প্রতিটি জীবের দেহ কোষ দিয়ে গঠিত। এক কোষী জীবগুলো কোষ বিভাজনের দ্বারা একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি কোষে বিভক্ত হয় এবং এভাবে বংশবৃদ্ধি করে। বহুকোষী জীবদের দেহ কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে জীবদেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটে। ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পর বহুকোষী জীবদের জীবন শুরু হয় একটি মাত্র কোষ থেকে। নিষিক্ত ডিম্বাণু অর্থাৎ এককোষী জাইগোট ক্রমাগত বিভাজিত হয়ে সৃষ্টি করে লক্ষ লক্ষ কোষ নিয়ে গঠিত বিশাল দেহ।
এ অধ্যায় শেষে আমরা-
* কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ ব্যাখ্যা করতে পারব।
* কোষ বিভাজনের মাধ্যমে জীব দেহের বৃদ্ধি ব্যাখ্যা করতে পারব।
* জীবের বংশগতির ধারা রক্ষায় কোষ বিভাজনের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব।
পাঠ ১ : কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ
জীবদেহে তিন ধরনের কোষ বিভাজন দেখা যায়, যথা- (১) অ্যামাইটোসিস (২) মাইটোসিস এবং (৩) মিয়োসিস।
অ্যামাইটোসিস : এই ধরনের কোষ বিভাজন ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট, ছত্রাক, অ্যামিবা ইত্যাদি এককোষী জীবে হয়। এককোষী জীবগুলো অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে বংশবৃদ্ধি করে। এ ধরনের কোষ বিভাজনে নিউক্লিয়াসটি ডাম্বেলের আকার ধারণ করে এবং প্রায় মাঝ বরাবর সংকুচিত হয়ে ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। এর সাথে সাথে সাইটোপ- াজমও মাঝ বরাবর সংকুচিত হয়ে দুটি কোষে পরিণত হয়। এ ধরনের বিভাজনে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ- াজম সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে তাই একে প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে।
মাইটোসিস : উন্নত শ্রেণির প্রাণীর ও উদ্ভিদের দেহ কোষ মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস একবার বিভাজিত হয়ে সমআকৃতির সমগুণ সম্পন্ন ও সমসংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট দুটি অপত্য কোষ জীবের বৃদ্ধি ও বংশগতি ১৩ চিত্র ২.২ : এই চিত্র থেকে তুমি কী বুঝলে? সৃষ্টি করে। মাইটোসিস কোষ বিভাজনের ফলে প্রাণী ও উদ্ভিদ দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বৃদ্ধি পায়। উদ্ভিদের ভাজক টিস্যুর কোষ এ ধরনের কোষ বিভাজনের দ্বারা কোষের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটায়। মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজন জনন কোষ উৎপন্নের সময় ঘটে। এ ধরনের কোষ বিভাজনে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি পরপর দুবার বিভাজিত হলেও ক্রোমোজোমের বিভাজন ঘটে মাত্র একবার। ফলে অপত্য কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায়। এ বিভাজনে ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেক হ্রাস পায় বলে এ ধরনের বিভাজনকে হ্রাসমূলক বিভাজনও বলা হয়। জনন মাতৃকোষে থেকে পুং ও স্ত্রী গ্যামেট উৎপন্নের সময় এ ধরনের কোষ বিভাজন হয়।
মাইটোসিস
মাইটোসিসের বৈশিষ্ট্য
১. মাইটোসিস কোষ বিভাজন দেহকোষের এক ধরনের বিভাজন পদ্ধতি।
২. এ প্রক্রিয়ায় মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি একবার মাত্র বিভাজিত হয়।
৩. মাতৃকোষটি বিভাজিত হয়ে সমগুণ সম্পন্ন দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে।
৪. এ ধরনের বিভাজনে মাতৃকোষের ক্রোমোজোমের সংখ্যা এবং অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা সমান থাকে অর্থাৎ ক্রোমোজোম সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে।
৫. এ ধরনের বিভাজনে প্রতিটি ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে দুভাগে বিভক্ত হয়। ফলে সৃষ্ট নতুন কোষ দুটিতে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার সমান থাকে। তাই মাইটোসিসকে ইকুয়েশনাল বা সমীকরণিক বিভাজনও বলা হয়।
মাইটোসিস কোথায় হয়?
