জীবদেহে কোষের ভিতরে অসংখ্য রাসায়নিক ক্রিয়া ঘটে। এতে জীবদেহের শারীরবৃত্তীয় কাজগুলাে সুচারুরূপে সম্পাদিত হয়, জীব বেঁচে থাকে। রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন কিছু পদার্থ দেহের জন্য | অপরিহার্য আবার কিছু পদার্থ দেহের জন্য ক্ষতিকর। এই ক্ষতিকর পদার্থগুলাে দেহ থেকে বের করে দেওয়া খুবই জরুরি। যেমন শ্বসনের সময় গ্লুকোজ ভেঙে কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়, রক্ত এই কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে ফুসফুসে নিয়ে যায় এবং ফুসফুস থেকে দেহের বাইরে নির্গত হয়। একইভাবে বৃক্ক বা কিডনি নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য ও অতিরিক্ত অম্ন শরীর থেকে বের করে দেয়। এ অধ্যায়ে দেহ থেকে বৃক্ক কর্তৃক ঘটিত বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন এবং বৃক্কের নানা রােগ সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে।
এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা:
• মানুষের রেচন ব্যাখ্যা করতে পারব। • মানবদেহে উৎপন্ন রেচন পদার্থের বর্ণনা করতে পারব। • বৃক্কের গঠন ও কাজ বর্ণনা করতে পারব। • নেফ্রনের গঠন ও কাজ বর্ণনা করতে পারব। • অসমােরেগুলেশনে বৃক্কের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব। • বৃক্কে পাথর সৃষ্টি প্রতিরােধ এবং প্রতিকার বর্ণনা করতে পারব। • বৃক্ক বিকলের লক্ষণ ও করণীয় বর্ণনা করতে পারব। • বুকের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে ডায়ালাইসিসের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব। • বৃক্ক প্রতিস্থাপন এবং মরণােত্তর বৃক্কদানের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব। • মূত্রনালির রােগ ও সুস্থ থাকার উপায় বর্ণনা করতে পারব।
মরণােত্তর বৃক্কদান বিষয়ে জনমত নিরূপণের একটি অনুসন্ধান কাজ করতে পারব। • মানববৃক্ক ও নেফ্রনের চিত্র অঙ্কন করে চিহ্নিত করতে পারব। • সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মরণােত্তর বৃক্ক দান বিষয়ে পােস্টার অঙ্কন করতে পারব। • বৃক্ক ও মূত্রনালির সুস্থতা রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি করতে লিফলেট অঙ্কন করতে পারব। • বৃক্ক ও মূত্রনালির সুস্থতায় সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারব। • মরণােত্তর বৃক্কদান বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারব।
৪.1 রেচন
রেচন মানবদেহের একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দেহে বিপাক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থগুলাে বের করে দেওয়া হয়। দেহের এই বর্জ্য পদার্থগুলাে শরীরে কোনাে কারণে জমতে থাকলে নানা রকমের অসুখ দেখা দেয়, পরবর্তীতে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। যে তন্ত্রের মাধ্যমে দেহের বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশিত হয়, তাকে রেচনতন্ত্র বলে। শরীরের অতিরিক্ত পানি, লবণ এবং জৈব পদার্থগুলাে সাধারণত রেচনের মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দিয়ে বৃক্ক দেহের শারীরবৃত্তীয় ভারসাম্য রক্ষা করে। মানবদেহের রেচন অঙ্গ হলাে কিডনি অথবা বৃক্ক। আর বুকের একক হলে নেন।
