায়ুজালক গঠন করে।

৫। সংবেদী কোষ (Nerve cell): সংবেদী কোষগুলো লম্বা ও সরু। এন্ডোডার্মে প্রচুর পরিমাণে অবস্থান করে। সংবেদী কোষের মুক্তপ্রান্তে সংবেদী লোম এবং মেসোগ্লিয়া সংলগড়ব প্রান্তে সংবেদী তন্তু থাকে। সংবেদী তন্তুগুলো স্নায়ুতন্ত্রের সাথে যুক্ত থাকে। চিত্র : ২.২.৪ : HYDRA- র গ্যাস্ট্রোডার্মিসের বিভিন্ন কোষ

হাইড্রার খাদ্য গ্রহণ ও পরিপাক (Feeding and digestion of Hydra) : HYDRA মাংসাশী প্রাণী। জলজ প্রাণী অর্থাৎ নেমাটোসিস্ট দিয়ে সহজেই যাদেরকে দুর্বল করা যায় যেমন- ক্ষুদ্র Crustacea, লার্ভা, ছোট অ্যানিলিড, মাছের ডিম, ছোট ছোট কৃমি, সাইক্লপস ইত্যাদি হাইড্রার প্রধান খাদ্য।

হাইড্রার খাদ্যগ্রহণ পদ্ধতি (Feeding) : খাদ্য গ্রহণের সময় HYDRA পদতলকে ভিত্তির সাথে আটকে নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে মূলদেহ ও কর্ষিকাগুলো ভাসিয়ে শিকারের অপেক্ষায় থাকে। কোন শিকার যদি কর্ষিকার আওতাভুক্ত হয় তবে কর্ষিকা থেকে পেনিট্রান্ট নেমাটোসিস্ট নিক্ষিপ্ত হয়ে শিকার দেহে বিদ্ধ হয় এবং হিপনোটক্সিন নামক বিষ অনুপ্ের বশ করিয়ে দেয়, যার ফলে শিকার অসাড় হয়ে যায়। অন্যদিকে ভলভেন্ট নেমাটোসিস্ট শিকারের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গকে পেছিয়ে ধরে। এসময় মুখছিদ্রের চারিদিকে অবস্থিত গ্রন্থিকোষ থেকে মিউকাস নিঃসৃত হয় যা মুখছিদ্রকে পিচ্ছিল করে। কর্ষিকাগুলো সংকুচিত হয়ে ধৃত শিকারকে মুখের নিকট নিয়ে আসে। হাইপোস্টোম ও দেহ প্রাচীরের সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে খাদ্য সিলেন্টেরনে প্রবেশ করে। চিত্র ২.২.৫: হাইড্রার খাদ্য চিত্র ২.২.৬ : হাইড্রার খাদ্য গ্রহণ কৌশল

HYDRA-র খাদ্য পরিপাক প্রণালী (Process of digestion): যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জটিল ও শোষণ অনুপযোগী খাদ্যবস্তু দেহাভ্যন্তরে বিভিন্ন এনজাইম ও পানির সাহায্যে ভেঙ্গে তরল, সরল ও শোষণ উপযোগী খাদ্যবস্তুতে পরিণত হয় তাকে পরিপাক (Digestion) বলে। HYDRA-র খাদ্য পরিপাকের সময় অন্তঃত্বকের গ্রন্থিকোষ থেকে এনজাইম নিঃসৃত হয়। HYDRA-র খাদ্য পরিপাক দুটি পর্যায়ে সংঘটিত হয়। যথা-