মাইটোসিস বিভাজন প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত জীবদেহের দেহকোষে ঘটে, উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশের ভাজক টিস্যু যেমন- কাণ্ড, মূলের অগ্রভাগ, ভ্রূণমুকুল ও ভ্রূণমূল, বর্ধনশীল পাতা, মুকুল ইত্যাদিতে এ রকম বিভাজন দেখা যায়।
প্রাণিদেহের দেহকোষে, ভ্র ূণের পরিবর্ধনের সময়, নিম্নশ্রেণির প্রাণীর ও উদ্ভিদের অযৌন জননের সময় এ ধরনের বিভাজন হয়।
ক্রোমোজোম সেন্ট্রোজোম নিউক্লিয়াস নিউক্লিওলাস ক্রোমাটিন নিউক্লীয় পর্দা মাতৃকোষ সাইটোপ্লাজম সেন্ট্রিওল নিউক্লিয়াস প্রোফেজ প্রোফেজ (প্রথমাবস্থা) নিউক্লিওলাস ক্রোমাটিন ক্রোমোজোম ক্রোমাটিড প্রোফেজ (শেষাবস্থা) নিউক্লীয় পর্দা নিউক্লিয়াস সেন্ট্রোমিটার উদ্ভিদকোষ
কোন কোন কোষে মাইটোসিস বিভাজন ঘটে না?
প্রাণীদের স্নায়ুটিস্যুর স্নায়ুকোষে, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের পরিণত লোহিত রক্ত কণিকা ও অনুচক্রিকা এবং উদ্ভিদের স্থায়ী টিস্যুর কোষে এ ধরনের বিভাজন ঘটে না।
পাঠ ২ :
মাইটোসিস কোষ বিভাজন পদ্ধতি
মাইটোসিস বিভাজনটি দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। প্রথম পর্যায়ে নিউক্লিয়াসের এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে সাইটোপ- াজমের বিভাজন হয়। নিউক্লিয়াসের বিভাজনকে ক্যারিওকাইনেসিস এবং সাইটোপ- াজমের বিভাজনকে সাইটোকাইনেসিস বলে।
মাইটোসিস কোষ বিভাজন একটি ধারাবাহিক পদ্ধতি তাই প্রথমে ক্যারিওকাইনেসিস অর্থ্যাৎ নিউক্লিয়াসের বিভাজন হয়, পরিবর্তীতে সাইটোকাইনেসিস হয়। তবে ক্যারিওকাইনেসিস ও সাইটোকাইনেসিস শুরু হওয়ার আগে কোষটির নিউক্লিয়াসকে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে হয়। কোষটির এ অবস্থাকে ইন্টারফেজ বলে। কেন্দ্রিকার বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস
বিভাজিত কোষে নিউক্লিয়াসটির একটি জটিল পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্যারিওকাইনেসিস সম্পন্ন হয়। পরিবর্তনগুলো ধারাবাহিকভাবে ঘটে। বুঝার সুবিধার্থে এই পর্যায়টিকে পাঁচটি ধাপে বিভক্ত করা হয়েছে। ধাপগুলো- ১. প্রোফেজ , ২. প্রো-মেটাফেজ, ৩. মেটাফেজ, ৪. অ্যানাফেজ ও ৫. টেলোফেজ।
প্রোফেজ :
এটি মাইটোসিস কোষ বিভাজনের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ধাপ, এ ধাপে কোষে নিম্নলিখিত ঘটনাবলি ঘটে-
১. কোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয়।
২. পানি বিয়োজনের ফলে নিউক্লিয়ার জালিকা ভেঙ্গে গিয়ে কতকগুলো নির্দিষ্ট সংখ্যক আঁকাবাঁকা সুতার মতো অংশের সৃষ্টি হয়। এগুলোকে ক্রোমোজোম বলে। এরপর প্রতিটি ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হয়ে দুটি ক্রোমাটিড গঠন করে। এগুলো সেন্ট্রোমিয়ার নামক একটি বিন্দুতে যুক্ত থাকে।
পাঠ ৩ : প্রো-মেটাফেজ, মেটাফেজ ও অ্যানাফেজ
প্রো-মেটাফেজ : এ ধাপটি স্বল্পস্থায়ী। এ ধাপে-