রেচন পদার্থ রেচন পদার্থ বলতে মূলত নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থকে বােঝায়। মানবদেহের রেচন পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে
বের হয়ে আসে। মূত্রের প্রায় 90 ভাগ উপাদান হচ্ছে পানি। অন্যান্য উপাদানের মধ্যে আছে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন ও বিভিন্ন ধরনের লবণ। ইউরােক্রোম নামে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতিতে মূত্রের রং হালকা হলুদ হয়। আমিষজাতীয় খাদ্য খেলে মূত্রের অম্লতা বৃদ্ধি পায় আবার ফলমূল এবং তরিতরকারি খেলে সাধারণত ক্ষারীয় মূত্র তৈরি হয়।
8.2 বৃক্ক (Kidney)। মানবদেহের উদরগহ্বরের পিছনের অংশে, মেরুদণ্ডের দুদিকে বক্ষপিঞ্জরের নিচে পিঠ-সংলগ্ন অবস্থায় দুটি বৃক্ক অবস্থান করে। প্রতিটি বৃক্ক দেখতে শিমবিচির মতাে এবং এর রং লালচে হয়। বৃক্কের বাইরের | পার্শ্ব উত্তল এবং ভিতরের পার্শ্ব অবতল হয়। অবতল অংশের ভাঁজকে হাইলাস (Hilus) বা হাইলাম বলে। হাইলামের ভিতর থেকে ইউরেটার এবং রেনাল শিরা বের হয় এবং রেনাল ধমনি বুকে প্রবেশ করে। দুটি বৃক্ক থেকে দুটি ইউরেটার বের হয়ে মূত্রাশয়ে প্রবেশ করে। ইউরেটারের ফানেল আকৃতির প্রশস্ত অংশকে রেনাল পেলভিস বলে। বুক সম্পূর্ণরূপে এক ধরনের তন্তুময় আবরণ দিয়ে বেষ্টিত থাকে, একে রেনাল ক্যাপসুল বলে।
ক্যাপসুল-সংলগ্ন অংশকে কর্টেক্স এবং ভিতরের অংশকে মেডুলা বলে। উভয় অঞ্চলই যােজক কলা এবং
রক্তবাহী নালি দিয়ে গঠিত। মেডুলায় সাধারণত ৪-12টি রেনাল পিরামিড থাকে। এদের অগ্রভাগ প্রসারিত হয়ে রেনাল প্যাপিলা (Papilla) গঠন করে। এসব প্যাপিলা সরাসরি পেলভিসে উন্মুক্ত হয়। প্রতিটি বৃক্কে বিশেষ এক ধরনের নালিকা থাকে, যাকে ইউরিনিফেরাস নালিকা বলে। প্রতিটি ইউরিনিফেরাস নালিকা, নেফ্রন, (Nephron) এবং সংগ্রাহক বা সংগ্রাহী নালিকা (collecting tubule)-এই দু'টি | প্রধান অংশে বিভক্ত। নেফ্রন মূত্র তৈরি করে আর সংগ্রাহী নালিকা রেনাল পেলভিসে মূত্র বহন করে।
বৃক্কের ইউরিনিফেরাস নালিকার ক্ষরণকারী অংশ এবং কাজ করার একককে নেফ্রন বলে। মানবদেহের প্রতিটি বৃক্কে প্রায় 10-12 লক্ষ নেফ্রন থাকে। প্রতিটি নেফ্রন একটি রেনাল করপাসল (Renal corpuscle) বা মালপিজিয়ান অঙ্গ এবং রেনাল টিউবুল (Renal tubule) নিয়ে গঠিত।
প্রতিটি রেনাল করপাসল আবার গ্লোমেরুলাস (Glomerulus) এবং বােম্যান্স ক্যাপসুল— এ দুটি অংশে। | বিভক্ত। বােম্যান্স ক্যাপসুল গ্লোমেরুলাসকে বেষ্টন করে থাকে। বােম্যান্স ক্যাপসুল দুই স্তরবিশিষ্ট পেয়ালার মতাে প্রসারিত একটি অংশ। গ্লোমেরুলাস একগুচ্ছ কৈশিক
জালিকা দিয়ে তৈরি। রেনাল ধমনি থেকে সৃষ্ট অ্যাফারেন্ট আর্টারিওল (Afferent arteriole) ক্যাপসুলের। ভিতরে ঢুকে প্রায় 50টি কৈশিকনালিকা তৈরি করে। এগুলাে আবার বিভক্ত হয়ে সূক্ষ্ম রক্তজালিকার সৃষ্টি। করে। এসব জালিকার কৈশিকনালিগুলাে মিলিত হয়ে ইফারেন্ট অ্যার্টারিওল (Efferent arteriole)। সৃষ্টি করে এবং ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসে। গ্লোমেরুলাস ছাঁকনির মতাে কাজ করে রক্ত থেকে