১। বহিঃকোষীয় পরিপাক (Extracellular digestion) : কোষের বাইরে খাদ্যবস্তুর পরিপাককে বহিঃকোষীয় পরিপাক বলে। খাদ্য সিলেন্টেরনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে মুখছিদ্র বন্ধ হয়ে যায় এবং অন্তঃত্বকীয় গ্রন্থিগুলো সক্রিয় হয়। মূলত গ্যাস্ট্রোডার্মিস নিঃসৃত এনজাইমের ক্রিয়ায় শিকারের মৃত্যু ঘটে। এরপর দেহ প্রাচীরের সংকোচন ও প্রসারণের ক্রিয়ায় খাদ্যবস্তু চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়। পরবর্তীতে অন্তঃত্বকের ফ্ল্যাজেলীয় কোষের ফ্ল্যাজেলায় সঞ্চালনে খাদ্যকণা এনজাইমের সাথে ভালোভাবে মিশ্রিত হয়। গ্রন্থিকোষ নির্মিত ট্রিপসিন এনজাইম প্রোটিনকে পলিপেপটাইডে পরিণত করে। লিপিড ও শর্করা খাদ্যবস্তুর কোন পরিবর্তন হয় না।

২। অন্তঃকোষীয় পরিপাক (Intracellular digestion) : কোষের অভ্যন্তরে খাদ্যগহ্বরের মধ্যে খাদ্যবস্তুর যে পরিপাক হয় তাকে অন্তঃকোষীয় পরিপাক বলে। সিলেন্টেরনে দেহের সংকোচন প্রসারণের ফলে খাদ্য আরও ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়। পেশি অন্তঃআবরণীর ক্ষনপদীয় কোষগুলো ক্ষণপদ বের করে এবং কিছু কিছু খাদ্যকণা সামান্য তরল পদার্থের সাথে ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে গৃহীত হয়। ফলে কোষের ভিতরে খাদ্য গহ্বরের সৃষ্টি হয়। খাদ্য-গহ্বরে খাদ্যের আম্লিক ও ক্ষারীয় উভয় দশাই অতিবাহিত হয়। সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত বিভিন্ন এনজাইম খাদ্যগহ্বরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যকে পরিপাক করে। HYDRA স্টার্চ জাতীয় খাদ্য পরিপাক না করতে পারলেও প্রোটিন, স্নেহ জাতীয় খাদ্য পরিপাক করে। পরিপাককৃত খাদ্যসার ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন কোষে পরিবাহিত হয়। খাদ্যের অপরিপাককৃত অংশ মুখছিদ্র দিয়ে দেহের বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়। শিক্ষার্থীর কাজ হাইড্রার এপিডামিসের কোষগুলো কালার পেন্সিল দিয়ে আর্ট পেপারে এঁকে ক্লাসে উপস্থাপন করুন।

সারসংক্ষেপ HYDRA-র দেহ প্রাচীরে অবস্থিত ইন্টারস্টিশিয়াল কোষগুলো দেহের প্রয়োজনে দেহের যে কোন কোষ উৎপাদনে সক্ষম। এসব কোষ দেহের পুরনো কোষগুলোর অভাব পূরণ করে। নিডোসাইটের অভ্যন্তরীণ ভাগ হিপনোটক্সিন (আমিষ ও ফিনল) নামক বিষাক্ত তরলে পূর্ণ থাকে, যা শিকারকে অসাড় করতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া HYDRA ক্ষণপদীয় কোষের মাধ্যমে অন্তঃকোষীয় পরিপাক ও গ্রন্থিকোষের মাধ্যমে বহিঃকোষীয় পরিপাক সম্পন্ন করে।

পাঠ-২.৩ চলন, প্রজনন, মিথোজীবীতা



পাঠ- ২.৪ ব্যবহারিক- হাইড্রার স্থায়ী স্লাইড পর্যবেক্ষণ ও চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন



পাঠ- ২.৫ ঘাসফড়িং : শ্রেণিবিন্যাস, স্বভাব ও বাসস্থান, পরিপাক



পাঠ- ২.৬ ব্যবহারিকঃ ঘাসফড়িং / তেলাপোকা এর মুখোপাঙ্গ শনাক্তকরণ ও চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন।



