মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান (SSC Biology)


পঞ্চম অধ্যায় : খাদ্য, পুষ্টি এবং পরিপাক


জীবমাত্রই খাদ্য গ্রহণ করে, কারণ জীবের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়ােজন। তবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর খাদ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া ভিন্ন। জীবের পুষ্টির জন্য বিভিন্ন উপাদানের প্রয়ােজন হয়। মানবদেহের জন্য খাদ্য, পুষ্টি ও পরিপাক প্রক্রিয়া এবং উদ্ভিদের পুষ্টি এ অধ্যায়ের আলােচ্য বিষয়।

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা:


♦  উদ্ভিদের পুষ্টির অতি প্রয়ােজনীয় উপাদান বর্ণনা করতে পারব।
♦ উদ্ভিদে পুষ্টির অভাবজনিত লক্ষণ বিশ্লেষণ করতে পারব।
♦ প্রাণীর খাদ্যের প্রধান উপাদান ও উৎস বর্ণনা করতে পারব।
♦ আদর্শ খাদ্য পিরামিড ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦  খাদ্য গ্রহণের নিয়মনীতি ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦ পুষ্টির অভাবজনিত রােগের লক্ষণ, প্রতিরােধ ও প্রতিকার বর্ণনা করতে পারব।
♦  কিলােক্যালরি ও কিলােজুল ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦  পুষ্টি উপাদানে শক্তির পরিমাণ এবং ক্যালরি ও জুলে এদের রূপান্তর ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦  বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) ও বডি মাস রেশিওর (বিএমআর) গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦  বিএমআই ও বিএমআরের হিসাব করতে পারব।
♦ বিএমআর এবং ব্যয়িত শক্তির সাথে সম্পর্ক নির্ণয় করতে পারব।
♦  বয়স ও লিঙ্গভেদে বিএমআই হিসাব করতে পারব।
♦ সুস্থ জীবনযাপনে শরীরচর্চা ও বিশ্রামের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦  খাদ্য সংরক্ষণে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
♦  খাদ্যে অতিমাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ এবং রঞ্জকের ব্যবহারের শারীরিক বিক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে পারব।
♦  পৌষ্টিকতন্ত্রের প্রধান অংশ ও সহায়তাকারী অঙ্গের গঠন ও কাজ বর্ণনা করতে পারব।
♦  পৌষ্টিকতন্ত্রের প্রধান অংশের চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন করতে পারব।
♦  যকৃতের (Liver) কাজ বর্ণনা করতে পারব।
♦ অগ্ন্যাশয়ের কাজ বর্ণনা করতে পারব।
♦ খাদ্য পরিপাকে উৎসেচকের (Enzyme) ভূমিকা মূল্যায়ন করতে পারব।
♦  অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যাজনিত রােগ এবং এর প্রতিরােধ ও প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করতে পারব।
♦ কতন্ত্রের রােগের বিষয়ে নিজে সচেতন হব এবং পরিবারের সদস্যদের সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করব। সাত দিনের গৃহীত খাদ্যের একটি তালিকা তৈরি করে এটিকে সুষম খাদ্যের সাথে তুলনা করতে পারব।
♦  স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে পুষ্টির অবদান বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পােস্টার অঙ্কন করতে পারব।