১. নিউক্লিয়ার পর্দা ও নিউক্লিওলাস সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
২. কোষের উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত কতকগুলো তন্তুর আবির্ভাব ঘটে। এগুলো মাকুর আকৃতি ধারণ করে তাই একে স্পিন্ডল যন্ত্র বলে। ¯িপন্ডল যন্ত্রের মধ্যভাগকে বিষুবীয় অঞ্চল বলে।
প্রাণিকোষে সেন্ট্রিওল দুটির চারিদিক থেকে বিচ্ছুরিত রশ্মির মতো প্রোফেজ (প্রথমাবস্থা) প্রোফেজ (শেষাবস্থা) নিউক্লিওলাস ক্রোমোজোম অ্যাস্ট্রার রশ্মি সেন্ট্রোমিয়ার প্রাণিকোষ ক্রোমাটিড জীবের বৃদ্ধি ও বংশগতি ১৫ মেরুঅঞ্চল বিষুম অঞ্চল ক্রোমাটিডদ্বয় ¯িপন্ডল তন্তু সেন্ট্রোমিয়ার প্রাণিকোষ উ্িদ্ভদকোষ আপত্য ক্রোমোজম লুপ্তপ্রায় ¯িপন্ডল তন্তু মেরু অ্যাস্ট্রার রশ্মির আবির্ভাব ঘটে এবং কোষের দুই বিপরীত মেরুতে পৌঁছাতে ¯িপন্ডল তšতু
করে। তন্তুগুলো পর¯পর যুক্ত হয়ে ¯িপন্ডল যন্ত্র গঠন করে।
মেটাফেজ : এ ধাপে-
১. ক্রোমোজোমগুলো স্পিন্ডল যন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চলে আসে এবং তন্তুর সাথে সেন্ট্রামিয়ার দিয়ে আটকে থাকে।
২. এ ধাপে ক্রোমোজোমগুলো সবচেয়ে খাটো ও মোটা দেখায়।
অ্যানাফেজ : এ ধাপে-
১. প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, ফলে প্রত্যেক ক্রোমাটিড একটি করে সেন্ট্রোমিয়ার পায়।
২. ক্রোমাটিডগুলো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ অবস্থায় প্রতিটি ক্রোমাটিডকে অপত্য ক্রোমোজোম বলে।
৩. এরপর ক্রোমোজোমগুলোর সাথে যুক্ত তন্তুগুলোর সংকোচনের ফলে অপত্য ক্রোমোজোমের অর্ধেক উত্তর মেরুর দিকে এবং অর্ধেক দক্ষিণ মেরুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ সময় ক্রোমোজোমগুলো ইংরেজি বর্ণমালার ঠ, খ, ঔ অথবা ও আকৃতি বিশিষ্ট হয়।
পাঠ ৪ টেলোফেজ : এ ধাপে-
১. অপত্য ক্রোমোজোমগুলো বিপরীত মেরুতে এসে পৌছায়।
২. এরপর ক্রোমোজোমগুলোকে ঘিরে নিউক্লিয়ার পর্দা এবং নিউক্লিওলাসের পুনঃ আবির্ভাব ঘটে। প্রাণিকোষে উভয় মেরুতে একটি করে সেন্ট্রিওল সৃষ্টি হয়।
৩. এ অবস্থায় ক্রোমোজোমগুলো সরু ও লম্বা আকার ধারণ করে পরস্পরের সাথে জট পাকিয়ে নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম গঠন করে। এভাবে কোষের দুই মেরুতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয় এবং ক্যারিওকাইনেসিসের সমাপ্তি ঘটে।
¯িপন্ডল তন্তু বিষুবীয় অঞ্চল ক্রোমোজম মেরু উ্িদ্ভদকোষ অপত্য ক্রোমোজম প্রাণিকোষ ১৬ বিজ্ঞান নিউক্লিয়ার মেমব্রেন নিউক্লিওলাস ক্রোমোজম কোষপ্লেট লুপ্তপ্রায় ¯িপন্ডল তন্তু আপত্য নিউক্লিয়াস উদ্ভিদকোষ প্রাণিকোষ উদ্ভিদকোষ গলগিবস্তু কোষপ্লেট প্লাজমাপর্দা কোষপ্রাচীর অপত্য কোষ খাঁজ প্রাণিকোষ কাজ : ক্যারিওকাইনেসিস ও সাইটোকাইনেসিস এর পার্থক্যগুলো লেখ। সাইটোকাইনেসিস নিউক্লিয়াসের বিভাজন শেষ হওয়ার সাথে সাথে