পরিস্রত তরল উৎপন্ন করে। এই তরলকে বলে | আন্দ্রাফিলট্রেট। সেই আন্ট্রাফিলট্রেট রেনাল টিউলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় আরও কয়েক দফা শােষণ এবং নিঃসরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। সবশেষে যে তরলটি পাওয়া যায়, সেটিই মূত্র, যা সংগ্রাহী নালিকার মধ্য দিয়ে ইউরেটার হয়ে মূত্রথলিতে জমা হতে থাকে। বােমলেন্স ক্যাপসুলে অক্ষিয়দেশ থেকে সংগ্রাহী নালি পর্যন্ত বিস্তৃত চওড়া নালিকাটিকে রেনাল টিউবুল বলে। প্রতিটি রেনাল টিউবুল 3টি অংশে বিভক্ত, গােড়াদেশীয় বা নিকটবর্তী প্যাঁচানাে নালিকা (Proximal convoluted tubule), হেনলি-র লুপ (Henle's loop) এবং প্রান্তীয় প্যাঁচানাে নালিকা (Distal convoluted tubule)
একক কাজ
কাজ: মানবৃক্ক এবং নেফ্রনের চিত্র অঙ্কন করে চিহ্নিত কর।
বৃক্কের কাজ
একজন স্বাভাবিক মানুষ প্রতিদিন প্রায় 1500 মিলিলিটার মূত্র ত্যাগ করে। মূত্রে ইউরিয়া, ইউরিক । এসিড, অ্যামােনিয়া, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি নাইট্রোজেনঘটিত পদার্থ থাকে। এগুলাে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এসব অপ্রয়ােজনীয় এবং ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে অপসারণে বৃক্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৃক্ক বা কিডনির ভিতরের নেফ্রন একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে মূত্র উৎপন্ন করে। উৎপন্ন মূত্র সংগ্রাহী নালিকার মাধ্যমে বৃক্কের পেলভিসে পেঁৗছায় এবং পেলভিস থেকে ইউরেটারের ফানেল আকৃতির প্রশস্ত অংশ বেয়ে ইউরেটারে প্রবেশ করে। ইউরেটার থেকে মূত্র মূত্রথলিতে আসে এবং সাময়িকভাবে জমা থাকে। মূত্র দিয়ে মূত্রথলি একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত পূর্ণ। হলে মূত্র ত্যাগের ইচ্ছা জাগে এবং মূত্রথলির নিচের দিকে অবস্থিত ছিদ্রপথে মূত্রনালির মাধ্যমে দেহের | বাইরে বেরিয়ে আসে। এভাবে বৃক্ক বা কিডনি মানবদেহ থেকে ক্ষতিকর নাইট্রোজেন জাতীয় পদার্থসহ বিভিন্ন বর্জ্য অপসারণ করে। বুক মানবদেহে সােডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড ইত্যাদির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়াও মানবদেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পানি, অম্ল এবং ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।
একক কাজ
কাজ: পরের পৃষ্ঠার ছকে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে কোন অঙ্গ কীভাবে অংশ নেয় তা লেখ।
অগ
।
বর্জ্য পদার্থ কার্বন ডাই-অক্সাইড নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ ইউরিয়া, ইউরিক এসিড অতিরিক্ত পানি
অসমােরেগুলেশনে বৃক্কের ভূমিকা: যাবতীয় শারীরবৃত্তিক কাজ সম্পাদনের জন্য মানবদেহে পরিমিত পানি থাকা অপরিহার্য। মূলত মূত্রের। মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি পানি দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। দেহের পানিসাম্য নিয়ন্ত্রণে বৃক্ক প্রধান ভূমিকা পালন করে। বৃক্ক নেফ্রনের মাধমে পুনঃশােষণ প্রক্রিয়ায় দেহে পানির সমতা বজায় রাখে। গ্লোমেরুলাসে রেচন বর্জ্য, পানি এবং অন্যান্য তরল পদার্থ পরিসুত হয়। বৃক্ক অকার্যকর হয়ে গেলে দেহে পানি জমতে থাকে। চোখ মুখসহ সারা শরীর ফুলে যেতে পারে, এমনকি উচ্চ রক্তচাপও সৃষ্টি হতে পারে। এগুলাে প্রকৃতপক্ষে অসমােরেগুলেশন জনিত তুটির লক্ষণ।