♦  স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে পুষ্টির অবদান বিষয়ে নিজে সচেতন হব অন্যদের সচেতন করব। 5.1 উদ্ভিদের খনিজ পুষ্টি (Plant Mineral Nutrition)। উদ্ভিদ তার বৃদ্ধি ও পরিপুষ্টির জন্য মাটি, বায়ু এবং পানি থেকে কতগুলাে উপাদান গ্রহণ করে। এ উপাদানগুলাের অভাবে উদ্ভিদ সুষ্ঠুভাবে বাঁচতে পারে না। এ উপাদানগুলােকে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান। বলে। এ সকল পুষ্টি উপাদানের অধিকাংশই উদ্ভিদ মাটি থেকে সংগ্রহ করে বলে এদেরকে খনিজ পুষ্টি | বলা হয়। উদ্ভিদে প্রায় 60টি অজৈব উপাদান শনাক্ত করা হয়েছে, তবে এই 60টি উপাদানের মধ্যে | মাত্র ৫টি উপাদান উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য একান্ত প্রয়ােজনীয়। এ 16টি পুষ্টি উপাদানকে সমষ্টিগতভাবে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান (essential elements) বলা হয়। এই উপাদানগুলাে সব ধরনের উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, শারীরবৃত্তীয় কাজ এবং প্রজননের জন্য প্রয়ােজন। এদের যেকোনাে। একটির অভাব হলে উদ্ভিদে তার অভাবজনিত লক্ষণ (deficiency symptoms) দেখা দেয় এবং পুষ্টির অভাবজনিত রােগের সৃষ্টি হয়। একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদানের কাজ অপরটি দিয়ে সম্পন্ন হয় না। অত্যাবশ্যকীয় ১০টি উপাদানের মধ্যে উদ্ভিদ কোনাে কোনাে উপাদান বেশি পরিমাণে গ্রহণ করে, আবার কোনাে কোনাে উপাদান সামান্য পরিমাণে গ্রহণ করে। উদ্ভিদ কর্তৃক গৃহীত অত্যাবশ্যকীয় খনিজ পুষ্টির। পরিমাণের উপর ভিত্তি করে এদেরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা ম্যাক্রো উপাদান। এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা মাইক্রো উপাদান। (a) ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা ম্যাক্রো উপাদান (macro-nutrient বা macro-element): উদ্ভিদের। স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য যেসব উপাদান বেশি পরিমাণে দরকার হয়, সেগুলােকে ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা ম্যাক্রো উপাদান বলা হয়। ম্যাক্রো উপাদান 10টি, যথা: নাইট্রোজেন (N), পটাশিয়াম (K), ফসফরাস। | (P), ক্যালসিয়াম (ca), ম্যাগনেসিয়াম (Mg), কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন (o), সালফার। (s) এবং লৌহ (Fe)। | (b) মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা মাইক্রো উপাদান (micro-nutrient বা micro-element): উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য যেসব উপাদান অত্যন্ত সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয় তাদেরকে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ৰা মাইক্রো উপাদান বলে। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট চটি, যথা: দস্তা বা জিংক (Zn), ম্যাংগানিজ (Mn), মােলিবডেনাম (Mo), বােরন (B), তামা বা কপার (Cu) এবং ক্লোরিন (cl)। 