পাঠ- ২.৭ সংবহন ও শ্বসন



পাঠ- ২.৮ রেচন ও প্রজনন



পাঠ- ২.৯ পুঞ্জাক্ষির গঠন ও দর্শন কৌশল



পাঠ-২.১০ রুই মাছ : শ্রেণিবিন্যাস, স্বভাব, বাসস্থান ও গঠন



পাঠ- ২.১১ খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস এবং রক্ত সংবহনতন্ত্র



পাঠ- ২.১২ শ্বসনতন্ত্র ও প্রজনন (প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম)



পাঠ- ২.১৩ ব্যবহারিক- রুই/টাকি মাছের রক্ত সংবহনতন্ত্র ব্যবচ্ছেদ, পর্যবেক্ষণ এবং চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন



পরীক্ষণের নাম: রুই মাছের রক্ত সংবহনতন্ত্র ব্যবচ্ছেদ, পর্যবেক্ষণ এবং চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি: কাঁচি, নিডল (সুই), আলপিন, ডাইসেকটিং ট্রে, চিমটা, ব্লেড, পেনসিল, ড্রইং খাতা।

১। অন্তর্বাহী বা অ্যাফারেন্ট ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি ব্যবচ্ছেদ: একটি সদ্য মৃত রুই মাছকে চিৎ করে ট্রেতে রেখে পায়ুছিদ্র থেকে শুরু করে ওষ্ঠের আগ পর্যন্ত কাঁচি দিয়ে কেটে দেহ বিহবর উন্মুক্ত করতে হবে। অঙ্কীয়দেশে দেহত্বক ও পেশি সাবধানে কেটে ফেলতে হবে যাতে কোন রক্তনালি কেটে রক্ত বেরিয়ে না পড়ে। বক্ষীয় অংশ উন্মুক্ত করলেই সাদা রং-এর পেরিকার্ডিয়াম পর্দা দ্বারা আবৃত হৃদপিণ্ড দেখা যাবে। পেরিকার্ডিয়াম পর্দা অপসারণ করে হৃদপিণ্ডকে উন্মুক্ত করতে হবে। অতঃপর হৃদপিণ্ডের সম্মুখ প্রান্তে অবস্থিত ভেন্ট্রাল অ্যাওর্টা (অঙ্কীয় মহাধমনি) দেখা যাবে। এ মহাধমনি থেকে উভয় পাশে চারটি করে অন্তর্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি প্রসারিত হয়ে ফুলকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পেশি পর্দা ও ফুলকা ঝিল্লী পরিষ্কার করলে এগুলো স্পষ্ট দেখা যাবে। এখন এর বিভিন্ন অংশ পর্যবেক্ষণ, শনাক্ত ও খাতায় চিহ্নিত চিত্র আঁকতে হবে।

চিত্র ২.১৩.১: Labeo-র অন্তর্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনিতন্ত্র

২। বহির্বাহী বা ইফারেন্ট ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি ব্যবচ্ছেদ: অন্তর্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি শনাক্তকরণের পর রুই মাছের মুখ গহ্বরের এক পাশের ফুলকা ও অপারকুলাম কেটে ফেলতে হবে। হৃদপি-ের পিছনে গলবিলের নিচের দিকে আড়াআড়িভাবে কেটে মুখগহ্বরকে উন্মুক্ত করতে হবে। এরপর সাবধানে মুখ গহ্বরের ছাদের ঝিল্লী অপসারণ করলে ডর্সাল অ্যাওর্টা (পৃষ্ঠীয় মহাধমনি) দেখা যাবে। পশ্চাৎ দিক থেকে ডর্সাল অ্যাওর্টা অনুসরণ করে সম্মুখ দিকে অগ্রসর হলে বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনিগুলো পাওয়া যাবে। এখন এর বিভিন্ন অংশ পর্যবেক্ষণ ও শনাক্ত করে খাতায় চিহ্নিত চিত্র আঁকতে হবে।