বুকে পাথর। নানারকম রােগের কারণে বৃক্ক বা কিডনির স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটে। কিডনির প্রদাহ, প্রস্রাবে সমস্যা, কিডনিতে পাথর হওয়া এর মাঝে উল্লেখযােগ্য। কিডনির রােগের লক্ষণগুলাে হলো শরীর ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবে অতিরিক্ত প্রােটিন যাওয়া, রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপােড়া করা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা ক্ষেত্রবিশেষে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া। মানুষের কিডনিতে ছােট আকারের পাথর জাতীয় পদার্থের সৃষ্টিই বুক বা কিডনির পাথর হিসেবে পরিচিত। কিডনিতে পাথর সবারই হতে পারে, তবে দেখা গেছে, মেয়েদের থেকে পুরুষের পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি। অতিরিক্ত শারীরিক ওজন, কিডনির সক্ৰমণ, কম পানি পান করা ইত্যাদি বৃক্ক বা কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ হতে পারে। প্রাথমিকভাবে বৃক্কে পাথর হলে তেমন সমস্যা ধরা পড়ে না। সমস্যা হয় যখন পাথর প্রস্রাব নালিতে চলে আসে এবং প্রস্রাবে বাধা দেয়। উপসর্গ হিসেবে কোমরের পিছনে ব্যথা হবে। অনেকের প্রস্রাবের সাথে। বন্ত বের হয়। অনেক সময় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। বৃক্কের পাথরের চিকিৎসা নির্ভর করে পাথরের আকার এবং অবস্থানের উপর। সাধারণত অধিক পানি গ্রহণ এবং ঔষধ সেবনে পাথর অপসারণ করা যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে ইউরেটারােস্কোপিক কিংবা আল্টাসনিক লিথট্রিপসি অথবা বৃকে অস্ত্রোপচার করে পাথর অপসারণ করা যায়।
৪.3 বৃক্ক বিকল, ডায়ালাইসিস ও প্রতিস্থাপন নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে পাথর ইত্যাদি কারণে কিডনি ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যায়। আকস্মিক কিডনি অকেজো বা বিকল হওয়ার কারণগুলাে হলাে কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মারাত্মক ডায়রিয়া, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। কিডনি বিকল হলে মূত্রের পরিমাণ কমে যাবে। রক্তে ক্রিয়েটিনিন বৃদ্ধি পাবে। তখন রক্তের বর্জ্য দ্রব্যাদি। অপসারণের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর পর রােগীকে ডায়ালাইসিস করা হয়।
ডায়ালাইসিস (Dialysis) | বুক সম্পূর্ণ অকেজো বা বিকল হওয়ার পর বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ত পরিশােধিত করার নাম ডায়ালাইসিস।
সাধারণত ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে রক্ত পরিশােধিত করা হয়। এ মেশিনের ডায়ালাইসিস টিউবটির এক প্রান্ত রােগীর হাতের কজির ধমনির সাথে এবং অন্য প্রান্ত ঐ হাতের কজির শিরার সাথে সংযােজন করা হয়। ধমনি থেকে রক্ত ডায়ালাইসিস টিউবের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করানাে হয়। এর প্রাচীর আংশিক বৈষম্যভেদ্য হওয়ায় ইউরিয়া, ইউরিক এসিড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ বাইরে বেরিয়ে আসে। পরিশােধিত রক্ত রােগীর দেহের শিরার মধ্য দিয়ে দেহের ভিতর পুনরায় প্রবেশ করে। এখানে উল্লেখ্য, ডায়ালাইসিস টিউবটি এমন একটি তরলের মধ্যে ডুবানাে থাকে, যার গঠন রক্তের প্লাজমার