5.1.1 পুষ্টি উপাদানের উৎস এবং ভূমিকা পুষ্টি উপাদানের উৎস উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদানগুলাের মধ্যে কার্বন এবং অক্সিজেন বায়ুমণ্ডল থেকে গ্রহণ করে। হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন পানি থেকে গ্রহণ করে। অন্যসব উপাদান মাটি থেকে মূলের সাহায্যে শােষণ করে। এ | উপাদানগুলাে মাটিতে বিভিন্ন লবণ হিসেবে থাকে। কিন্তু উদ্ভিদ এগুলােকে লবণ হিসেবে সরাসরি শােষণ করতে পারে না, আয়ন হিসেবে শােষণ করে। যেমন: Ca", Mg", NH4, NO;", K' ইত্যাদি। উদ্ভিদের পুষ্টিতে বিভিন্ন খনিজ উপাদানের ভূমিকা উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন খনিজ পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিছু ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টের ভূমিকার কথা নিচে বর্ণনা করা হলাে। নাইট্রোজেন: নাইট্রেজেন নিউক্লিক অ্যাসিড, প্রােটিন আর ক্লোরােফিলের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। উদ্ভিদের সাধারণ দৈহিক বৃদ্ধিতে নাইট্রোজেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং কোষ কলায় পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে। নাইট্রোজেনের অভাব হলে ক্লোরােফিল সৃষ্টি ব্যাহত হয়, আর ক্লোরােফিল সৃষ্টি ব্যাহত হলে খাদ্য প্রস্তুত বাধাপ্রাপ্ত হয়। খাদ্যপ্রস্তুত বাধাপ্রাপ্ত হলে শ্বসন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে এবং শক্তি নির্গমন হ্রাস পায়। ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরােফিল অণুর একটি গুরুত্বপুর্ণ উপাদান এবং শ্বসন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এর অভাব হলে ক্লোরােফিল অণু সৃষ্টি এবং সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত ব্যাহত হবে। পটাশিয়াম: উদ্ভিদের বহু জৈবিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় পটাশিয়াম সহায়ক হিসেবে কাজ করে। পত্ররন্দ্র খেলা এবং বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে পটাশিয়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। পটাশিয়াম উদ্ভিদে পানি শােষণে সাহায্য করে। কোষবিভাজনের মাধ্যমে উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে পটাশিয়াম। এটি মূল, ফুল ও ফল উৎপাদন এবং বর্ধনেও সাহায্য করে। ফসফরাস: মূল বর্ধনের জন্য ফসফরাস অত্যন্ত প্রয়ােজনীয় উপাদান। ফসফরাস জীবকোষের DNA, | RNA, NADP, ATP প্রভৃতির গাঠনিক উপাদান। কাজেই এটি ছাড়া উদ্ভিদের পুষ্টি একেবারেই সম্ভব নয়। উদ্ভিদের মূল বৃদ্ধির জন্য ফসফরাস অত্যন্ত প্রয়ােজনীয় উপাদান। আয়রন: আয়রন সাইটোক্রোমের সাংগঠনিক উপাদান, কাজেই বায়বীয় শ্বসন এর উপর নির্ভরশীল। | ক্লোরােফিল সৃষ্টিতেও আয়রনের ভূমিকা অপরিসীম। পুষ্টিতে এগুলাের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্যই আমরা ভালাে ফলন পেতে জমিতে নাইট্রোজেন (ইউরিয়া), পটাশিয়াম (মিউরেট অফ পটাশ), ফসফরাস (ট্রিপল সুপার ফসফেট) প্রভৃতি সার ব্যবহার করে থাকি। উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলােও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন: ম্যাংগানিজ: ক্লোরােপ্লাস্ট গঠন ও সংরক্ষণের জন্য ম্যাংগানিজ প্রয়ােজন। কপার: টমেটো, সূর্যমুখী উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য কপার বা তামার প্রয়ােজন, শ্বসন পক্রিয়ার উপরও কপারের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। ৰােরন: উদ্ভিদের সক্রিয়ভাবে বর্ধনশীল অঞ্চলের জন্য বােরন প্রয়ােজন, চিনি পরিবহনে ৰােরন পরােক্ষ | প্রভাব বিস্তার করে। মােলিবডেনাম: অণুজীব দিয়ে বায়বীয় নাইট্রোজেন সংবন্ধনের জন্য মােলিবডেনাম আবশ্যক। ক্লোরিন: সুগারবিট এর মূল এবং কাণ্ডের বৃদ্ধির জন্য ক্লোরিন প্রয়ােজন। 5.1.2 পুষ্টি উপাদানের অভাবজনিত লক্ষণ উদ্ভিদের কোনাে পুষ্টি উপাদানের অভাব হলে বিশেষ লক্ষণের মাধ্যমে উদ্ভিদ তা প্রকাশ করে। এ লক্ষণগুলােকে বলা হয় অভাবজনিত লক্ষণ (delclency symptoms)। এ লক্ষণ দেখে আমরা বুঝতে পারি কোন উদ্ভিদ বা ফসলে কোন পুষ্টি উপাদানের অভাব রয়েছে। নিচে কিছু উপাদানের অভাবজনিত লক্ষশ উল্লেখ করা হলো: चावनिक मन | লোপাকা উদ্ভিদ। নাইট্রোজেন (M): নাইট্রোজেনের অভাব হলে ক্লোরােফিল সৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটে। ক্লোরােফিলের অভাবে পাতার সবুজ রং হালকা হতে হতে একসময় হলুদ হয়ে যায়। তার কারণ ক্লোরােফিল ছাড়া অন্যান্য বর্ণকণা বা পিগমেন্ট মিলিতভাবে হলুদ দেখায়। পাতা হলুদ হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ক্লোরােসিস (chlorosis) বলে। লৌহ, মাম্পানি বা দস্তার অভাবেও ক্লোরােসিস হতে পারে কেননা এগুলােও ক্লোরােফিল উৎপাদনের সাথে কোনাে না কোনােভাবে জড়িত। ক্লোরােসিসে কোষের বৃদ্ধি এবং বিভাজন হ্রাস পায়, তাই উদ্ভিদের বৃদ্ধি কমে যায়। চিত্রে যথাক্রমে নাইট্রোজেনের ঘাটতিবিশিষ্ট এবং সুস্থ পাতা দেখানাে হয়েছে। ফসফরাস (P): ফসফরাসের অভাব হলে পাতা ৰেপুনি হয়ে যায়। পাতায় মৃত অঞ্চল সৃষ্টি হয় এমনকি পাতা, ফুল ও ফল ঝরে যেতে পারে। উদ্ভিদের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং উজিদ খর্বাকার হয়। বেশিরভাগ সময় খালি। চোখে দেখে ফসফরাসের ঘাটতি বােঝা যায় না। যত দিনে লক্ষশ দৃশ্যমান হয়, তত দিনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আর তেমন কিছু করার থাকে না। পটাশিয়াম (K): পটাশিয়ামের অভাবে পাতার শীর্ষ এবং কিনারা হলুদ হয় এবং মৃত অঞ্চল সুষ্টি হয়। বিশেষ করে পাতার শিরার মধ্যবর্তী স্থানে ক্লোরােসিস হয়ে হলুদবর্ণ ধারণ করে। পাতার কিনারায় পুড়ে যাওয়া সদৃশ বাদামি রং দেখা যায় এবং পাতা কুঁকছে আসে। উদ্ভিদের বৃদ্ধি কম হয় এবং শীর্ষ ও পার্শ্ব মুকুল মরে যায়। ক্যালসিয়াম (a): কোষের সাইটোসলে কালসিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা, মাইটোকক্রিয়া এবং এন্ডােপ্লাজমিক রেটিকুলামেশ্বাভাবিক কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত। মাত্রা কমে গেলে মাইটোকন্দ্রিয়ায় অক্সিডেটিভফসফোরাইলেশন | প্রক্রিয়া এবং এন্ডােপ্লাজমিক রেটিকুলামের প্রােটিন ট্রফিপ্রিক্রিয়াবিপর্যয় |হয়। তাই ক্যালসিয়ামের অভাবে উদ্ভিদের