চিত্র ২.১৩.২ : Labeo-র বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনিতন্ত্র

পাঠ- ২.১৪ রুই মাছের প্রাকৃতিক সংরক্ষণ

রুই মাছ বাংলাদেশের অতি পরিচিত ও সুস্বাদু মাছ। রুই মাছ Cyprinidae গোত্রভুক্ত প্রজাতি। এ গোত্রভুক্ত মাছগুলোকে সাধারণত কার্প জাতীয় মাছ বলে। রুই মাছ ছাড়াও বাংলাদেশে কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস জাতীয় কার্প মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু বিভিন্ন হ্যাচারীতে চাষের কারণে সীমিত ও নির্দিষ্ট মাছের মধ্যে অন্তঃপ্রজননের ফলে জিনগত বৈচিত্র্য বিনষ্ট হয়। রোগাক্রান্ত মাছের আধিক্য দেখা যায়। এছাড়া নদী ভরাট করা, নদীর প্রবাহ পরিবর্তিত হওয়া, হাওরবাওর, খাল, বিল ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ার কারণে এ সম্পদ আজ হুমকির সম্মুখীন। এ সম্পদকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে এবং এর যথাযথ যতড়ব নিতে হবে। নিম্নে রুই মাছকে প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষণের বিষয়টি আলোচনা করা হলো-

১। হালদা নদী সংরক্ষণ: চট্টগ্রামের হালদা নদী এশিয়ার বৃহত্তম একটি প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। হালদা নদীর বৈশিষ্ট্য হলো এটি এমন একটি নদী যা বাংলাদেশে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশে পতিত হয়েছে। হালদা নদীকে মা মাছের মেটারনিটি ক্লিনিকও বলা হয়ে থাকে। হালদা নদী থেকেই রুই জাতীয় মাছ, যেমন রুই, মৃগেল, কাতলা, কালিবাউস মাছের ডিম সরাসরি সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হালদা নদীর ঐতিহ্য আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন নদী দূষণ, হালদা নদী সংলগড়ব এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠা, হালদা নদীর অক্স বা বাঁকসমূহ কেটে মাছের প্রজনন বান্ধব পরিবেশ নষ্ট করা, সুইচগেট নির্মাণ, প্রজনন ঋতুতে নির্বিচারে ডিমওয়ালা বা ব্রুড মাছ ধরাসহ নানা মানবসৃষ্ট কারণে এ নদীতে রুই মাছের প্রজনন কমে গেছে। আশার কথা হলো সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার ২০০৭ সালে গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হালদা নদীকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। এমতাবস্থায় সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে।

২। অভয়াশ্রম: নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছ বছরের নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট প্রজনন ক্ষেত্রে বংশবৃদ্ধি করে থাকে। তাই অবাধ বিচরণ ও প্রজননের জন্য সুনির্দিষ্ট জলাশয় বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে সরকার থেকে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেমন- হালদা নদীর মদুনা ঘাট এলাকা, বিলাইছড়ি এলাকাকে মৌসুমী অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যেহেতু নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত এ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো অরক্ষিত থাকে তাই কিছু মানুষ নিষেধ অমান্য করে সারা বছর মাছ ধরে থাকে। তাই এসব এলাকাগুলোকে কঠিন নজরদারির মধ্যে রেখে সারা বছর ব্যাপী অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা দরকার।

৩। পোনা মজুদ: নদী-নালা, খাল-বিল অবৈধ ভাবে ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ার কারণে মাছের উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। বদ্ধ বিল ও জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য পোনা মজুদ করা দরকার। প্রতি বছরে জানুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত একবার ও জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত একবার মোট দুইবার রুই মাছের পোনা মজুদ করা যায়।