অনুরূপ হয়। এভাবে ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ (ইউরিয়া এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ) বাইরে নিষ্কাশিত হয়। তবে এটি একটি ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।
প্রতিস্থাপন। যখন কোনাে ব্যক্তির কিডনি বিকল বা অকেজো হয়ে পড়ে তখন কোনাে সুস্থ ব্যক্তির কিডনি তার দেহে। প্রতিস্থাপন করা যায়, তাকে কিডনি সংযােজন বলে। কিডনি সংযােজন দুভাবে করা যায়: কোনাে নিকট আত্মীয়ের কিডনি অথবা কোনাে মৃত ব্যক্তির কিডনি রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়। নিকট আত্মীয় বলতে বাবা, মা, ভাইবােন, মামা, খালাকে বােঝায়। মৃত ব্যক্তি বলতে “ব্রেন ডেড' মানুষকে বােঝায়, যাঁর। আর কখনােই জ্ঞান ফিরবে না কিন্তু তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কৃত্রিমভাবে জীবিত রাখা হয়েছে। মরণোত্তর চক্ষুদানের মতাে মরণােত্তর বৃক দানের মাধ্যমে একজন কিডনি বিকল রােগীর জীবন বাঁচানাে সম্ভবপর। হতে পারে। মরণােত্তর সুস্থ কিডনি দানে মানবজাতির উপকার করা যায়। পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ কিডনি অকেজো রােগী কিডনি সংযােজনের মাধ্যমে সুস্থ জীবন যাপন করছে। আমাদের দেশেও কিডনি সংযােজন কার্যক্রম সাফল্যের সাথে করা হচ্ছে। তবে আমিাদের দেশে আইনগত জটিলতার কারণে রক্তের সম্পর্ক না থাকলে রােগীকে কিডনি দান করা যায় না, এজন্য অনেক সময় রােগী জরুরি কিডনি প্রতিস্থাপন থেকে বঞ্চিত হন। একটি কিডনি কার্যক্ষম থাকলেই সেটি দিয়েই জীবনধারণ করা সম্ভব, তাই একটি সুস্থ কিডনি প্রতিস্থাপন করে রােগের চিকিৎসা করা যায়। তবে। দেখতে হবে যে টিস্যু ম্যাচ করে কি না। পিতামাতা, ভাইবােন এবং নিকট আত্মীয়ের কিডনির টিস্যু ম্যাচ। হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে, দৈনিক অপর্যাপ্ত পানি পান করলে এবং অন্যান্য নানা কারণে মূত্রনালির রােগ দেখা দেয়। মূত্রনালির সংক্রমণ হলে মূত্রনালি জ্বালাপােড়াসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। গুপ্তারের সত্বর পরামর্শ এবং চিকিৎসা গ্রহণে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ আরােগ্য লাভ করা সম্ভব। আগে ধারণা করা হতাে, সবার দৈনিক আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে আধুনিক গবেষণায় দেখা যায়, পানি পানের স্বাভাবিক মাত্র ব্যক্তি, লিঙ্গ, কাজের ধরন, শারীরিক অসুস্থতার প্রকৃতি এবং আবহাওয়া ভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং প্রয়ােজনের অতিরিক্ত পানি পান করা ঠিক নয়। তাই পিপাসা পেলেই পানি পান করা উচিত।