শুরু হয়। প্রকৃতপক্ষে টেলোফেজ দশাতেই সাইটোকাইনেসিস শুরু হয়। টেলোফেজ ধাপের শেষে বিষুবীয় তলে এন্ডোপ্লাজমিক জালিকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলি জমা হয় এবং পরে এরা মিলিত হয়ে কোষপ্লেট গঠন করে। কোষপে- ট পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়ে কোষ প্রাচীর গঠন করে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে।
প্রাণিকোষের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের বিভাজনের সাথে সাথে কোষের মাঝামাঝি অংশে কোষপর্দার উভয় পাশ থেকে দুটি খাঁজ সৃষ্টি হয়। কোষপর্দার এ খাঁজ ক্রমশ ভিতরের দিকে গিয়ে নিরক্ষীয় তল বরাবরে বিস্তৃত হয়ে মিলিত হয়ে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে। তাহলে আমরা জানতে পারলাম উদ্ভিদ কোষের কোষপে- ট গঠিত হয় এবং প্রাণিকোষে ক্লীভেজ বা ফারোয়িং পদ্ধতিতে সাইটোকাইনেসিস ঘটে।
পাঠ ৫ ও ৬ : মিয়োসিস
এ অধ্যায়ের শুরুতে জেনেছি মিয়োসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে মিয়োসিস কেন হয়?
মাইটোসিস কোষ বিভাজনে অপত্য কোষগুলোর ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের সমান থাকে। বৃদ্ধি ও অযৌন জননের জন্য মাইটোসিস কোষ বিভাজন অপরিহার্য। যৌন জননে পুং ও স্ত্রী জনন কোষের মিলনের প্রয়োজন পড়ে। যদি জননকোষগুলোর ক্রোমোজোম সংখ্যা দেহকোষের সমান থেকে যায় তাহলে জাইগোট কোষে জীবটির দেহকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মিয়োসিস কোষ বিভাজনে জননকোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়। ফলে দুটি জননকোষ একত্র হয়ে যে জাইগোট গঠন করে তার ক্রোমোজোম সংখ্যা প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যার অনুরূপ থাকে। এতে নির্দিষ্ট প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যার ধ্রুবতা বজায় থাকে।
জনন মাতৃকোষ মিয়োসিস মিম্বাণু শুক্রাণু জাইগোট নিষেক
মিয়োসিস
জননকোষ সৃষ্টির সময় এবং নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদের জীবন চক্রের কোনো এক সময় যখন এরকম ঘটে তখন কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার সে অবস্থাকে হ্যাপ- য়েড (হ) বলে। যখন দুটি হ্যাপ- য়েড কোষের মিলন ঘটে তখন সে অবস্থাকে ডিপ- য়েড (২হ) বলে ।
সুতরাং মিয়োসিস কোষ বিভাজন হয় বলেই প্রতিটি প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় টিকে থাকতে পারে।
মিয়োসিসের বৈশিষ্ট্য
১. জীবের জনন ও নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদের জাইগোটে মিয়োসিস ঘটে।
২. এ ধরনের কোষ বিভাজনে একটি কোষ থেকে চারটি কোষের সৃষ্টি হয়।
৩. ক্রোমোজোম একবার বিভক্ত হয় এবং নিউক্লিয়াস দুবার বিভক্ত হয়।
৪. সৃষ্ট চারটি কোষের নিউক্লিয়াসে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃ নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়।
মিয়োসিস কোথায় ঘটে?
মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রধানত জীবের জনন কোষ বা গ্যামেট সৃষ্টির সময় জনন মাতৃকোষে ঘটে। সপুস্পক উদ্ভিদের পরাগধানী ও ডিম্বকের মধ্যে এবং উন্নত প্রাণিদেহে শুক্রাশয়ে ও ডিম্বাশয় এর মধ্যে মিয়োসিস ঘটে। মিয়োসিস পদ্ধতি
মিয়োসিস বিভাজনের সময় কোষ পরপর দুবার বিভাজিত হয়। প্রথম বিভাজনকে প্রথম মিয়োটিক বিভাজন বা মিয়োসিস-১ এবং দ্বিতীয় বিভাজনকে দ্বিতীয় মিয়োটিক বিভাজন বা মিয়োসিস-২ বলা হয়। প্রথম বিভাজনের সময় অপত্য কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেকে পরিণত হয় এবং দ্বিতীয় বিভাজনটি মাইটোসিসের অনুরূপ।
চিত্র ২.৯ : মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রথম বিভাজন (হ্রাস বিভাজন) মাতৃজনন কোষ (২হ) চিত্র ২.১০ : মিয়োসিস বিভাজন সম্বন্ধে ধারণা দ্বিতীয় বিভাজন (সম বিভাজন) (হ) (হ) (হ) (হ) (হ) (হ) ডিপ্লয়েড হ্যাপ্লয়েড ১৮ বিজ্ঞান গ্রেগর জোহান মেডেন্ডর ১৮২২-১৮৮৪
পাঠ ৭-৯ : বংশগতি নির্ধারণে ক্রোমোজোম ডি.এন.এ এবং আর.এন.এ এর ভূমিকা
মা ও বাবার কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য সন্তান-সন্ততি পেয়েই থাকে। মাতা-পিতার বৈশিষ্ট্য যে প্রক্রিয়ায় সন্তান-সন্ততিতে সঞ্চারিত হয়, তাকে বংশগতি বলে। আর সন্তানরা পিতা-মাতার যেসব বৈশিষ্ট্য পায়, সেগুলোকে বলে বংশগত বৈশিষ্ট্য। বংশগতি সম্বন্ধে এক সময় মানুষের ধারণাটা ছিল কাল্পনিক। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন কীভাবে পিতামাতার বৈশিষ্ট্য তার সন্তানসন্ততিতে সঞ্চারিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম যিনি বংশগতির ধারা সমন্ধে সঠিক ধারণা দেন তার নাম গ্রেগর জোহান মেন্ডেল। বর্তমানে বংশগতি সম্বন্ধে আধুনিক যে তত্ত্ব প্রচলিত আছে তা মেন্ডেলের আবিষ্কার তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ জন্য মেন্ডেলকে জিনতত্ত্বের জনক বলা হয়।
নিউক্লিয়াসে অবস্থিত নির্দিষ্ট সংখ্যক সুতার মতো যে অংশগুলো জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন করে তাদের ক্রোমোজোম বলে। ক্রোমোজোমের গঠন ও আকার সম্বন্ধে যে ধারণা আমরা পাই তা প্রধানত মাইটোসিস কোষ বিভাজনের প্রোফেজ ধাপে দৃষ্ট ক্রোমোজোম থেকে পাই। প্রতিটি ক্রোমোজোমের প্রধান দুটি অংশ থাকেÑ ক্রোমাটিড ও সেন্ট্রোমেয়ার। মাইটোসিস কোষ বিভাজনের প্রোফেজ ধাপে প্রত্যেকটা ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হওয়ার পর যে দুটি সমান আকৃতির সুতার মতো অংশ গঠন করে তাদের প্রত্যেকটিকে ক্রোমাটিড বলে। ক্রোমাটিড দুটি নির্দিষ্ট স্থানে পরস্পর যুক্ত থাকে তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে। কোষ বিভাজনের সময় স্পিন্ডল তন্তু সেন্ট্রোমিয়ারের সাথে যুক্ত হয়।