৪। পরিবেশ ব্যবস্থাপনা: হালদা নদী বাংলাদেশের একমাত্র জোয়ার ভাটার নদী যেখান থেকে মৎস্যচাষীরা পোনার বদলে রুই মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করে নিয়ে যান। হালদা নদীতে রুই মাছের বিশুদ্ধ জিন পাওয়া যায় তাই এ নদী সংরক্ষণ করা অত্যাবশ্যক। এছাড়া হালদা নদীর তীরবর্তী যেসব দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্প-প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। অপরিকল্পিত বাঁধ ইত্যাদি নির্মাণ বন্ধ করতে হবে।
৫। জনসচেতনতা: প্রজননক্ষম মাতৃ রুই মাছের গুরুত্ব, মাছের জীবনচμ, মাছ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জ্ঞান সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। নির্দিষ্ট নিচের মাপের (সাধারণত ৮-৯ ইঞ্চি) কোন রুই মাছের পোনা যাতে বাজারে বিক্রি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এছাড়া জলাশয়ের পাশের এলাকার জমিতে কীটনাশক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কলকারখানার নিক্ষিপ্ত বর্জ্য যাতে সরাসরি জলাশয়ে মিশে জলাশয়ের পানিকে দূষিত করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে মৎস আইন সংশোধন করতে হবে এবং আইনের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষার্থীর কাজ রুই মাছ সংরক্ষণের জন্য একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে গ্রুপে আলোচনা করুন।

সারসংক্ষেপ গত পঞ্চাশের দশকে দেশের মোট মৎস চাহিদার ৭০% পূরন করতো হালদা নদী। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে হালদা নদীতে মাছের উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। রুই মাছ চলমান পানি ছাড়া স্পনিং (spawning) করে না। তাই রুই মাছের প্রাকৃতিক উৎপাদনের জন্য হালদা নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পাঠ- ২.১৫ ব্যবহারিক- কার্প জাতীয় মাছের ফুলকা ও বায়ুলি শনাক্তকরণ


পরীক্ষণের নাম: কার্প জাতীয় মাছের ফুলকা ও বায়ুলি শনাক্তকরণ।



প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি: কাঁচি, চিমটা, আলপিন, ব্লেড, ডাইসেকটিং ট্রে, নিডল (সুই), পেনসিল, ড্রইং খাতা।

১। ফুলকা ব্যবচ্ছেদ (Dissection of gill): প্রথমে একটি রুই মাছ বাম হাতে নিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনী দিয়ে মাথাটি শক্ত করে ধরতে হবে, ডান হাতে নেয়া ধারালো কাঁচির সাহায্যে কানকো অপসারণ করে ফুলকা প্রকোষ্ঠ উন্মুক্ত করতে হবে। পরে ফুলকা কেটে স্লাইডে নিয়ে এর বিভিন্ন অংশ পর্যবেক্ষণ করবেন।
পর্যবেক্ষণ
১. লাল বর্ণের চারটি ফুলকা একটি বিশেষ ফুলকা প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ থাকে।
২. প্রত্যেকটি ফুলকা একেকটি অস্থিময় ব্রাঙ্কিয়াল আর্চ এ অবলম্বিত।
৩. ফুলকা আর্চের অন্তঃকিনারা প্রসারিত হয়ে কাঁটাযুক্ত পাতলা ফুলকা রেকার থাকে।
৪. প্রতিটি ফুলকা দুই সারি ফুলকা ফিলামেন্ট বা ফুলকা ল্যামিলা দিয়ে গঠিত।