বর্ধনশীল শীর্ণ অঞ্চল, বিশেষ করে পাতার কিনারা বরাবর অঞ্চলগুলো মরে যায়। পাতাকুঁকড়ে যায়, ফুল ফোটার সময় উদ্ভিদের কান্ড শুকিয়ে যায় এবং উদ্ভিদ হঠাৎ নেতিয়ে পড়ে। |্যাগনেসিয়াম (Mg: ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে ক্লোরােফিল সংশ্লেষিত হয় না বলে সবুজ রং হালকা হয়ে যায় এবং সালােকসংশ্লেষণের হার কমে যায়। পাতার নিরাপুলাের মধ্যবর্তী স্থানে অধিক হারে ক্লেরােসিস হয়। লৌহ (Fe): লৌহের অভাবে প্রথমে কচি পারি রং হালকা হয়ে যায়, অৰে পিতার সরু শিরার মধ্যবর্তী স্থানেই প্রথম হালকা হয় এবং কোলোসিস হয়। কখনাে কখনাে সম্পূর্ণ পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়। কভি দূর্বল এবং ছোট হয়। সালফার (s); সালফার উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রােটিন, হরমােন ও ভিটামিনের |পাঠনিক উপাদানই নয়, একই সাথে এটি কোষে পানির সমতা রক্ষ করে। সালফারের অভাবে পাতা হালকা সবুজ হয় এবং পাতায় লাল এবং বেগুনি দাগ দেখা যায়। কচি পাতায় বেশি এবং বয়ােবৃদ্ধ পাতায় কম ক্লোরােসিস হয়। সালফারের অভাবে মূল, কান্ড এবং পাতার শীর্ষ | থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে টিস্য মারা যেতে থাকে, যাকে ভাইৰাক (dieback) বলে। কাণ্ডের মধ্যপর্ব ছােট হয় বলে গাছ খর্বাকৃতির হয়। বােন (B): বােরন কোষপ্রাচীরের কাঠামাের মধ্যে অবস্থান করে | | প্রাচীরটিকে তথা কোষটিকে দৃঢ়তা দেয়। বিপাক ক্রিয়ার বিভিন্ন বিক্রিয়ায় এর নিয়লকের ভূমিকা রয়েছে। তাই বােরনের অভাবে পর্যাপ্ত দৃঢ়তা ন। পেয়ে এবং বিপাকে গােলযােগ হওয়ার কারণে উদ্ভিদের বর্ধনশীল অগ্রভাগ মরে যায়। কচি পাতার বৃদ্ধি কমে যায় এবং পাভ বিকৃত হয়, কাঙ| খসখসে হয়ে ফেটে যায়। ফুলের কুঁড়ির জন্ম ব্যাহত হয়। একক কাজ কাজ: কোন কোন খনিজ মৌলের অভাবে গাছে কী কী অভাবজনিত লক্ষণ দেখা দেয়, শিক্ষক তার একটি তালিকা শিক্ষার্থীদেরকে তৈরি করতে বলবেন। 5.2 প্রাণির খাদ্য ও পুষ্টি | তােমরা ষষ্ঠ এবং অষ্টম শ্রেণিতে জেনেছ, জীবনধারণের জন্য খাদ্য যেমন অপরিহার্য, তেমনি সুস্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য প্রয়ােজন। এই খাদ্যই জীবকোষে জারিত হয়ে দেহে তাপ এবং শক্তি তৈরি করে। তােমরা এর আগের অধ্যায়ে শ্বসন প্রক্রিয়ায় কীভাবে জীবদেহের ভিতরে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপ এবং শক্তি উৎপন্ন হয় সেটা জেনেছ। চলাফেরা, খেলাধুলা ইত্যাদি সব কাজে শক্তির প্রয়োজন। আমরা এই শক্তি পাই খাদ্য থেকে। যেসব বসু খাওয়ার পর দেহে শােষিত হয়ে বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করে, তাকে খাদ্য বলে। এই কাজগুলাে হচ্ছে দেহের পুষ্টিসাধন, দেহের ক্ষয়পূরণ, দেহে রােগ প্রতিরােধক শক্তি উৎপাদন এবং কর্মশক্তি ও তাপ উৎপাদন। 