পান্থপাদপ হচ্ছে স্ট্রেলিটজিয়াসি পরিবারে রাভেনালা গণের একমাত্র প্রজাতি। এটিকে বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ায় আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে বা গৃহে চাষাবাদ করা হয় যা বাগানের শোভাবর্ধন করে। এটি আকারে পাম গাছের ন্যায়।
পান্থপাদপ ছোট খাড়া বৃক্ষ, ৮ মিটার পর্যন্ত উঁচু, দেহকান্ড পামের ন্যায়, পত্রের গোড়ার চিহ্নসহ শক্ত। পত্র দ্বিসারি, খাটো এবং প্রশস্ত গোড়া সীথযুক্ত যা সাধারণত পানি ধারণ করে, পত্রবৃন্ত লম্বা, এমনকি পত্রফলক থেকে অপেক্ষাকৃত লম্বা, পত্রফলক কলার পত্রের ন্যায়, মধ্যশিরা সুস্পষ্ট, গৌণ শিরা সমান্তরাল।
এদের পুষ্পমঞ্জরী অক্ষীয় স্পাইক। পুষ্প উভলিঙ্গ, গর্ভশীর্ষপুষ্পী, নৌকা আকৃতির ভৌম পুষ্পদন্ডে বিন্যস্ত। ৬টি পুষ্পপুটাংশসহ পুষ্পপুট ২টি চক্রে বিন্যস্ত, কদাচিৎ বৃত্যংশ এবং পাপড়িতে পৃথক করা যায়। বৃত্যংশ (বাইরের চক্রের সদস্য) ৩টি, চিকন, সমান, ২০ সেমি পর্যন্ত লম্বা। পাপড়ি (ভিতরের চক্রের সদস্য) ৩টি, পার্শ্বীয়টি বৃত্যংশের ন্যায়, মধ্যটি অপেক্ষাকৃত খাটো। পুংকেশর ৬টি, ১০-১২ সেমি লম্বা। গর্ভপত্র ৩টি, সংযুক্ত, অধোগর্ভ, গর্ভাশয় ৩-কোষবিশিষ্ট, প্রতি কোষে ডিম্বক অসংখ্য। ফল ৩-কোষবিশিষ্ট ক্যাপসিউল, কাষ্ঠল, ৩ কোণাকৃতির, ৩টি কপাটিকা দ্বারা উন্মুক্ত। বীজ অসংখ্য, শক্ত, উজ্জ্বল নীল তন্তু দ্বারা আবৃত থাকে। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে জুন থেকে অক্টোবর মাসে। ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২২।
চাষ পদ্ধতি: পান্থপাদপ উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়ায় উর্বর মাটিতে ভাল জন্মে বাগানের জমির পরিমাণ বেশি হলে দৃষ্টিনন্দন এই গাছটি লাগানো হয়। বংশ বিস্তার হয় ঊর্ধ্ব ধাবক চারা ও বীজ দ্বারা।
বিস্তৃতি: মালাগাসি রিপাবলিক (পূর্বের মাদাগাস্কার) এর স্থানীয় প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রজাতিটি আবাদ করা হয়। অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক: বাগানে লনের চারদিক, রাস্তার কিনারা এবং বাড়ীর প্রবেশ পথে সৌন্দর্য বর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে আবাদ করা হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: পথিক পানি পান করে যা ইহার প্রশস্ত সীথযুক্ত পাতার গোড়ায় পানি সঞ্চয় করে রাখে।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) পান্থপাদপ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র সংকেটর কারণ নেই এবং এটি বাংলাদেশের বর্তমান মান অবস্থায় আশংকা মুক্ত । এটি বাংলাদেশে সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি এবং শীঘ্র সংরক্ষণের পদক্ষেপ নিষ্প্রয়োজন।
ঝাউ
ইংরেজি নাম:
বৈজ্ঞানিক নাম: Tamarix dioica
ঝাউ( Salt Cedar, Tamarix, Tamarisk etc) একটি চিরসবুজ গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Tamarix dioica। এটি Tamaricaceae পরিবারের Tamaricaceae গোত্রে অন্তভূক্ত। এই গাছ ১ থেকে ১৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। সাধারণ এই জাতীয় গাছ লবণাক্ত মাটিতে ভালো জন্মে। এই কারণে এই গণের উদ্ভিদ সমুদ্র উপকূলে প্রচুর জন্মে। তবে ক্ষারযুক্ত মাটিতেও এরা টিকে থাকতে পারে। এই গাছের কাণ্ড এবং শাখা সরল এবং গোলকার। এদের পাতা সরু সরু এবং গুচ্ছাকারে থাকে। পাতাগুলো ১-২ মিলিমিটার লম্বা হয়। এবং শাখার অগ্রভাগে সরু ফলকের মতো ছড়ানো থাকে। এদের নবীন শাখাগুলো বেশ মসৃণ এবং লালচে বা বাদামি রঙের হয়। কিন্তু পুরানো ডালের রঙ হয় নীলাভ-লাল বা লাচে হয়। এদের ফুল ধরে সেপ্টেম্বর মাসের দিকে। এই গণের উদ্ভিদগুলো শাখা, মূল বা বীজের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে। এই গাছ বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মায়। এই গাছ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
উপকারিতাঃ ১। ঝাউ বীজ চূর্ণ করে মিছরি চূর্ণ মিশিয়ে গরম দুধসহ সেবন করলে শুক্রতারল্য দূর হবে।
২। ঝাউ গাছের পাতা সিদ্ধ করে নিয়মিত খেলে দীর্ঘদিন সেবন করলে হাঁপানি ভালো।
৩। বিষাক্ত পোকা দংশন করলে ঝাউ গাছের মূলের ছাল বেটে দংশনস্হানে দিলে বিষক্রিয়া নষ্ট হয়।
৪। ঝাউ গাছের বীজ ঘষে চোখে কাজলের মতো করে লাগালে উপকার হয়।