চিত্র ২.১৫.১: রুই মাছের ফুলকা

২। বায়ুলি ব্যবচ্ছেদ (Dissection of air bladder): একটি রুই মাছকে চিৎ করে ট্রের উপরে রেখে লেজ ও অপারকুলামের দিকে পিন দিয়ে আটকে দিতে হবে। একটি ধারালো স্কালপেলের সাহায্যে পেটের দিক থেকে ছিদ্র করে লম্বালম্বি ভাবে পায়ু থেকে গলবিল পর্যন্ত কেটে মাংসপেশি ও ত্বক কেটে নিতে হবে। অন্ত্রের উপরের মিউকাস পর্দাটি চিমটা দিয়ে ধীরে ধীরে পরিস্কার করে অন্ত্রের প্যাচ খুলে পিন দিয়ে আটকে দিতে হবে। পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য অংশগুলো অপসারণ করলে অন্ননালির সাথে সংযুক্ত বায়ুলি বা পটকা দেখা যাবে।
পর্যবেক্ষণ
১. বায়ুলিটি বায়ুপূর্ণ ও দেখতে চকচকে সাদা থলের মত।
২. বায়ুলিটি দুই প্রকোষ্ঠে বিভক্ত এবং এ প্রকোষ্ঠ দুটির মাঝে গভীর ভাঁজ বিদ্যমান।
৩. সম্মুখ প্রকোষ্ঠটি পশ্চাৎ প্রকোষ্ঠের তুলনায় আকারে ছোট এবং একটি বায়ুনালি (নুম্যাটিক ডাক্ট) দ্বারা অন্ননালির সাথে যুক্ত থাকে।

চিত্র ২.১৫.১ : রুই মাছের বায়ুলি

প্রধান শব্দভিত্তিক সারসংক্ষেপ


হাইড্রা (Hydra vulgaris)

♦  হাইপোস্টোম: মুখছিদ্রের ঠিক নিচে একটি ছোট ও মোচাকৃতি সংকোচন-প্রসারণশীল অঙ্গ থাকে। একে হাইপোস্টোম বলে।

♦ হাইপোস্টোম: মুখছিদ্রের ঠিক নিচে একটি ছোট ও মোচাকৃতি সংকোচন-প্রসারণশীল অঙ্গ থাকে। একে হাইপোস্টোম বলে।

♦ গ্যাস্ট্রোভাস্কুলার গহ্বর: হাইড্রার দেহের অভ্যন্তরে এন্ডোডার্ম দিয়ে ঘেরা একটি গহ্বর আছে তাকে সিলেন্টরন বা গ্যাস্ট্রোভাস্কুলার গহ্বর বলে।

♦ ডিপ্লোব্লাস্টিক: হাইড্রার দেহপ্রাচীর বাইরের দিকে এক্টোডার্ম এবং ভেতরের দিকে এন্ডোডার্ম-এ দুটি ভ্রূণীয় কোষস্তর নিয়ে গঠিত। এজন্য এদেরকে ডিপ্লোব্লাস্টিক বা দ্বিস্তরী প্রাণী বলে।

♦ নেমাটোসিস্ট: নিডোব্লাস্ট কোষের অভ্যন্তরে সূত্রকযুক্ত যে থলির মত অঙ্গ থাকে তাকে নেমাটোসিস্ট বলে।

♦ নিডোব্লাস্ট কোষ/ নিডোসাইট: হাইড্রার বহিঃত্বকে গোলাকার বা ফ্লাস্ক আকৃতির যে বিশেষ ধরনের কোষ পাওয়া যায় তাকে নিডো্ব্লাস্ট কোষ/ নিডোসাইট বলে।

♦ সিলেন্টেরন: নিডারিয়া পর্বের প্রাণীদের দেহ গহ্বরকে সিলেন্টেরন বলে।

♦ পরিপাক: যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় প্রাণীর ভুক্ত, অদ্রবণীয়, অশোষণীয়, জটিল খাদ্য নির্দিষ্ট উৎসেচকের প্রভাবে আর্দ্র-বিশ্লেষিত হয়ে দ্রবণীয়, শোষণীয়, সরল খাদ্যে পরিণত হয়, তাকে পরিপাক বলে।

♦ বহিঃকোষীয় পরিপাক: কোনো নির্দিষ্ট কোষের অভ্যন্তরে পরিপাক না হয়ে কোষের বাইরে কোনো নালি বা থলির মধ্যে যে পরিপাক সংঘটিত হয় তাকে আন্তঃকোষীয় বা বহিঃকোষীয় পরিপাক বলে।