5.2.1 খাদ্যের প্রধান উপাদান ও তার উৎস। সম্মিলিতভাবে আগে উল্লিখিত কাজগুলাে আমাদের জীবনধারণের জন্য প্রয়ােজন। এ কাজগুলাে সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের দরকার হয়। খাদ্য অনেকগুলাে রাসায়নিক বস্তুর সমন্বয়ে গঠিত। এই রাসায়নিক বস্তুগুলােকে খাদ্য উপাদান বলে। এই উপাদানগুলোর মধ্যে পুষ্টি থাকে, তাই খাদ্য উপাদানকে পুষ্টি উপাদানও বলা হয়। অধিকাংশ খাদ্যে একাধিক খাদ্য উপাদান থাকে। কোনাে খাদ্যে যে উপাদানটি বেশি পরিমাণে থাকে, তাকে সেই উপাদানের খাদ্য হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়। উপাদান অনুযায়ী খাদ্যবস্তুকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়: | (a) আমিষ: দেহের বৃদ্ধিসাধন এবং ক্ষয়পূরণ করে। | (b) শর্করা: দেহে শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। (c) স্নেহ ও চর্বিজাতীয় খাদ্য: দেহে তাপ এবং শক্তি উৎপাদন করে। এছাড়া আরও তিন ধরনের উপাদানও দেহের জন্য প্রয়ােজন। যেমন: (d) খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন: রােগ প্রতিরােধ শক্তি বাড়ায় এবং বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উদ্দীপনা যােগায়। (e) খনিজ লবণ: বিভিন্ন জৈবিক কাজে অংশ নেয়। (f) পানি; দেহে পানি এবং তাপের সমতা রক্ষা করে, এছাড়া কোষের কার্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোষ ও তার অঙ্গাণুগুলােকে ধারণ করে। উপরে উল্লেখ করা খাদ্য উপাদানের বাইরে আরও একটি উপাদান রয়েছে, যেটি কোনাে পুষ্টি না জোগালেও একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। (g) খাদ্য আঁশ (Fibre) বা রাফেজ; রাফেজ পানি শােষণ করে এবং মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এবং বৃহদন্ত্র থেকে মল নিষ্কাশনে সাহায্য করে। (a) আমিষ (Protein)। আমিষ বা প্রােটিন-জাতীয় খাদ্য কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন দিয়ে গঠিত। আমিষে শতকরা 16 ভাগ নাইট্রোজেন থাকে। আমিষে সামান্য পরিমাণে সালফার, ফসফরাস এবং আয়রনও থকে। নাইট্রোজেন এবং শেষােক্ত উপাদানগুলাের উপস্থিতির কারণে আমিষের গুরুত্ব শর্করা ও স্নেহ পদার্থ থেকে আলাদা। শুধু আমিষজাতীয় খাদ্যই শরীরে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে বলে পুষ্টিবিজ্ঞানে আমিষকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমিষের উৎস: আমরা আগেই জেনেছি মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, শিমের বীচি, শুটকি মাছ, চিনাবাদাম ইত্যাদি থেকে আমরা আমিষ পাই। উৎস অনুযায়ী আমিষ দুই ধরনের: প্রাণিজ আমিষ এবং উদ্ভিজ্জ আমিষ। প্রাণিজ আমিষ: মাছ, মাংস, ডিম, পনির, ছানা, কলিজা বা যকৃৎ ইত্যাদি প্রাণিজ আমিষ। এসব খাদ্যে দেহের | প্রয়ােজনীয় অ্যামাইনাে এসিড পাওয়া যায়। উদ্ভিজ্জ আমিষ: ডাল, চিনাবাদাম, শিমের বীচি ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ আমিষ। একসময় ধারণা করা হতাে এগুলাে প্রাণিজ | আমিষের তুলনায় কম পুষ্টিকর, কারণ উদ্ভিজ্জ আমিষে প্রয়ােজনীয় সব কয়টি অ্যামাইনাে এসিড থাকে না। কিন্তু | প্রকৃতপক্ষে উদ্ভিজ্জ আমিষ প্রাণিজ আমিষের মতােই সকল অ্যামাইনাে এসিড পর্যাপ্ত পরিমাণে ধারণ করে।

প্রধান শব্দভিত্তিক সারসংক্ষেপ



♦ জীববৈচিত্র্য : জীবের জিনগত, প্রজাতিগত ও পরিবেশগত বৈচিত্র্যকে একসঙ্গে জীববৈচিত্র্য বলা হয়।