সতর্কতা অনেকে ডায়রিয়া বা বমি হওয়া ছাড়াই গরমে ঘেমে গেলে, ক্লান্ত অবস্থায় কিংবা তেমন কোনাে কারণ। ছাড়াই খাবার স্যালাইন পান করে থাকেন। এটি একেবারেই ঠিক নয়, বিশেষ করে বয়স্ক মানুষের। বেলায় ডায়রিয়া বা বমি ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাবার স্যালাইন বিপদ ডেকে আনতে পারে। এমনকি ডায়রিয়া বা বমি হলেও তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মােতাবেক সঠিক পরিমাণে স্যালাইন দিতে হবে। সাধারণ ক্লান্তি বা ঘামের ক্ষেত্রে লেবুর রস এবং সামান্য লবণমিশ্রিত শরবতই যথেষ্ট। ডায়াবেটিস।
থাকলে এতে কিছুটা চিনিও যােগ করা যেতে পারে।
একক কাজ।
কাজ: মরণােত্তর বৃক্কদানের বিষয়ে পােস্টার অঙ্কন কর ও শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।
মূত্রনালি সুস্থ রাখার উপায় শিশুদের টনসিল এবং খােসপাঁচড়া থেকে সাবধান হওয়া প্রয়ােজন; কেননা সেখান থেকে কিডনির অসুখ হতে পারে। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। ডায়রিয়া ও রক্তক্ষরণ ইত্যাদির দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে। ধূমপান ত্যাগ করা এবং ব্যথা নিরাময়ের ঔষধ যথাসম্ভব পরিহার করা প্রয়ােজন। পরিমাণমতাে পানি পান করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, নিয়ম মেনে জীবন যাপন করতে হবে।
একক কাজ
কাজ: কীভাবে বৃক্ক ও মূত্রনালির সুস্থতা রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে দলগতভাবে লিফলেট তৈরি কর।
অনুশীলনী
(৭) সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
1. ডায়ালাইসিস কী? 2. মালপিজিয়ান অঙ্গ কাকে বলে? 3, পেলভিস কাকে বলে? 4. রেচন পদার্থ বলতে কী বােঝায়? 5. বৃকে পাথর বলতে কী বােঝায়?
(3) রচনামূলক প্রশ্ন 1. মূত্রনালি সুস্থ রাখার উপায়গুলাে ব্যাখ্যা কর।
| খে ) বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
1. ইউরিয়া কোথায় তৈরি হয়?
ক. বৃক্কে খ, যকৃতে গ. দেহকোষে ঘ. রেনাল ধমনিতে 2. বৃক্তে পাথর হওয়ার আশঙ্কা কমে
i. শারীরিক ওজন হ্রাস পেলে ii. কম পানি পান করলে iii. স্বল্প পরিমাণ আমিষ খেলে। নিচের কোনটি সঠিক? ক. i ও ii খ. i ও iii গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উদ্দীপকটি পড়ে 3 ও 4 নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও। তান্নি পানি ও অন্যান্য খাদ্র গ্রহণে নিয়মনীতি মেনে চলে না। ইদানীং তার মূত্রের পরিমাণ কম হওয়াসহ কোমরের পিছনে ব্যথা হচ্ছে। 3. তান্নির দেহে উক্ত উপাদানটি কম হওয়ার কারণ—
i, ঘাম বেশি হওয়া ii. ফল কম খাওয়া iii. লবণাক্ত খাদ্য গ্রহণ। নিচের কোনটি সঠিক? (ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii (ঘ) i, ii ও iii
4. ভাগ্নির শরীরের উক্ত সমস্যার কারণ
i. শরীরে পানি আসা ii. মূত্রনালির প্রদাহ iii. প্রস্রাবের সাথে শর্করা যাওয়া
নিচের কোনটি সঠিক? ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
O) সৃজনশীল প্রশ্ন
ক. মেডুলা কী? খ, গ্লোমেরুলাস বলতে কী বােঝায়? প, চিত্র A কে ছাঁকনির সাথে তুলনা করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর। ঘ, চিত্র A বিকল হলে কীভাবে এর প্রতিরােধ-ব্যবস্থা গ্রহণ করবে মতামত। দীও।
ছি। A
▣ প্রধান শব্দভিত্তিক সারসংক্ষেপ
♦ জীববৈচিত্র্য : জীবের জিনগত, প্রজাতিগত ও পরিবেশগত বৈচিত্র্যকে একসঙ্গে জীববৈচিত্র্য বলা হয়।