♦ অন্তঃকোষীয় পরিপাক: কোনো নির্দিষ্ট কোষের অভ্যন্তরে খাদ্য পরিপাক হওয়ার পদ্ধতিকে অন্তঃকোষীয় পরিপাক বলে।

♦ মিসোগ্লিয়া: নিডেরিয়া পর্বের প্রাণীদের দেহে এপিডার্মিস ও গ্যাস্ট্রোডার্মিসের মাঝে যে অকোষীয় স্তর বিদ্যমান তাকে মিসোগ্লিয়া বলে।

♦ এন্ডোডার্ম: মিসোগ্লিয়ার ভেতরের দিকে সিলেন্টেরন গহ্বরকে ঘিরে হাইড্রার এন্ডোডার্ম অবস্থিত।

♦ মিথোজীবিতা: দুটি ভিন্ন প্রজাতির জীব ঘনিষ্ঠভাবে সহঅবস্থান করে পর¯পরের উপকার সাধন করলে, উক্ত জীব দুটিকে পর¯পরের মিথোজীবী (symbiont) বলে।

♦ হাইপোস্টোম: হাইড্রার মুখছিদ্রের ঠিক নিচে একটি ছোট ও মোচাকৃতি সংকোচন-প্রসারণশীল অঙ্গ থাকে। একে হাইপোস্টোম বলে।


ঘাসফড়িং (Poecilocerux pictus)

♦ ডায়াপজ: শীতকালে ঘাসফড়িং এর পরিস্ফুটন বন্ধ থাকার সময় কালকে ডায়াপজ বলে।

♦ টিনিডিয়া: ট্রাকিয়ার গহ্বরে কিছুটা পরপর ইন্টিমা পুরু হয়ে আংটির মতো গঠন করে। এগুলোকে টিনিডিয়াম (Ctenidium) বলে। এগুলো শ্বাসনালিগুলোকে চুপসে যেতে দেয় না ।

♦ প্রজনন: যে প্রক্রিয়ায় জীবে অযৌন বা যৌন প্রক্রিয়ায় নিজের মতো এক বা একাধিক শিশু জীব উৎপন্ন করে তাকে প্রজনন বলে। প্রজননের মাধ্যমে জীবের বংশবৃদ্ধি হয় এবং প্রজাতির ধারা বিলুপ্তির থেকে রক্ষা পায়।

♦ হিমোলিম্ফ: ঘাসফড়িং এর রক্তকে হিমোলিম্ফ বলে।


রুই মাছ (Labeo)

♦ ভেনাস হার্ট: যে হার্টের মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত প্রবাহিত হয় সে ধরণের হার্টকে ভেনাস হার্ট বলে। যেমন: মাছের হার্ট।

♦ ব্র্যাংকিওস্টেগাল ঝিল্লি (Branchiostegal membrane): রুই মাছের কানকোর পশ্চাৎ কিনারা একটি পাতলা ঝিল্লি বা পর্দা দ্বারা ঘেরা থাকে একে ব্র্যাংকিওস্টেগাল ঝিল্লি বলে। ঝিল্লিটির সাথে কতগুলো অস্থি নির্মিত দণ্ড লাগানো থাকে। ঝিল্লিটি কানকোর ভিতরে পানি আটকে রাখতে সাহায্য করে ফলে মাছ ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ফুলকার সাহায্যে পানি থেকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে।

♦ কার্প মাছ: Cyprinidae গোত্রের মিঠা পানির মাছদের কার্প মাছ বলে।

♦ লার্ভা: কোন একটি জীবের শিশু অবস্থা যা পূর্ণাঙ্গ প্রাণীর সাথে কোন মিল বহন করে না তাকে লার্ভা বলে।

সূত্র: জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান

গাজী সালাহউদ্দিন সিদ্দিকী