নিউক্লিক এসিড দুই ধরনের যথা- ডি.এন.এ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) এবং আর.এন.এ (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড)। ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান ডি.এন.এ। বংশগতি ধারা পরিবহনে ক্রোমোজোমের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী ডি.এন.এ এর অংশ ও আর.এন.এ এর গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণত ক্রোমোজোমের ডি.এন.এ অণুগুলোই জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত ধারক এবং জীব দেহের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরুষাণুক্রমে বহন করে। তাই বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী ডি.এন.এ এর অংশ কে জিন নামে অভিহিত করা হয়।
সুতরাং জিন হলো ক্রোমোজোমে অবস্থিত ডি.এন.এ। ডি.এন.এ অণু জিনের রাসায়নিক রূপ।
যেসব জীবে ডি.এন.এ থাকে না কেবল আর.এন.এ থাকে সে ক্ষেত্রে আর.এন.এ জিন হিসেবে কাজ করে।
যেমন- তামাক গাছের মোজাইক ভাইরাস (ঞগঠ)।
জীবের এক একটি বৈশিষ্ট্যের জন্য একাধিক জিন কাজ করে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটিমাত্র জিন বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের চোখের রং, চুলের প্রকৃতি, চামড়ার রং ইত্যাদি সবই জিন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। মানুষের মতো অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলোও তাদের ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ক্রোমোজোম জিনকে এক বংশ থেকে পরবর্তী বংশে বহন করার জন্য বাহক হিসাবে কাজ করে বংশগতির ধারা অক্ষুণœ রাখে।
মায়োটিক কোষ বিভাজনের দ্বারা বংশগতির এ ধারা অব্যাহত থাকে।
ক্রোমোজোম বংশগতির ধারা অক্ষুণœ রাখার জন্য কোষ বিভাজনের সময় জিনকে সরাসরি মাতা-পিতা থেকে বহন করে পরবর্তী বংশধরে নিয়ে যায়। এ কারণে ক্রোমোজোমকে বংশগতির ভৌতভিত্তি বলা হয়।
সুতরাং এ আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম মিয়োটিক কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বংশগতির ধারা অব্যাহত থাকে এবং ক্রোমোজমের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বংশানুক্রমে প্রতিটি প্রজাতির স্বকীয়তা রক্ষিত হয়।
মানব দেহে ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪৬টি।
জনন কোষে এবং ভ্রুণের কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা কত হবে?
এ অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম- - জীবের বৃদ্ধি কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ঘটে।
- কোষ বিভাজন তিন প্রকার এবং এগুলো কোথায় ঘটে
- জীবে ক্রোমোজোম সংখ্যা কীভাবে ধ্রুবক থাকে?
- হ্যাপ- য়েড ও ডিপ- য়েড বলতে কী বুঝায়?
- বংশগতির ধারক জিন এবং বংশানুক্রমে এগুলোর বাহক ক্রোমোজোম।
- গ্রেগর জোহান মেন্ডেল বংশগতির জনক।